Trending
আচ্ছা, পিকে মানে প্রশান্ত কিশোর কি এই কথাটা বলতে পারেন, যাহা বলিব সত্য বলিব সত্য বলি মিথ্যে বলিব না? আপনারা বলতেই পারেন, পিকে প্রেডিকশন করেন মাত্র। প্রেডিকশন করলে আর ঠিক ভুলের প্রশ্ন কোথায়? কিন্তু তিনি যে পিকে। তাঁর সাকসেস রেট দুর্দান্ত। সেটা বিহার হোক বা বাংলা। আর এবার আবারও একটা চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন তিনি। বাংলায় শীর্ষে থাকতে পারে বিজেপি। আর যদি সত্যি সেটাই হয় তাহলে রাজ্য রাজনীতির এ এক অভিনব অধ্যায় হতে চলেছে। এই ধারণা অমূলক নয় বলছেন অনেকেই আবার ঘোর ঘাসফুলপন্থীরা বলছেন, এই ধারণা আসলে তাসের তৈরি করা ঘরের মতন। তবে বাংলায় পদ্মফুল ফুটবে কেন? আদৌ কি তার কোন বেস রয়েছে? যে রাজ্যকে বুদ্ধিজীবীদের আঁতুড়ঘর বলা হয় সেই রাজ্যে বিজেপি কি মোদী ম্যাজিক দেখাতে পারবে? নাকি তৃণমূল জমানায় একের পর এক আর্থিক দুর্নীতিই বিজেপির রাস্তা আরও চওড়া করে দিচ্ছে? এই বিষয়েই কথা বলব আজকের প্রতিবেদনে। বাংলায় এবার পদ্ম ছাপে চাপে পড়বে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। এটা মনে করছেন স্বয়ং ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। আর এটা মনে করার পিছনে তিনি একটা যুক্তি খাড়া করছেন। তাঁর বক্তব্য, বিজেপি বাংলায় শীর্ষে থাকার এক এবং একমাত্র কারণ বিরোধীদের সেভাবে এগিয়ে না আসা আর পূর্ব ভারতে বিজেপির কন্টিনিউয়াস ভোট বৃদ্ধির প্রচেষ্টা। মানে তিনি বলছেন, বিরোধীদের যখন শূন্যস্থান পূরণ করার কথা ছিল, তখন বিজেপি নিজের ফাঁকা জায়গাগুলো জোর কদমে ভরাট করার চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে কংগ্রেস সহ সিপিএমের মত দলগুলো কার্যত বসে থেকেছে। দেখুন, প্রশান্ত কিশোরের কথা একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না। কারণ তাঁর সমীক্ষা মিলেছে, আর সেই প্রমাণ আমরাও হাতে পেয়েছি। ২০২১ সালে বিধাসভা নির্বাচনের সময় পিকে আসেন বাংলায়। টিএমসিকে জেতানোর দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর। আর সেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন স্বয়ং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় পিকে বলেছিলেন, ২০২১ সালে বিজেপি তিন অঙ্কের গণ্ডি পেরোলে তিনি এই পেশা থেকে অব্যাহতি নেবেন। বিজেপি সেই সময় তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা করেছিল। কিন্তু দিনের শেষে পিকের কথা ফলে যায়। সেই পিকেই এবার বলছেন, টিএমসির থেকেও বিজেপি এই নির্বাচনে বাংলায় এগিয়ে থাকবে। বাম জমানায় রাজ্যের পলিটিকাল সিচুয়েশন একেবারে স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ছিল সেই কথা স্বয়ং বামপন্থীরাও মেনে নেবেন না। তবে টিএমসি জমানায় দুর্নীতি বা কেলেঙ্কারির কথা প্রকাশ্যে আসছে সবথেকে বেশি। অন্তত রাজ্যের ক্ষেত্রে যদি তাকিয়ে থাকি তাহলে। আজ ইডি, সিবিআই সূর্য উঠলেই রাজ্য নেতা-মন্ত্রীদের ঘরে ঘরে গিয়ে টোকা মারছেন। তারপর ঘন্টার পর ঘন্টা চলছে জিজ্ঞাসাবাদের পর্ব। রেশন দুর্নীতি, চাকরি দুর্নীতি থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সন্দেশখালির ঘটনা যেন রাজ্যের ভাগ্যবিধাতার পদ থেকে তৃণমূলকে সরিয়ে দিয়ে বিজেপিকে বসিয়ে দিতে চাইছে। সিপিএমকে আনতে চাইছে কী? বাংলার মানুষ কি আদৌ সেটা চাইছেন? দুর্নীতি কতটা হয়েছে আর কতটা হয়নি, সেই প্রমাণ এখনো পর্যন্ত হাতে আসেনি। তবে যা রটে তার কিছু তো ঘটে। আজ পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মন্ডলের মত তৃণমূলের হেভিওয়েটরা রয়েছেন গারদের ওপারে আর আরও কিছু হেভিওয়েটরা রয়েছেন ইডি, সিবিআই-এর সার্চ ইঞ্জিনে। বিষয়টা এখান থেকেই ঘুরছে এবং প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্মীর ভান্ডারের মত প্রকল্প বাংলায় টিএমসির ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছিল। সেই সময় বিজেপির পক্ষ থেকে মমতার দেওয়া এই প্রকল্প নিয়ে ঠাট্টা করা হয়েছিল। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে শিবনাথ সিং চৌহান লাডলি বহেন যোজনা এনেই ম্যাসিভ র্যাঙ্কে বিজেপিকে জেতাতে সাহায্য করেন। আমাদের বাংলায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে এই প্রকল্পের টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। আর এখানেই অনেকে বিষয়টাকে ঘোর অবাস্তব বলছেন। টিএমসির গ্রাউন্ড শক্ত, এটা টিএমসি মনে করছে। তার কারণ, তাঁদের বক্তব্য আর যাই হোক বিজেপির সরকার সাধারণ মানুষের পাশে নেই। পাশে যদি থাকত তাহলে গ্রাউন্ড রিয়েলিটি অন্য রকম হত। বিজেপি জমানায় ১ ডলার এখন ৮৩ টাকা। ২০১৪ সালে যেটা ছিল ৬২ টাকার আশেপাশে। গ্যাসের দাম আকাশছোঁয়া। মূল্যবৃদ্ধির চাপে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। পেট্রোল ডিজেলের দামই বা কমছে কোথায়? নির্বাচনের আগে কমে বটে কিন্তু তারপর আবার যে কে সেই। সুতরাং বাংলার গ্রাউন্ড রিয়েলিটি কি আলাদা হবে? এখানে আরেকটা বিষয় বলি। রিসেন্টলি মোদী বাংলার মানুষদের বলছেন কেন্দ্রীয় এজেন্সি যে ৩ হাজার কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে, সেটা ফিরিয়ে দেওয়া হবে বাংলার মানুষদের। এই বিষয়টাও বেশ অবাস্তব মনে হচ্ছে। কে এগিয়ে এসে বলবে, হ্যাঁ আমি ঘুষ দিয়ে টাকা নিয়েছিলাম? তাহলে টাকাটা ফেরত দেবেন কাকে? খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার মত অবস্থা হবে তো। আর এই টাকা ফেরতের বিষয়টায় মোদীর ওপর শুধু বাংলা কেন, কেউই তেমন কনফিডেন্স নন। তারপরেও কি তাহলে পিকের কথা মিলবে? কিছু অ্যানালিস্ট মনে করছেন আবার, পিকের এই কথা একেবারে আত্মতুষ্টিতে রাখবে বিজেপির নেতামন্ত্রীদের। ফলে যে উদ্যম নিয়ে তাঁরা রাজ্যে জিতবে বলে ভেবেছিলেন, সেই উদ্যমে ভাটা পড়তে পারে। কারণ তাঁরা এবার শিওর হয়ে যাবেন। আর শিওর হয়ে যাওয়া মানে উদ্যমে ভাটা পড়তে ব্যস্ত। আর সুযোগ বুঝে ৬ বলে ৬টা ৬ মারবেন মমতা। মানে বিজেপি শীর্ষে থাকবে এই তথ্যটা ছড়িয়ে দেওয়া আসলে নাকি মমতার মাস্টারপ্ল্যান। আমরা কিছু জানি না। তবে সরকারে যেই আসুন, রাজ্যের অর্থশাস্ত্র কি নতুন কোন দিশা দেখাবে? অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের সঙ্কট মিটবে? শুধু ভাতার রাজনীতি না করে যদি ভাত দেবার ব্যবস্থা করে প্রত্যেকটা মানুষকে স্ব-নির্ভর করে দেওয়া যেত, তাহলে অসুবিধে কোথায়? আপনারা কি মনে করেন? পিকের কথা ফলবে নাকি মমতার ক্যারিশ্মা দেখবে বাংলা? মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন। আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ