Daily
দুর্গা পুজো শেষ। ইডির সক্রিয়তা শুরু। টার্গেটে আরেক হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা এবং মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এখনো কার্নিভাল হয় নি। ভাসান যায় নি বড় বড় প্যান্ডেলের ঠাকুর। তারই মধ্যে ইডি সাতসকালে কড়া নাড়ল বনমন্ত্রী এবং প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়ি। অভিযোগঃ রেশন বন্টন দুর্নীতি। কয়েকদিন আগেই মন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে হানা দিয়েছিলেন ইডির আধিকারিকরা। সেটা অবশ্য অন্য কারণে। আর আজ সকালে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে ইডির হানা দেবার কারণ খাদ্য বন্টন নিয়ে নয়ছয়। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে ইডির হানা? সেদিকেই নজর দিতে আজকের প্রতিবেদন।
কেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম উঠে আসছে, সেটা বলার আগে কখন থেকে ইডি এমন তৎপর হল সেটা জানিয়ে দিই। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টা নাগাদ সল্টলেকের বিসি ব্লকের দুটো বাড়িতে হানা দিয়েছেন ইডির আধিকারিকরা। ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে, একসঙ্গে আটটা জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছেন তাঁরা। তার মধ্যে রয়েছে খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালীন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আপ্ত সহায়কের বাড়ি। মন্ত্রীর বিসি ব্লকের ২৪৪ এবং ২৪৫- এই দুটো বাড়িতে হানা দিয়েছে ইডি। সঙ্গে আপ্ত সহায়ক অমিত দে-র নাগেরবাজারের বাড়িতেও হানা চালিয়েছে ইডি। ঐ আবাসনেই রয়েছে মন্ত্রীর পিএ-র তিন তিনটি ফ্ল্যাট। প্রত্যেকটি ফ্ল্যাটে ঝুলে রয়েছে তালা। ইডি বলছে, তিনি হয়ত সাগর সৈকতে রয়েছেন সপরিবারে। তাই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না পিএ-র সঙ্গে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইডি তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনে ইডির আধিকারিকরা কথা বলছেন মন্ত্রীর সঙ্গে। কিন্তু জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম উঠে আসার কারণটা কী?
বাকিবুর রহমান। নামটা চেনাশোনা মনে হচ্ছে? যদি না হয় তাহলে একটা জেন্টল রিমাইন্ডার। বাকিবুর রহমান একজন ব্যবসায়ী। যিনি নিজে রেশন দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত এবং গ্রেফতার। ইডির হানার পর ঐ ব্যবসায়ীর ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, যা রয়েছে ৯৫-টি জায়গায়। একইসঙ্গে দুবাইতে রয়েছে ঐ ব্যবসায়ীর জোড়া ফ্ল্যাট। ইডি যখন এই ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছিল, তখনই ইডি সূত্রে খবর মিলেছিল বাকিবুর রহমানের সঙ্গে বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতার যোগসূত্র থাকতে পারে। পুজোর ক’দিন তাই ঝিমিয়ে থাকলেও দ্বাদশী সকাল থেকেই গা ঝাড়া দিয়ে উঠল ইডি। তারপরেই ডিরেক্ট পৌঁছে যায় বনমন্ত্রীর বাড়ি। একেবারে সাতসকালে। আচ্ছা এখানেই আবার বলে রাখি, ইডি কিন্তু বাকিবুরের এক ঘনিষ্ঠ অনুচরের বাড়িতেও হানা চালিয়েছিল। তার নাম অভিষেক বিশ্বাস। ইডির গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেই কোটি কোটি টাকার লেনদেন চালিয়েছিলেন বাকিবুর। বাকিবুরের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, খাদ্যবীজ দুর্নীতি। তবে সেটা তৃণমূল আমলেই যে রমরমিয়ে বেড়েছে সেই বিষয়ে এখনো নিশ্চিত কোন খবর নেই। কারণ জানা যাচ্ছে, বাম জমানাতেও নাকি বাকিবুর খোলা বাজারে কারবার করতেন রেশনের চাল, ডাল নিয়ে। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, বাকিবুরের সঙ্গে প্রভাবশালী যে কয়েকজন নেতার খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল তাদের মধ্যে নাকি বাম জমানার এক মন্ত্রীও থাকতে পারেন। তবে সেই মন্ত্রীর নাম কি, এখনো পর্যন্ত সেগুলো আমরা জানতে পারি নি। তবে বনমন্ত্রী এবং প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টা একেবারে অস্বীকার করেছেন।
দেখুন, রাজ্যে ভয়াবহ দুর্নীতি যে হয়েছে সেটা কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাগুলো মরিয়া হয়ে প্রমাণের চেষ্টা করছে। ইডি যেভাবে তৎপরতা দেখাচ্ছে, একের পর এক রাজ্য সরকারের মন্ত্রীদের বাড়ি হানা দিয়ে, সেখান থেকে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে ইডির অতি সক্রিয়তা ভালোরকম প্যাঁচে ফেলছে রাজ্যের শাসক দলকে। আবার এটাও কিন্তু ঠিক। এই সক্রিয়তা দেখিয়ে লাভের লাভ কত কী হচ্ছে? কতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ একেবারে প্রমাণিত? শুধু সন্দেহের বশে রাজ্যের মন্ত্রীদের বাড়ি গিয়ে হানা চালিয়ে ল্যাজে খেলানোর প্রচেষ্টা বাংলার ভোটব্যাঙ্কে আদৌ কি কোন প্রভাব ফেলতে পারছে? রাজ্য সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, ইডি বা সিবিআই-এর মত কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করছে বিজেপি। কারণ তারা চায় বাংলার খালে, বিলে পদ্ম ফুটুক। এদিকে ইন্ডিয়া জোটে রাহুল গান্ধীর পাশে সিপিএম, তৃণমূল যেভাবে একটা মাখোমাখো মেন্টালিটি বজায় রেখেছে, সেখানে একটা চিড় ধরানো আশু প্রয়োজন রয়েছে। তাহলে প্রশ্নঃ যে যে রাজ্যে বিজেপির সরকার নেই, সেই সেই রাজ্যে শুধু দুর্নীতি হয়? বাকি রাজ্য একেবারে ক্লিনচিট! বাংলার এক পরিচিত প্রবাদঃ যা রটে তার কিছু ঘটে। অবশ্যই ঘটেছে। যে বাংলার অর্থনীতি একটা সময় দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করত, আজ সেই বাংলায় চাকরির অভাব। শিল্পের অভাব। কর্মসংস্থানের পথটাও সংকীর্ণ। সরকারই চাকরি তো নেই-ই। সেটা অবশ্য শুধু বাংলা বলে নয়, গোটা দেশে একই বিষয়। তাই বলে, দুর্নীতি হবে আর তাকে আটকানো হবে না বা সেই বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া যাবে না বা নিলে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে আঙুল উঠবে, সেটাও মনে হয় একপেশে মন্তব্য হয়ে যাবে।
যতই নাড়ো কলকাঠি, নবান্নে সেই হাওয়াই চটি। এই দেয়াল লিখন রোদ, ঝড়, বৃষ্টি খেয়ে ফিকে হয়ে গেলেও আমজনতার মধ্যে ঘাসফুল এখনো সজীব, তরতাজা। তার রেজাল্ট আপনারা পেয়ে যাবেন পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিকে তাকালে। উত্তরবঙ্গে তৃণমূল যেভাবে বিজেপিকে হঠিয়ে দিয়েছে তারপর তো বিজেপি তেড়েফুঁড়ে উঠবেই। একের পর এক মন্ত্রীর বাড়িতে হানা চলবে, হয়ত দুর্নীতি হয়ত বা অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করাও হবে। কিন্তু আদানি, হিন্ডেনবারগ রিপোর্ট…এগুলোতেও যদি ইডি একটু সক্রিয় হয় তাহলে দশের মঙ্গল। এক তরফা সক্রিয়তা দেখালে বাংলায় বিজেপি খুব একটা শক্তপোক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারবে বলে মনে হয় না। আপনার কি মনে হয়? মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন। আর ভুলবেন না সাবস্ক্রাইব করতে বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ