Market
সিএএ বা সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট। বাংলায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। মোদী সরকারের মাস্টারস্ট্রোক নির্বাচনের আগে। গতকাল দুপুর থেকেই গুঞ্জন উঠেছিল দেশজুড়ে, তাহলে কি নির্বাচনের আগেই মোদীর কামব্যাক নিশ্চিত হতে চলেছে? সিএএ এমনই একটা আইন আসলে যা মোদীর থার্ড টার্ম পিএম হবার জন্য মোক্ষম একটা তুরুপের তাস হতে পারে? কারণ নজরে যে শুধুই হিন্দু ভোট ব্যাঙ্ক। অবশ্য শুধু হিন্দু না বলে বরং অমুসলিমদের জন্য এই আইন সেটা বলাই বেটার। বিজেপি নেতৃত্ব বলছে এটাই প্রায় নিশ্চিত করল, ২৪ এ আবার মোদী সরকার। সত্যিই কি সেটাই হতে চলেছে? সিএএ আসলে কি? সহজে বলে দিচ্ছি।
১৯৫৫ সালের যে নাগরিকত্ব আইন সেখানেই সংশোধন। সংশোধন কী করা হল? পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানের মত দেশ থেকে অমুসলিমরা যদি ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হন আর আশ্রয় চান ভারতে, তাহলে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। অমুসলিম মানে কারা? হিন্দু তো বটেই, সঙ্গে রয়েছেন বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান, শিখ এবং পার্সি। নাগরিকত্ব আইনের আওতায় আসতে গেলে শর্তপূরণ কী কী করতে হবে? ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে আসতে হবে। এক বছর ভারতে রয়েছেন আর গত ১৪ বছরের মধ্যে মিনিমাম ৫ বছর ভারতে থেকেছেন। অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে নথির। সেই নথি কী কী? নিজের সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিয়ে হলফনামা দিতে হবে। আবেদনকারীর চরিত্র নিয়ে থার্ড পার্সনের হলফনামা লাগবে। আবেদন গ্রহণ করা হলে তিনি যে আগের নাগরিকত্ব দাবি করবেন না সেই হলফনামা লাগবে। যদি আগের দেশে আবেদনকারীর কোন পাসপোর্ট থাকে তাহলে তার প্রতিলিপি প্রয়োজন। আর প্রয়োজন যদি ভারতে থাকার অনুমতিপত্র থাকে তার প্রতিলিপি।
সিএএ ২০১৯ সালে ১১ ডিসেম্বর সংসদে পাশ করানো হয়। তারপর মাঝে কেটে গেছে ৫টা বছর। তাছাড়া মোদী সদ্য যখন কৃষ্ণনগরে এলেন সভা করতে, তখনো কিন্তু আলাদা করে সিএএ নিয়ে কোন কথা বলেন নি। তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং মতুয়ার মুখ শান্তনু ঠাকুর সহ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বারবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সিএএ কার্যকর হচ্ছে। মতুয়াদের মধ্যে সিএএ কার্যকর করা নিয়ে একটা আলাদা আবেগ ছিলই। ভারতে পার্মানেন্ট নাগরিকত্ব আসুক, এটাই তাঁরা চাইছিলেন বহুদিন ধরে। রাজনীতিবিদরা মনে করছেন, নির্বাচনী ইস্তাহারে বিজেপি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেটা রাখতে পেরেছে তারা। এই আইনের মাধ্যমে ভারত যে সকল হিন্দুদের ঘরবাড়ি হয়ে উঠল সেটাও ঠারেঠোরে প্রমাণিত হয়ে গেল। নির্বাচনের আগে শুধু দেশের হিন্দু ব্যাঙ্ককে নয়, গোটা বিশ্বের হিন্দুদের কাছে নতুন একটা বার্তা পৌঁছে দিতে পারলেন মোদী।
স্বাভাবিকভাবেই দেশ জুড়ে সিএএ চালু হলে, রাজ্যগুলো বিরোধিতা করতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিল পদ্ম শিবিরের মাথারা। তাই নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে একটা পোর্টাল চালু করা হল। সেখানে আবেদনকারীকে জানাতে হবে তাঁরা কত সালে ভারতে এসেছিলেন। সেই তথ্য দিতে পারলেই পোর্টালে আপডেট করা হবে, মিলবে নাগরিকত্ব। মানে রাজ্যের ভূমিকা শুরুতেই শেষ। এখন বিষয়টা হচ্ছে, প্রাথমিকভাবে শোনা যাচ্ছিল, পোর্টালে তথ্য আপডেট করা নাকি একেবারে জলের মত সহজ। কিন্তু গেজেটে যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পেয়েছে সেখানে বলা হয়েছে আবেদনকারীদের একাধিক তথ্য জমা দিতে হবে। বিজেপি নেতৃত্ব বলছে, এই আইন লাগু হবার কারণে ভারত হতে চলেছে বহু বাস্তুহারার আশ্রয়স্থল। কিন্তু বিরোধীরা যে একেবারে চুপ নেই। আমরা আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর কথাই বলি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সোমবার ঘোষণা করতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় বিরোধের সুর চওড়া হচ্ছে। তিনি এই গোটা বিষয়কে ভোটের আগে ললিপপ বলছেন। একইসঙ্গে বলছেন লোক দেখানো। তবে শুধু তৃণমূল বলে নয়। একইসঙ্গে সরব হয়েছে বাম, কংগ্রেসীরাও। মমতা বলছেন, ২০২০-তে পাশ হবার পর চার বছরে বারবার এক্সটেনশন করতে হয়েছে। আর ঠিক নির্বাচনের আগেই ঝুলি থেকে ব্রহ্মাস্ত্র বার করল বিজেপি! মমতা একে পুরোটাই রাজনৈতিক পরিকল্পনা বলছেন। তবে সেই কথায় আপাতভাবে কোন গুরুত্বই দিচ্ছে না বিজেপি নেতৃত্ব। বরং দেশজুড়ে যে বিরোধিতার সুর উঠছিল সেটা চাপা পড়ে গিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সিএএ কার্যকর হবার কারণে। তার মধ্যে অন্যতম কয়েকদিন আগে ভাইরাল হওয়া সীমা হায়দর। যিনি পাকিস্তান থেকে প্রেমের টানে পালিয়ে আসেন ভারতে। জেল খেটেছেন তিনি। কারণ তাঁর ভারতে আসার কি অভিসন্ধি ছিল সেটাই খোলসা হয় নি সেই সময়। যাই হোক সেই সীমা হায়দর নিজেও প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর। বর্তমানে তিনি হিন্দু ধর্মে কনভারট করেছেন নিজেকে। বিয়েও করেছেন।
বিষয়টা হল দেশজুড়ে এমন বহু মানুষ আছেন, যারা চেয়েছিলেন সিএএ কার্যকর হলে সেটা তাঁদের কাছে আশীর্বাদ হবে। আর বিরোধী দলগুলো মনে করেছিল এটা আসলে বিজেপি সরকারের এমন এক ভড়ং যা আদতে পলিটিক্যালি বাউন্সার দেবার তাল। মোদী বলেছেন ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত হবে। মানুষের হাতে টাকা আসবে। মানে কাজের ক্ষেত্র পরিধি বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হবে। সেটাই যদি হয়, তাহলে তো আশ্রয়ে থাকা মানুষের জন্য কর্মসংস্থান নতুন করে তৈরি করতে হবে। আরও জেনারেট করতে হবে বিজনেস। কারণ নাগরিকত্ব পেয়ে গেলে তাঁরা যে ভারতবাসীই হয়ে উঠবেন। কাজের বাজার সামাল দেওয়া যাবে তো? আর হ্যাঁ- বিরোধীরা বলছেন নাগরিকত্ব এখন দেওয়া হল। তার মানে যারা এতদিন এখানে থেকেছেন তাঁরা কি দেশের নাগরিক ছিলেন না? মানে মতুয়ারা কি দেশবাসী এতোদিন ছিলেন না? এখন হলেন? প্রশ্ন রইল আপনাদের কাছে। মতামত শেয়ার করুন কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন আমাদের প্রতিবেদন আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ