Trending
দিদি আছেন পাশে। তাই বাংলা তাঁকেই ভালোবাসে। বিপদে-আপদে, রাজ্যে দুর্যোগের ঘনঘটা তৈরি হলে ছুটে আসেন দিদি মানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের বাধ্য সৈনিক দেবাংশু তাই বড়সড় একটা পোস্ট করেছিলেন। উত্তরবঙ্গের আচমকা টর্নেডো যখন বাড়ির ছাদ কেড়ে নেয়। সেই সময় দেবাংশু লিখেছিলেন, যখন কেউ আসেনা, যখন এই মধ্যরাতে সকলে ঘুমে তখন অকূল বিপদে পড়া সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন এই মেয়েটা। সত্যিই ঐ দিন মানে ঐ রাতে কেউ আসেননি। অবশ্য তাই নিয়ে বিরোধী দলনেতার কটাক্ষ আমরা শুনেছি।
যাই হোক, দিনের শেষে বাংলা নিজের মেয়েকে চায়। আর বঙ্গকন্যা যখন এই বিপদে পড়া মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা ঘোষণা করেন, তখন আবার নির্বাচন কমিশনের আপত্তি! কেন, কিসের জন্য? ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িগুলোর জন্য ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, সেটা সরকারি খাতা অনুযায়ী। কিন্তু দেখা গেল, এখানেই না থেমে বঙ্গকন্যা মমতা টাকার অঙ্কটা আরও ৬ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। মানে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। ব্যস, তারপরেই শুরু যত রাজনৈতিক টানাপোড়েন। এই টাকা দেবার বিষয়টা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু গণ্ডগোলের সূত্রপাত যে এখান থেকেই। কারণ টাকার অঙ্ক বাড়িয়ে মমতা আসলে ভোটের রাজনীতি করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি গ্রিন সিগন্যাল দেবার ব্যপারে এখনো উদাসীন রয়েছে নির্বাচন কমিশন? প্রশাসনের অন্দরে এখনো এই বড় অঙ্ক নিয়ে তৈরি হয়েছে আরও ধন্ধ? এখানেই আসছে আরেকটা অঙ্ক।
২০২০ সালের আগে কাঁচাবাড়ির ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৭ হাজার ৬০০ টাকা রাজ্য সরকার দিত। সেই বছরেই ধেয়ে আসে আম্ফান। অবশ্যই আম্ফান হচ্ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের একটা স্পেশ্যাল কেস। ২৫ জুন রাজ্য সরকারের তরফ থেকে অঙ্কটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। নিউ হাউজ বিল্ডিং গ্রান্টের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে জানা যায়। সেটা কাঁচা বা পাকা বাড়ি হলেও হবে, তবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হবে। তখনই ঠিক করা হয়েছিল, যদি কোন বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হবে ৫ হাজার টাকা। তারপর সেই বছর সেপ্টেম্বর মাসে জেলাশাসক, ডিভিশনার কমিশনারদের রাজ্য লিখিতভাবে জানিয়ে দেয় পুরো বিষয়টা। রাজ্য সরকার সেই সময় সাফ জানিয়ে দেয়, কাঁচাবাড়ির জন্য ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আর সেটা করা হবে স্টেট এগজিকিউটিভ কমিটির অনুমোদনের মাধ্যমে। মুশকিল হচ্ছে, বিরোধীরা মনে করছেন যেই দুয়ারে লোকসভা এসে হাজির অমনি ক্ষতিপূরণের টাকার অঙ্কের বৃদ্ধি মমতা একধাক্কায় ৬ গুণ বাড়িয়ে দিলেন। আর বাড়িয়ে সেটা করলেন একেবারে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা! এদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলে এসেছেন, নির্বাচন কমিশন নাকি কোনভাবেই এই ক্ষতিপূরণের টাকা কোনভাবেই স্যাংশন করছে না। তবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলছেন, ৯ এপ্রিল ক্ষতিপূরণের অনুমতি কমিশন দিয়ে দিয়েছে। উপভোক্তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ২০ হাজার টাকাতে। কিন্তু কোন পলিটিক্যাল পারসোনালিটি জড়িয়ে থাকতে পারবে না। তবে সেই শর্ত উড়িয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মমতার সরকার।
সরকারি বিধি মেনে ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কোনভাবেই মমতা বা অভিষেকের ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা অনুমোদন নির্বাচন কমিশন দেয় নি। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন যদি মমতার সরকারের বিরুদ্ধে কেস করেও তারপরেও মমতার সরকার এই ক্ষতিপূরণ দেবে। তবে সূত্র বলছে, ২০২০ এবং ২০২১ সালে সরকারি ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত সরকারি আদেশ দেবার পর সেই ক্ষতিপূরণের অঙ্কে বদল আসে নি। কিন্তু বিরোধীরা মনে করছেন এই সব এলাকায় চাহিদা বা বঞ্চনার অভিযোগ বেশি রয়েছে বলেই কি শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছে তৃণমূল? বিজেপির তরফ থেকে বলা হচ্ছে, আবাস নিয়ে দুর্নীতি রয়েছে। যোগ্যরা টাকা পান নি, তাই এটা মলমের কাজ করতে চলেছে। তবে তৃণমূলের বক্তব্য, সেই দুর্নীতি কেউ তো ধরতে পারেন নি। তাহলে? মানুষ তো আর শুধু ত্রিপলকে ছাদ বানিয়ে থাকতে পারবে না। তাদের মাথার ওপর ছাদের প্রয়োজন রয়েছে। যাই হোক, নবান্নের উদ্দ্যেশ্যে উত্তরবঙ্গের পঞ্চায়েত আধিকারিকদের কাছে নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁরা ক্ষয়ক্ষতি দেখছেন।
কিন্তু দিনের শেষে প্রশ্ন যে একটাই। ইস্যু হল মাথা গোঁজার ঠাঁই। সেটা নিয়ে রাজনীতি হবে কেন? ঐ যে বারবার বলা হয়, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান সঙ্গে প্রয়োজন শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান। এটাই তো সরকারের প্রাইম লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। গরিবগুরবোদের জন্য সেই ক্ষতিপূরণ যদি সরকার দেয় তাহলে কি সেখানে রাজনীতির অঙ্ক থাকা উচিৎ? মনে হয় না। তবু সেটা রয়েছে পুরোমাত্রায়। আর যে কারণেই এখন ঠাঁইহারাদের ঠাঁই কতদিনে মিলবে সেই প্রশ্নটা থেকে গেলেও ঠাঁই দেওয়ার ক্ষতিপূরণ নিয়ে এখন ভোট ময়দানের ভালো খেলোয়াড় হতে চাইছে শাসক-বিরোধী। এটা কি ঠিক- জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন। আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ