Daily
“আমসত্ত্ব দুধে ফেলি, তাহাতে কদলী দলি
সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে
হাপুস-হুপুস শব্দ, চারিদিক নিস্তব্ধ
পিঁপড়া কাঁদিয়া যায় পাতে…”
বিশ্বকবির আমপ্রীতি নতুন করে কিছু বলার নেই। এই কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন কত বছর আগে। আম-বাঙালির বৈশাখী প্রিয় ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম হল এই আম। আর এই আমের খুব বড় একটি হাট বসে কোথায় জানেন? ফুলিয়ায়। যে জায়গা আপনাদের কাছে শুধু কৃত্তিবাস ওঝা বা তাঁত কাপড়ের জন্য বিখ্যাত নয়। বরং ফুলিয়ার আমের হাট একদিকে যেমন পুরনো তেমনই আবার অন্যদিকে বেশ বিখ্যাত। আর এখন তো আমের সময়। সুতরাং ফুলিয়ার স্টেশন সংলগ্ন কাঁচা-পাকা আমের বাজারের ব্যস্ততা কীরকম, তার খোঁজ খবর নিতে পৌঁছে গেছিল বিজনেস প্রাইম নিউজের ক্যামেরা। ফুলিয়ার ম্যাঙ্গো মার্কেটে। সেখানেই কথা হল বাজারের আড়তদার, মুটে মজুর, ব্যবসায়ী এবং আম বাগানিদের সঙ্গে। গোটা বাজার চত্বর জুড়ে ব্যস্ততা পৌঁছে যায় একেবারে চরমে।
ফুলিয়ার এই বিখ্যাত আমের মার্কেট আজকের নয়। কেউ দশ বছর, কেউ পনেরো বছর, তিরিশ বছর এই মার্কেটে আসা যাওয়া করছেন। যারা প্রত্যেকেই জড়িয়ে রয়েছেন আমের সঙ্গে। তাই আমের সিজন যখন একেবারে তুঙ্গে থাকে, সেই সময় একমাস ধরেও তাঁরা থেকে যান এই আমের বাজারে। বর্তমানে ফুলিয়ার আম বাজারে রয়েছেন প্রায় চোদ্দ থেকে পনেরো জন আড়তদার। যারা কমিশন নিয়ে থাকেন ৭%। পরিবর্তে তাঁরাই কৃষকের থেকে আম নিয়ে সেটা তুলে দেন ব্যবসায়ীদের হাতে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই। একইসঙ্গে ভিন রাজ্য থেকেও ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন আম কেনার জন্য।
চলতি বছরে অন সিজনে গাছ ভর্তি হয়ে গিয়েছে আমে। ঝড়, বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতি হলেও গাছে রয়েছে প্রচুর আম। মূলত বাজার দখল করে থাকে ফুলিয়া, হবিবপুর, শান্তিপুরের গ্রামীণ এলাকার হিমসাগর আম। এছাড়া পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে গোলাপখাস, শরিখাস, ল্যাংড়ার মতন বিভিন্ন প্রজাতির আম। দুশোর বেশি কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের জমজমাট উপস্থিতি আমের বাজার দুর্দান্ত চাঙ্গা করে তোলে। ফুলিয়া হাটের আম শুধু কলকাতা বা শহরতলি নয়। এখানকার বিভিন্ন প্রজাতির, বিভিন্ন আকৃতির কাঁচা-পাকা আম মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, বেলডাঙা, ইসলামপুর, ডায়মন্ড হারবার, মেদিনীপুর সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন ছোট-বড় বাজারে ছড়িয়ে পড়ে ফুলিয়ার আম। তবে কাঁচা আম মূলত চলে যায় বিহার এবং ঝাড়খন্ডে। জেলার পাইকারি হাটগুলো থেকে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা আম কিনে সেই আম ডালি সাজিয়ে নিয়ে যান। বিজনেস প্রাইম নিউজের ক্যামেরায় ধরা পড়ল তেমনই এক আম ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তাঁর নাম মুকুল শেখ। এসেছেন মুর্শিদাবাদ থেকে। আম ব্যবসা নিয়ে তিনি কী বললেন, সেটা শুনে নেব আমরা।
তবে এবারে আমের ফলন দুর্দান্ত হলেও প্রকৃতির বিরূপ একটা প্রভাব রয়েছে। তীব্র দাবদাহের জন্য আমের সাইজ সেভাবে বৃদ্ধি পায়নি। এদিকে প্রবল ঝড়-বৃষ্টির জন্য বহু আম মাটিতেই ঝরে পড়ে যায়। তবে আমের জোগানে ঘাটতি নেই। আর যে কারণে আমের বাজার এবারে একটু পড়তির দিকেই। কৃষক এবং আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ফুলিয়ার আমের বাজার তৈরি হয়েছে কমবেশি ২৫ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু এবারে আমের বাজার তেমন একটা ভালো নয়।
গাছপাকা সুশ্রী আমের বর্তমান পাইকারি দর যাচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। ধাপে ধাপে মান অনুযায়ী তা নামতে থাকে। এখানকার মুটে-মজুররা দুপুর ১.৩০ টা থেকে কাজ শুরু করে রাত্র ৮ টা পর্যন্ত মাল ওঠানো নামনো করেন। তাদের গড় দৈনিক রোজগার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। আমের ঝুড়ির ব্যবসা ও ফুলিয়ায় বেশ জমে উঠেছে। আম পরিবহনের জন্য মোটর ভ্যান, টোটো, ছোট হাতি, বড় হাতি, ৪০৭-এর মত গাড়ির কদরও দিন দিন বাড়ছে আমকে কেন্দ্র করে। আবার দূরবর্তী এলাকার আম ব্যবসায়ীরা লাইনের গাড়ি করেও মাল দিয়ে যায় নিজস্ব হাটে। তবে এবারে খুচরো বাজারে আমের দাম একটু কম থাকায় কিন্তু আম কেনার হিড়িক বেড়েছে ভালোরকম।
সুব্রত সরকার
ফুলিয়া