Tourism
মেঘের দেশে ধনুকের মতো রেলসেতু। নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে খরস্রোতা চেনাব। সেতুর উপর দিয়ে ছুটছে ট্রেন। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রেলসেতু দিয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় পৌঁছচ্ছেন আপনি। রোমাঞ্চকর! তাই না! একেবারেই তাই। এবার আপনাকে এক্সক্লুসিভলি একটা থ্রিলিং অভিজ্ঞতা দিতে চলেছে ভারতীয় রেল।
চেনাব সেতু, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু সেতু। খরস্রোতা চেনাব নদী আর সেতুর মধ্যে দূরত্ব (৩৫০ মিটার গ্রাফিক্স) এতটাই যে, তার মাঝখানে এঁটে যাবে গোটা আইফেল টাওয়ারটা। এই সেতু কাশ্মীরকে রেলপথে যুক্ত করবে ভারতের বিস্তীর্ণ রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে। হিমাচল প্রদেশ থেকে জম্মু-কাশ্মীর হয়ে চেনাব অর্থাৎ চন্দ্রভাগা নদী বয়ে চলেছে পাকিস্তানের দিকে। আর এর উপরেই তৈরি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রেলসেতু। হিমালয়ের বুকে এমন দুঃসহ কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ ছিল, নির্মাণসামগ্রী পৌঁছনো। টা এই দুঃসাহসিক সেতু নির্মাণের কাজ এখন কতদূর? কবেই বা চালু হচ্ছে এই সেতু? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
প্যারিসের আইকনিক আইফেল টাওয়ার তৈরিতে যে পরিমাণ লোহা লেগেছিল, চেনাব সেতু তৈরিতে নাকি তার তিনগুন লোহা ব্যবহার করা হয়েছে। জানা যাচ্ছে, প্যারিসের আইফেল টাওয়ার নির্মাণে লোহা লেগেছিল ৯ হাজার টন। আর ভারতের চেনাব সেতু নির্মাণে লোহা লেগেছে প্রায় ২৬ হাজার টন। এই রেলব্রিজের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হচ্ছে আর্চ বা ধনুকের মতো অংশ। যা তৈরি করতে ৬ মাসেরও বেশি সময় লেগেছে। কেবল ক্রেনের মাধ্যমে অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছে ভারত। সেতুর দুই এন্ডের পিলার প্রায় ৫০ তলা বাড়ির সমান।
ঝড়-ঝঞ্ঝা-ভূমিকম্প, যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও সটান দাঁড়িয়ে থাকবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রেলসেতু। কোনরকম সংস্কার ছাড়াই ১৩০০ মিটার লম্বা রেলব্রিজটি টিকে থাকবে প্রায় ১২০ বছর পর্যন্ত। ২৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত হাওয়ার বেগ সামাল দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এটির। ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পেতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ ধরণের স্টিল। -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও কোন প্রভাব পড়বে না এই সেতুতে। নিঃসন্দেহে ভারতের এই রেলব্রিজ, গোটা পৃথিবীর কাছে বিস্ময় তো বটেই।
১৯০৫ সাল নাগাদ শ্রীনগরের মহারাজা জম্মুর সঙ্গে শ্রীনগরের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করার জন্য একটি রেললাইন তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই প্রোজেক্টের প্রাইমারি কাজ শেষ করা হলেও পরবরতিতে নানা কারণে রেললাইন তৈরির কাজ থমকে যায়। ১৯৯৫ সাল নাগাদ প্রায় ২.৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করে ঐ রেললাইন তৈরির কাজ আবারও শুরু করা যায়। তখনই চেনাব নদীর উপর ব্রিজ তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। ২০০২ সালে বাজপেয়ী সরকার, নর্দার্ন রেলপ্রকল্পকে জাতীয় প্রকল্পের স্বীকৃতি দেন। যা শুরুর সময় খরচ ধরা হয়েছিল ৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই সেতু তৈরিতে ভারত সরকারের খরচ হয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা।
চেনাব সেতুর ইনফাস্ট্রাকচারাল ডেভলপমেন্টের পিছনে রয়েছে আইআইএসসি ব্যাঙ্গালোরের সাপোর্ট। ব্রিজ তৈরি করেছে শাপুরজি পালোনজি গ্রুপের একটি কোম্পানি অ্যাফকনস ইনফাস্ট্রাকচার। এছাড়াও সঙ্গে ছিল কোঙ্কণ রেলওয়ে এবং ডিআরডিও-র সাপোর্ট। এই প্রকল্পের আওতায় মোট ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল ট্র্যাক তৈরি করা হচ্ছে। যার ৯৭.৩৪ কিলোমিটার অংশ যাবে টানেলের ভিতর দিয়ে। ২০২২ সালের অগাস্টে চেনাব সেতু তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। আর সব ঠিক থাকলে হয়তো ২০২৪-এর শেষেই রেল চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়ে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু এই চেনাব রেলসেতু।
কাশ্মীর উপত্যকা চিরকালই পর্যটকদের ড্রিম ডেস্টিনেশন। তাই এই সেতু দিয়ে পর্যটকদের যাতায়াতের একটা টান তো থাকবেই। তবে তার আগে, পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল প্রয়োজন। তাই এই মুহূর্তেই জনসাধারনের জন্য রেল ব্রিজ চালু না হলেও শীঘ্রই এক ট্রেনে কাশ্মীর পৌঁছনো যাবে। মেঘ ফুঁড়ে, খরস্রোতার উপর দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে রেল ব্রিজে চড়ে আপনিও উপত্যকা যাওয়ার প্ল্যান করছেন তো নাকি? জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।