Trending
সত্য সেলুকাস। কী বিচিত্র এই দেশ। কোথাও বোমাবাজি। কোথাও আবার চড়ুইভাতি। প্রথমদফার নির্বাচন শেষে বাংলা সাক্ষী থাকলো এক বিচিত্র মুহূর্তের।
রায়পুর চা-বাগান। জলপাইগুড়ি। যে চা বাগানের দরজা দিয়ে একসময় চা-পাতা বোঝাই গাড়ি যাতায়াত করত। সেই দরজা ২০০৫ নাগাদ বন্ধ হয়ে যায়। বহুবছর পর খুলল লোকসভা ভোটের দিন। সৌজন্যে তৃণমূল নেতৃত্ব। না! পুনরায় কারখানা চালু করার জন্য নয়। জরাজীর্ণ সেই দরজা নিয়ে মাংস-ভাত বোঝাই হাঁড়ি যাতায়াতের জন্য।
ভোট উৎসব বলে কথা! একটু সেলিব্রেশন না হলে হয়! তাই একেবারে পাত পেরে ভাত, ডাল, নিরামিষ তরকারী এবং মুরগীর মাংস- চলল দেদার খাওয়াদাওয়া। প্রায় ৬ হাজার মানুষের পিকনিক। খরচ? ৫০ হাজার টাকার কাছাকাছি। তা ভোটের মুখে হঠাৎ সেলিব্রেশন কেন? কারণ চা-বাগানে একেবারে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। তাই সকলের সহযোগীতায় এই সামান্য আয়োজন, দাবি শাসক দলের। কিন্তু প্রশ্নটা, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বা পিকনিকের আনন্দ নিয়ে নয়। প্রশ্নটা চা বাগানগুলোর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে শাসকদলের আক্কেল নিয়ে।
২০০৫ সাল থেকে বন্ধ এই চা-বাগান। স্থায়ী অস্থায়ী মিলিয়ে এখানে শ্রমিকের সংখ্যা হাজারের বেশি। সঙ্গে তাদের পরিবার। মানে আরও কয়েক হাজার। বাগান বন্ধ হওয়ার পর কেউ অর্ধাহারে কাটিয়েছেন, কেউ অপুস্টিতে থেকেছেন, কেউ ইহলোক ছেড়েছেন। আজ সেই পরিবারগুলো, দুমুঠো খাবার দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়বে সেটাই তো স্বাভাবিক। পরিবর্তে তাদের স্থায়ী অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা কী করা যেত না?
জলপাইগুড়ির এই চা বাগান একটা উদাহরণ মাত্র। খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, একটা নয় আরও হয়ত একশটা চা বাগানের এই হাল। দূর থেকে যা চকচক করে তাহাই সোনা নয়। টিভির পর্দায় সবুজ সতেজ চা বাগান আপনাকে মুগ্ধ করতে পারে, কিন্তু সেখানকার চা শ্রমিকদের ঠিক তার বিপরীত। অনেকটা সোনার ফসল ফলায় যে তার, দুই বেলা জোটে না আহারের মতো পরিস্থিতি। তাই না আছে নতুন প্রজন্মের ইচ্ছে না আছে তাদের কোন আগ্রহ। কিন্তু জানিয়ে রাখা ভালো, উত্তরবঙ্গের এই চা শিল্প শুধু বাংলার নয়, গোটা ভারতের জন্য অ্যাসেট। বিদেশের বাজারে তার যা চাহিদা, তার তুলনায় সেই শিল্পকে হৃষ্ট-পুষ্ট করে তোলার প্ল্যানিং-এ অভাব রয়েছে।
দেখুন, অনাহারে থাকা মানুষের কাছে ফ্রি-ফুড, পিকনিকের মহল তৈরি করা- এসব ভোট রাজনীতির অংশ। কিন্তু তাদের পার্মানেন্ট রুজি-রুটির ব্যবস্থা করাটাই কি সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার হওয়া উচিৎ নয়? কথায় কথায় ভাতা ঘোষণা না করে, দুর্নীতিহীন চাকরির পরীক্ষার ঘোষণা করাটাই কী রাজনৈতিক অঙ্গীকার হওয়া উচিৎ নয়? একটা স্থায়ী সলিউশন পেলে হয়তো মিড-ডে মিলের লোভ দেখিয়ে সরকারী স্কুলে স্টুডেন্ট আনতে হবে না। ভাতা দিতে কাড়ি কাড়ি টাকা খসবে না। বাংলার যুবকদের বাইরের রাজ্যে যেতে হবে না। নিছক ভোট রাজনীতির চক্করে পিকনিকের দোহাই দিয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করাটা কতটা সঠিক? সেই প্রশ্ন রইলো আপনাদের কাছে। মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে দেখতে থাকুন বিজনেস পারিম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।