Market
দেশের মধ্যে কোলকাতাতেই প্রথম। গঙ্গার তলা দিয়ে ছুটল দেশের প্রথম আন্ডারওয়াটার মেট্রো। আরও একবার ইতিহাস গড়ল কোলকাতা।
১৯৮৪ সাল ২৪ অক্টোবর। দেশের প্রথম মেট্রো রেলের চলাচল শুরু হয় কোলকাতায়। আজ চল্লিশ বছর পর ফের একবার ইতিহাস গড়ল কোলকাতা মেট্রো। নতুন পালক জুড়ল কোলকাতা শহরের বুকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে যাত্রা শুরু করল দেশের প্রথম আন্ডারওয়াটার মেট্রো রেল। উপরে গঙ্গার অসীম জলরাশি। আর নীচ দিয়ে চলবে মেট্রো রেল। কিন্তু জানেন কি, কোলকাতার বুকে আন্ডারওয়াটার মেট্রোর প্ল্যানিং আজকের নয়। ১০০ বছর আগেকার?
সবকিছু ঠিকথাক থাকলে আজ থেকে ১০০ বছর আগেই গঙ্গার তলা দিয়ে মেট্রো রেল ছুটতে পারত। হাওড়া ব্রিজ নির্মাণের আগেই এই পরিকল্পনা নেন তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকেরা। কোলকাতা থেকে হাওড়া সালকিয়া পর্যন্ত ১০.৪ কিলোমিটার পথে ইস্ট-ওয়েস্ট টিউব রেল নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল তাদের। হার্লে ডালরিম্পল হে নামে লন্ডন মেট্রো রেলের এক ইঞ্জিনিয়ারকে ওই প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯২১ সাল নাগাদ তিনি পরিকল্পনাটি তৈরি করে ফেলেন। সেই সময়ে এই প্রকল্পের জন্য খরচ ধরা হয়েছিল ৩৬ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। চার থেকে সাড়ে চার বছরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা ছিল। পুরো পথে টিকিটের দাম তিন আনা হবে বলে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কেন হল না? কোলকাতার মাটি ভূগর্ভস্থ রেল তৈরির জন্য আদৌ কতটা উপযুক্ত? সেই প্রশ্ন ওঠায় প্রোজেক্টের কাজ থমকে যায়।
ট্রাম থেকে মেট্রো- সবই শুরু তিলোত্তমায়। ঘোড়ায় টানা ট্রাম থেকে যাত্রীবাহী ট্রাম, পাতাল রেল- পরিবহণের ইতিহাসে বহুচর্চিত নাম, কোলকাতা। দেশের মধ্যে প্রথম মেট্রো পরিষেবা এই কলকাতাতে চালু হয়। পাতাল রেল মানে তখন এক অন্যরকম এক্সাইট্মেন্ট। কালের নিয়মে দেশের বিভিন্ন মেগাসিটিতে মেট্রোরেল সম্প্রসারিত হয়েছে। মেট্রো এখন আর পাতাল নয়। মাটির উপর দিয়েও চলাচল করে।
তবে, যত যাই হোক। ইতিহাস গড়ার ট্রেন্ড অব্যাহত রাখে কোলকাতা। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী থাকলো গোটা দেশ। উদ্বোধনের পর গঙ্গাগর্ভে মেট্রো সফরও সারলেন প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গী হিসেবে ছিলেন কোলকাতার বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ারা। পড়ুয়াদের মাঝে বসে দিব্যি খোশমেজাজে মেট্রো সফর সারলেন নমো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কতটা গভীর অংশ দিয়ে মেট্রো চলাচল করবে? সাধারণভাবে বলতে হয় গঙ্গার এই অংশের গভীরতা প্রায় ১০ তলা বাড়ির সমান। তারও অনেকটা গভীরে মাটির নীচের সুড়ঙ্গ কাটা হয়েছে। তার মধ্যে দিয়েই পাতা হয়েছে মেট্রো লাইন।
উপরের জলস্তর থেকে ৩৩ মিটার নীচে দিয়ে ছুটবে মেট্রো। প্রায় ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা খরচে এই জোড়া মেট্রো টানেল তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আর এই জোড়া সুরঙ্গ দিয়ে চলবে এসপ্ল্যানেড টু হাওড়া ময়দানের মেট্রো। নদী পারাপার করা যাবে মাত্র ৪৫ সেকেন্ডে। হাওড়া-কোলকাতা, দুই যমজ শহরকে একেবারে কাছাকাছি এনে দিল এই নতুন রেলপথ। মেট্রো রেল যেভাবে ইতিহাস গড়ে চলেছে, এবং শহরের অফিসপাড়া, কলেজপাড়া সহ গুরুত্বপূর্ণ দেস্টিনেশনের সঙ্গে যোগাযোগ উন্নত করে চলেছে তাতে একটা প্রশ্ন থাকছেই। তবে কী দীর্ঘ যান পরিবহন ব্যবস্থার এবার তাহলে ইতি হতে চলেছে?
সে প্রশ্নের উত্তর সময়ের কাছেই তোলা থাক। যাত্রীস্বাচ্ছন্দ্যের এক এলাহি আয়োজন রয়েছে এই নতুন মেট্রোরুটে। গঙ্গার নীচ দিয়ে যাওয়ার সময় সাধারণ মানুষ উপলব্ধি করতে পারবেন। মেট্রোরেলে চড়ে টানেল পাড়ি দেওয়ার সময় যাত্রীদের বিশেষ অনুভূতি দিতে নীল রঙের এলইডি আলো বসানো হয়েছে। একইসঙ্গে মোবাইল ফোনে নেটওয়ার্ক থাকারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, জলস্তরের ৩৫ মিটার নিচ দিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অপটিক্যাল ফাইবার বসানোর কাজ চলছে। এর ফলে যাত্রীরা ৫-জি স্পীডের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাবে। কাজেই হাওড়া ব্রিজের উপর দিয়ে গঙ্গা পারাপারের সময় নেটওয়ার্ক পাওয়া যাক বা না যাক। হাওড়া মেট্রো স্টেশন দিয়ে গঙ্গা পারাপারের সময় সে ঝক্কি পোহাতে হবে না আপনাকে।
কোলকাতার আইটি হাব অর্থাৎ সল্টলেক সেক্টর ফাইভের সঙ্গে কানেক্ট করবে এই মেট্রো করিডোর। হাওড়া ময়দান, হাওড়া স্টেশন, মহাকরন এবং এসপ্ল্যানেড- গঙ্গার নীচ দিয়ে চলাচলের সময় মোট চারটি স্টেশনে থামবে মেট্রো। কলকাতার মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নদীপৃষ্ঠ থেকে ১৩ মিটার গভীরে পলিমাটির ভেতর দিয়ে গিয়েছে মেট্রোর জোড়া সুড়ঙ্গ। অর্থাৎ, সুড়ঙ্গ দুটি জল নয়, নদীর নিচে পলিমাটির মধ্যে অবস্থিত। যাত্রীরা যখন এই টানেল দিয়ে যাতায়াত করবেন, তখন তাদের মাথার ওপর দিয়ে গঙ্গা প্রবাহিত হবে। সবমিলিয়ে গোটা দেশের কাছে নজির গড়ল কোলকাতার এই নয়া রেলপথ।
দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।