Trending
ভোটের মুখে গ্রেফতার কেজরিওয়াল। উঠছে ১০০ কোটির আবগারি দুর্নীতির সওয়াল। দুঘণ্টার ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পরই ইডির জালে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। কেন বারবার সমন তোয়াক্কা করছিলেন তিনি? কোন পথে দিল্লির নির্বাচন? বিজেপির রাস্তা পরিষ্কার করতেই কী গ্রেফতারি? ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা।
আঁটসাঁট ভোটযুদ্ধ। লোকসভা ভোটের দামামা বাজতেই ইডির তৎপরতা তুঙ্গে। গ্রেফতার হচ্ছেন একের পর এক বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। প্রথমে ঝাড়খণ্ডের শিবু সোরেন এবং তারপরেই মিশন দিল্লি চলো। ইডির দাবি, একবার, দু’বার নয়। আবগারি দুর্নীতি মামলার আঁচ পেয়ে নয় বার সমন পাঠানো হয়েছিল তাকে। প্রত্যেকবারই ইডির ডাক এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠছিল তাঁর বিরুদ্ধে। অবশেষে দশ বারের বার একেবারে কেজরিওয়ালের বাড়িতে হাজির ১২ জনের কেন্দ্রীয় আধিকারিদের দল। চলে লাগাতার ২ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ। সবশেষে ইডির হেফাজতে কেজরিওয়াল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় কাওকে গেফতার করা কতটা সাংবিধানিক? কোথাও গিয়ে কী ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সরকারের এটা কোন স্ট্র্যাকটেজিক মুভ?
কংগ্রেসের পর বিজেপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিল আপ। রাজধানীতে বসেই নিজের দায়িত্ব চালিয়ে আসছিলেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, মোদী রাজ্য গুজরাটেও ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছিল তাঁর দল। তার মাসুল দিতেই কী গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি? তাহলে কী এবারেও মোদীর টার্গেট দিল্লিতে সাতে সাত? যদি তাইই হয়, তাহলে ভোটের আগে এত বড় পদক্ষেপ, ব্যাকফায়ার করবে না তো কেন্দ্রের বিরুদ্ধে? আপাতত বিরোধীদের প্রশ্নে প্রশ্নে ছয়লাপ, চারিপাশ।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি গর্জন শোনা গিয়েছিল এই কেজরিওয়াল সরকারকেই। আজ হঠাৎ এমন কী হল, যে তার আগাম জামিনের নোটিশ খারিজ করে দেওয়া হল? ঘুষের অভিযোগে জর্জরিত কেজরিওয়াল। দিল্লিতে মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার নীতি বদল করে মি. কেজরিওয়াল এবং কয়েকজন মন্ত্রী ও নেতা মদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন। এমনই অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। আর এই অভিযোগেরই তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। ইডির দাবি, আবগারি নীতি তৈরি করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এবং আপ নেতারা প্রায় ১০০ কোটি টাকা ঘুষ পেয়েছিলেন। একই সঙ্গে এই নীতির ফলে সরকারের ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
মদের কালোবাজারি বন্ধ করা এবং সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ২০২১ সালে দিল্লির লাইসেন্সধারী মদ বিক্রেতাদের একাধিক ছাড় দিতে আবগারি নীতি চালু করেছিল কেজরিওয়ালের সরকার। দিল্লির সরকার দাবি করেছিল, আবগারী নীতি তৈরির ফলে সরকারের আয় ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। তবে মদের এই বিপুল ছাড়ের ফলে রাজধানীতে অর্থনৈতিক অপরাধ বেড়ে গিয়েছে বলে কেন্দ্রের সরকারকে রিপোর্ট করেছিলেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা। তিনি সিবিআইকে তদন্তের পরামর্শও দেন।
পরবর্তীতে ওই আবগারি নীতি নিয়ে মামলা হয়। এবং গ্রেফতার করা হয় কেজরিওয়ালকে। প্রশ্ন হচ্ছে এই মুহূর্তে তবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়ভার কার কাঁধে চাপল? দিল্লি কী তবে রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকে? যদিও, ইডি হেফাজতে থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বভার সামলানোর আশ্বাস দিয়েছেন কেজরিওয়াল।
১০০ কোটির দুর্নীতি নিয়ে যদি কেন্দ্রীয় আধিকারিকরা আজ এতটা তৎপর। ইলেক্টরাল বন্ডের তো কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি, তা নিয়ে কোন উচ্চবাচ্চা করতে শোনা যাচ্ছে না কেন? আর দুর্নীতির কথা যখন উঠলই, তখন পশ্চিমবঙ্গের বুকে তো এত এত দুর্নীতির অভিযোগ। সেসব নিয়ে না কোন সওয়াল না কোন তৎপরতা। তদন্ত হলেও তার কোন সুরাহা প্রকাশ্যে আসে না বা আনা হয়না। এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন? সবটাই কী তবে সেটিং গেম? নাকি অন্য কিছু। কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি ঘিরে উঠছে আরও নানা প্রশ্ন।
আপাতত কেজরিওয়ালের গ্রেফতারিতে উত্তাল রাজধানী। দেশজোড়া প্রতিবাদে আপ। গোটা দেশ এখন কেজরিওয়ালের সুপ্রিম রায় শোনার অপেক্ষায়। ১০০ কোটির আবগারি দুর্নীতি নিয়ে কেজরিওয়ালের সুপ্রিম রায় শোনা যাবে শীঘ্রই। তবে, এই লিস্টে আর কত নাম রয়েছে? সেটা কারও কাছে স্পষ্ট না হলেও লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেফতারিতে দুয়ে দুয়ে চার করতে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে।
আপনাদের মতামত জানান আমাদের কমেন্টবক্সে। সঙ্গে দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।