Trending
বাহ! দুর্দান্ত হিসেব! বিয়েও হল আবার ব্যবসাও। বাংলায় যাকে বলে এক ঢিলে দুই পাখি। এসব ব্যবসায়িক বিবেচনার বিষয়ে আম্বানির কিন্তু জুড়ি মেলা ভার। সত্যিই।
আম্বানি পুত্র অনন্ত আম্বানির প্রি-ওয়েডিং নিয়ে ইন্টারনেটে গসিপ এখনও থামেনি। বিয়ে জুলাইতে হলেও, রাজকীয় আয়োজনে প্রি-ওয়েডিং সেরে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। ছেলের বিয়েতে এক হাজার কোটি টাকা খরচ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এশিয়ার ধনিতম ব্যক্তি, মুকেশ আম্বানি। আর ঠিক এই বিষয়টাই আলোচনার হট টপিক। তা এই খরচ কী তিনি শুধু ছেলের বিয়ে উপলক্ষ্যেই করেছেন? নাকি এর পিছনে তার অন্য কোন উদ্দেশ্য রয়েছে?
ব্যবসায়ী মানুষ, কাজেই ব্যবসায়িক প্ল্যানিং তো থাকবেই। নিমন্ত্রিত অতিথিদের লিস্টটাই দেখুন না। কারা কারা উপস্থিত ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে? আম্বানির ডাকে সাড়া দিয়ে এসেছিলেন বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ, ব্রুকফিল্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্রস ফ্ল্যাড, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের মারে অচিনগ্লসের মতো গ্লোবাল কোম্পানির শীর্ষ কর্তারা। ৬০ কোটি টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আম্বানি পুত্রের প্রি-ওয়েডিং অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন পপ তারকা রিহানা। প্রি-ওয়েডিং-এ বিশ্বের বিলিয়নেরাদের উপস্থিতি- গোটা দেশ তো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখবেই।
তবে, ৬০/ ৭০ কোটি টাকার দিকে তাকিয়ে অবাক হবেন না, কারণ এসব সামান্য অ্যামাউন্টকে সামনে রেখে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার ব্যবসা দাঁড় করাতে চাইছেন মিঃ আম্বানি। মেক-আপ ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখতে চলেছেন আম্বানিরা। ঈশা আম্বানির সেই মেক-আপ ব্র্যান্ডের গ্লোবাল এক্সপানশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো কম্পিটিটর হতে পারেন রিহানার মেক-আপ ব্র্যান্ড। এবার রিহানাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সে দিকটা সুনিশ্চিত করলেন মুকেশ আম্বানি। এছাড়াও ভারতের বাজারে ব্র্যান্ডিং-এর পথ মসৃণ হওয়ায় পপ স্টার রিহানাও আম্বানিদের সঙ্গে ডিল সারতে রাজি হয়েছেন।
অন্যদিকে জানা যাচ্ছে, ব্রুকফিল্ডের সঙ্গে রিলায়েন্সের টেলিকম ইউনিট জিও, যৌথভাবে একটা ডেটা সেন্টার তৈরির কাজ করছে। অন্যদিকে ব্রিটিশ পেট্রলিয়ামও নাকি ভারতের একাধিক জায়গায় একগুচ্ছ পেট্রোল পাম্প খোলার ওঠা ভাবছে। ৬০ কোটি টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে পপ তারকা রিহানা উপস্থিত ছিলেন অনন্ত আম্বানির প্রাক বিবাহ উৎসবে।
এখন কথা হচ্ছে, রিলায়েন্সের বোর্ড মেম্বার তথা আম্বানি কন্যা ইশা আম্বানির বিয়েতেও ছিল এলাহি আয়োজন। আয়োজন করা হয়েছিল সুদূর ইটালিতে। তা ছেলের ক্ষেত্রে ডেস্টিনেশন অয়েডিং থেকে কেন বিরত থাকলেন তিনি? কেন জামনগরকেই বেছে নিলেন মিঃ বিলিয়নেয়ার?
আম্বানির এই ভাবনা-চিন্তার নেপথ্যে রয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। গত নভেম্বরে মেক-ইন-ইন্ডিয়ার মতো আরও এক ভাবনার কথা ভারতবাসীকে জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওয়েড-ইন-ইন্ডিয়া। অর্থাৎ নিজের দেশেই বিয়ের আয়োজন করা হোক। তাই দেশের ধনি ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আর্জি জানান তিনি। দেশের টাকা দেশে রাখতেই প্রধানমন্ত্রীর এই প্ল্যানিং। প্রধানমন্ত্রীর ডাকেই সাড়া দিয়ে আম্বানির এই অয়েড-ইন-ইন্ডিয়া প্ল্যানিং। তা প্রশ্ন হচ্ছে, এখানে আম্বানিদের কী লাভ হল?
প্রথমত এরফলে তারা তাদের প্রাইভেট ল্যান্ড জামনগরকে ট্যুরিস্ট অ্যাট্রাকটিভ স্পট করে তুলবে। ভানতারাকে বিশ্বমানের সাফারি পার্ক করে তোলার ভাবনা-চিন্তাও রয়েছে। আর দেশের অনান্যপ্রান্তের সঙ্গে জামনগরের কানেক্টিভিটি ভালো হওয়ার জন্যে অনান্য অনেকেই অয়েডিং ডেস্টিনেশন হিসেবে জামনগরকে বেছে নিতে পারবেন। মোট কথা, আম্বানির এই স্ট্র্যাটেজি জামনগরের ইকোনমিক ডেভলপমেন্টে ম্যাজিকের মতো কাজ করবে।
দেশের বাজারেই দেশের টাকা খরচ করার এই প্ল্যানিং নিঃসন্দেহে মোদী সরকারের এক দুর্দান্ত পদক্ষেপ। মূল্যবৃদ্ধির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা যাবে। মানে আরবিআই-এর এই প্রচেষ্টা আরও সহজ হবে। ভারতের অভিজাতদের বিয়ের আসরে বিদেশী অতিথিদের উপস্থিতি দেশের পর্যটনেও একটা ভালো প্রভাব ফেলবে, সেটা আশা করাই যায়। আর বিদেশী বিনিয়োগকারীরা যে ভারতের বাজারে নির্দ্বিধায় বিনিয়োগ করতে পারেন, সেই মেসেজটাও পৌঁছে দেওয়া যাবে। আর সেটার জন্য ওয়েড-ইন-ইন্ডিয়া যে একটা আউটস্ট্যান্ডিং স্ট্র্যাটেজি, সেটা বলাই যায়।
দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।