Share Market
কিনতে পারে তবে কেন কিনবে?
প্রশ্নটা আপনি করতেই পারেন, তবে প্রত্যুত্তরে পাল্টা প্রশ্নটাও ধেয়ে আসতে পারে। কেন কিনবে? ফ্রাস্ট্রেশন, ডিপ্রেশন, অর্থনীতি ধুঁকছে, চারিপাশে অস্থিরতা, খাবার নেই, নির্বাচনে ফিকে হয়ে আসা ঝোড়ো সংলাপ (নওয়াজ শরিফ) দিয়ে এখন আবার নিজের ভাইকে গদিতে বসানোর মত কারচুপি, বিদ্যুতের বিল যেখানে ইউনিট প্রতি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, আমদানি শেষ, রফতানি করার মত কিছু না থাকার মত যে দেশের অবস্থা, কি দায় পড়েছে সেই বাঁশ নিজের ঘাড়ে (সাটল স্যাটায়ার রিঅ্যাকশন- যে কেউ) নেবার? সুতরাং এই প্রশ্নটা পাল্টা ধেয়ে আসাটা অযৌক্তিক নয়। নুন থেকে ট্রাক, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য- সর্বত্র টাটা। ইলন মাস্ক একটা ইন্টারভিউতে টাটাকে নিয়ে কী বলেছেন,
আজ নয় নয় করে ভারতে কঙ্গলোমারেট কোম্পানির সংখ্যা ৩৫০ ছাড়িয়ে গেছে। রিলায়েন্স, উইপ্রো, কোটাক মাহিন্দ্রা, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার…বুঝতেই পারছেন আর বলা সম্ভব নয়।
তবে যত যাই বলুন, দিনের শেষে টাটা ব্র্যান্ড বিল্ডার। প্রচ্ছন্ন এক শান্তির ঠাঁই। কারণ টাটা নিজের বীজ বপন করেছে সেই সময় যখন দেশে অনেক কিছু থেকেও সেসব কিছু ছিল না। তাই টাটা বটবৃক্ষ। তার ছায়া গায়ে মেখে লাখ লাখ কর্মসংস্থান। টাটা বিজনেস ফিলোজফির একটা পিলার!
দেশের শেয়ার মার্কেটে টাটা গোষ্ঠীর কতগুলো কোম্পানি লিস্টেড আছে? ২৯টা। টাটা স্টিল, টিসিএস, টাটা পাওয়ার, টাইটান, ট্রেন্ট, টাটা মোটর্স… এখন তো রিসেন্ট আপডেট- টাটা মোটর্স টাটা ইভিকে শেয়ার মার্কেটে লিস্টেড করার প্ল্যান প্রোগ্রাম করছে। দিনে দিনে এভাবেই সংখ্যা বাড়াচ্ছে। ন্যানো সেদিক থেকে ফ্লপ প্রোজেক্ট বলতেই পারেন, কিন্তু আজ দেখুন, ইভি সেক্টরে টাটা সিংহাসনটি দখল করে বসে রয়েছে। অ্যাজ অফ চব্বিশে ফেব্রুয়ারি টাটা গোষ্ঠীর মার্কেট ক্যাপ ৩৭০ বিলিয়ন ডলার। আর পাকিস্তানের জিডিপি সেখানে ৩৪১ বিলিয়ন ডলার। শুধু ভারতীয় একটা কোম্পানির মার্কেট ক্যাপ পাকিস্তানের মোট জিডিপির থেকে বেশি! তাই এখন তো সর্বত্র ট্রোলড হচ্ছেন পাকিস্তানের নেতা মন্ত্রীরা। মনে হলেই টাটা কিনে নিতে পারে পাকিস্তান। এখন প্রশ্ন হচ্ছে পাকিস্তান কেনার তো কোন দরকার নেই। কারণ পাকিস্তান যে মতাদর্শ নিয়ে চলেছে এখন সেই ভোগান্তি, এর কোন শেষ নেই। আছে কি?
টাটার এই ব্যাপ্তির পিছনে টিসিএসের কথা বলতেই হয়। কারণ শুধু টিসিএসের মার্কেট ক্যাপ আদ্দেক পাকিস্তানের ইকোনমির সমান। টিসিএসের মার্কেট ক্যাপ বর্তমানে ১৭০ বিলিয়ন ডলার। আর এই প্রেডিকশন খোদ করেছে আইএমএফ- বিজনেস প্রাইম নিউজ নয়। টাটা গোষ্ঠীর এই টোটাল মার্কেট ভ্যালু বাড়াতে সাহায্য করেছে গোষ্ঠীর আরও দুটো হাত। টাটা মোটর্স আর ট্রেন্ট। এক বছরে টাটা মোটর্সের শেয়ার বৃদ্ধি ১১০% মত, সেখানে ট্রেন্টের প্রায় ২০০%। এই দুটো গোষ্ঠীর তুমুল ব্যবসায়িক সাফল্য ফুলে ফলে ভরিয়ে তুলেছে টাটা টেকনোলজিস, টিআরএফ, টাটা ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশনের মত অন্যান্য শাখাদের। এস ইকুইটি ডেটা মতে, টাটা গোষ্ঠীর যে কটা কোম্পানি শেয়ার মার্কেটে লিস্টেড রয়েছে তার মধ্যে চোখে পড়ার মত নেগেটিভ জায়গায় রয়েছে টাটা কেমিক্যালস। কিন্তু বাকি দিকগুলো যে ভরপুর চাঙ্গা। টাইটান, টিসিএস, টাটা মোটর্সের মত ৮টা কোম্পানি গত এক বছরে সম্পত্তি বাড়িয়েছে দ্বিগুণ। পরের বছর আইপিও আনার পরিকল্পনা রয়েছে টাটা ক্যাপিটালের। যার আনলিস্টেড মার্কেট ভ্যালুয়েশন ২.৭ ট্রিলিয়ন রুপিজ। টাটা গ্রুপের ইন্ডিভিজুয়াল প্রোমোটার নেই বললেই চলে, কারণ রতন টাটা নিজে মাত্র ১% নিয়ে থাকেন, আর সুবিশাল কর্মযজ্ঞ যেখানে প্রোফেশনালি ম্যানেজ করা হচ্ছে, এই ফিলানথ্রপিক ট্রাস্ট- সেখানে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান আর কত দূর যেতে পারে?
বর্তমানে পাকিস্তানের শুধু বাইরে ধার রয়েছে ১২৫ বিলিয়ন ডলার। এদিকে পরের মাসে এক্সপায়ার করছে পাকিস্তানকে দেওয়া আইএমএফের ৩ বিলিয়ন ডলারের প্রোগ্রাম। তার মানে ফিনানশিয়াল ক্রাইসিস আরও বাড়বে বৈ কমবে না। ভারতের ফরেন রিজার্ভ ৬১৬ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের ঘোরাফেরা করছে ৮ বিলিয়ন ডলারের আশেপাশে। আমদানি নেই, ব্যবসা বাণিজ্য নেই, রফতানি নেই, পড়াশোনা গোল্লায়, অর্থনীতি এখন অনর্থনীতি। কারচুপি, লুকোচুরি এসব দিন দিন বাড়তে বাড়তে গলা পর্যন্ত এসে আজ ঠেকেছে। আজ ভারতের জিডিপি পাকিস্তানের থেকে ১১ গুণ বড়। তার পিছনে অবদান সকল ভারতবাসীর। টাটা যাদের মধ্যে অন্যতম। ইন্ডিয়ার ইকোনমিকে হেলদি করার পিছনে টাটা ছাড়া অসম্পূর্ণ। সেখানে পাকিস্তানকে কিনতে যাবার কোন প্রয়োজন আছে কি?
শুধুমাত্র ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং একপেশে চিন্তাভাবনার যে বিষবৃক্ষ একসময় রোপণ করা হয়, দেশভাগের পর থেকে সেটাই ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে। এখন সেই বিশ্বাস যেন কারনিভোরাস ট্রি। প্রশাসনিক চরম ব্যর্থতা এবং আদা জল খেয়ে শুধু বাহ্য শক্তির আস্ফালন করতে গিয়ে তাও আবার ধর্মকে হাতিয়ার করে, সেই বিশ্বাস আজ গোটা দেশের অর্থনীতিকে গিলে খেতে বসেছে। আচ্ছা এতকিছুর পরেও তো পাকিস্তানের নেতামন্ত্রিদের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। শিক্ষায় তারা কম্পিটিশন দিক, স্বাস্থ্যে-বাজারে-চাল-ডাল-নুন-তেল-ট্রাক-ট্রেন কোথাও একটা… পারছে না কারণ অশিক্ষা এখনো ছাতার মত জনগণের মাথা ঘিরে রেখেছে। তবে অনেকে বলছেন, পাকিস্তানের এই দুর্দশার পিছনে নাকি চিনের মদত রয়েছে। সেটা অযৌক্তিক কিছু নয়। তাছাড়া পাকিস্তান বিগ ব্রাদার বললেই বা কি? বেজিং ঘন্টাও বাজায় না। চিনের উদ্দ্যেশ্য অন্য। আর এই ফর্মুলা চিন যতবার বাইরে অ্যাপ্লাই করেছে ততবার সাকসেস পেয়েছে। শ্রীলঙ্কা তার মধ্যে অন্যতম। পাকিস্তান এখন সেই ড্রাগনের প্যাঁচে। তবে একবার শোনা গেছিল, বেজিং-এর নাকি ইসলামাবাদ নিয়ে শ্রীলঙ্কার মত অত বাড়াবাড়ি করার ইচ্ছা নেই। বেজিং তো এটাও দেখেছে যে যতবার ঋণ দেওয়া হয় ততবার যেন সেই টাকা কেমন ভেপারের মত উবে যায়। চিন যে মহাসড়ক নির্মাণ করার জন্য নেমে পড়েছিল, সেটাও তো আটকে গেল। সেই টাকাও নাকি ভোজবাজির মত হাওয়া হয়ে গিয়েছে। অতএব বেজিং-এর পাকিস্তান প্রেম কতটা রয়েছে সেটা জোর করে বলা যায় না। কি আর করব বল সখী, বুঝেছি প্রেম ট্রেম সবই বুজরুকি।
যাই হোক, টাটার বিস্তার মানে ভারতের বিস্তার। আর শুধু টাটা বলে নয়। আজ একটি প্রান্তিক মানুষের দেশের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যা অবদান সেটাই সম্মিলিতভাবে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। পাকিস্তানকে কিনে শান্তির ঘুম কেউ যে নষ্ট করতে চায় না… আজকের ভিডিও ভালো লাগলে লাইক করুন শেয়ার করুন আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ