Science & Technology
মহাকাশ থেকে নীল গ্রহকে আমরা সবাই দেখেছি মোবাইল, কম্পিউটার বা টিভির পর্দায়। কিন্তু রিয়েল লাইফ এক্সপেরিয়েন্স? না, সেই এক্সপিরিয়েন্স এখনো পর্যন্ত করতে পেরেছেন শুধু মহাকাশবিজ্ঞানীরাই। কিন্তু এবার সাধারণ মানুষের ঘুরে আসার সময়। টেকনোলজি, সায়েন্স এবং মানিটারি বিষয়টা যদি সব ঠিক থাকে তাহলে মহাকাশ ঘুরে আসা সম্ভব। আর এটাই হতে চলেছে ভবিষ্যতে ইন্ডাস্ট্রিকে বুম করানোর জন্য ওয়ান অফ দ্য এশেন্সিয়াল কীজ। স্পেস ট্যুরিজম। এই ট্যুরিজমকে পাখির চোখ করেছে বিশ্বের বেশ কিছু বেসরকারি কোম্পানি। তার মধ্যে যেমন অবশ্যই রয়েছে ইলন মাস্কের স্পেস এক্স বা অ্যামাজনের ব্লু অরিজিন। কিন্তু অন্যান্য দেশকে বলে বলে গোল দেবার জন্য তৈরি হচ্ছে ইসরো। ঘুরিয়ে আনার প্রোগ্রাম সাজাচ্ছে তারাই। আর এটা ভারতকে যে অবশ্যই ইন্ডিপেনডেন্ট করে তুলবে মহাকাশে আর দুর্দান্ত একটা লক্ষ্যপূরণ করবে, সেটা কি বলে দিতে হবে? তাই, আসুন, আজকের প্রতিবেদনে তুলে ধরব কিভাবে স্পেস ট্যুরিজম করানোর জন্য নাসা থেকে শুরু করে বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত হচ্ছে ইসরো। একইসঙ্গে বলব, হোয়াট ইজ দ্য ফিউচার অফ স্পেস ট্যুরিজম ইন ইন্ডিয়া।
নাসার মতনই ইসরো যে স্পেস ট্যুরিজমকে ওপেন করতে চলেছে সেই বিষয়ে স্পষ্ট করেছেন ইউনিয়ন মিনিস্টার জিতেন্দ্র সিং। তার জন্য ইন্ডিয়ার সমস্ত প্রাইভেট স্পেস এজেন্সি যেমন অগ্নিকুল কসমস, বেলাট্রিক্স এইরোস্পেস, ধ্রুব, পিক্সেলকে একযোগে কাজ করতে বলেছেন ইসরোর সঙ্গে। এখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করলে দেখবেন, স্পেস ট্যুরিজম মার্কেটকে জনপ্রিয় করবার জন্য কাজ করছে বিশ্বের অন্যান্য বেসরকারি স্পেস এজেন্সিগুলো। ভারতে যে’কটি প্রাইভেট স্পেস এজেন্সি রয়েছে তাদের এই প্রতিযোগিতায় নামার কাজটা এখনো কিছুটা বাকি রয়ে গিয়েছে। আচ্ছা, আপনারা তো গগনযান স্পেস মিশনের কথা জানেন। ইন্ডিয়ার প্রথম হিউম্যান স্পেস মিশন প্রোগ্রাম। যা পৃথিবী থেকে ৪০০ কিমি দূরে ৭ দিনের জন্য কক্ষপথে ঘুরবে। তার জন্য তিনজন ইন্ডিয়ান অ্যাস্ট্রোনটদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানো হবে ইন্ডিয়া থেকেই। আর এই মিশনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি। এতদিন পর্যন্ত ইসরোকে বিভিন্ন মেটেরিয়ালের জন্য বাইরে থেকে সমস্ত কিছু ইমপোর্ট করতে হত। কিন্তু এখন টেকনোলজিক্যাল অ্যাডভান্সমেন্টে পিছিয়ে নেই ইসরো। এখন, এই সব মেটেরিয়াল তৈরি হচ্ছে ইন্ডিয়াতে। তার জন্য কাজ করছে বেসরকারি স্পেস এজেন্সিগুলো। বর্তমানে গোটা বিশ্বে ১০০টা বেসরকারি কোম্পানি রয়েছে যারা এই স্পেস ট্যুরিজমকে পাখির চোখ করেছে। শুনলে অবাক হবেন, এদের মধ্যে ৪০টা কোম্পানি রয়েছে শুধু ভারতেই, যারা স্যাটেলাইট কনস্ট্রাকশন এবং ডিজাইনিংয়েই কনসেনট্রেট করেছে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল স্পেস ট্যুরিজমে আমাদের ফায়দা কি?
অ্যামাজন যখন ব্লু অরিজিনের মাধ্যমে প্যাসেঞ্জারদের দশ মিনিটের জন্য ঘুরিয়ে আনল স্পেস থেকে, তখন মাথাপিছু নেওয়া হয়েছিল প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। হ্যাঁ, ঠিকই। ব্লু অরিজিন বা স্পেস এক্স- এরা প্রত্যেকেই মহাকাশ থেকে নীল গ্রহকে দেখানোর জন্য যাত্রীপিছু বিশাল অঙ্ক দাবি করে বসতে পারে। আর এখানেই রয়েছে ভারতের ফায়দা। কি রকম? আপনাদের মঙ্গলযানের কথা নিশ্চয়ই মনে রয়েছে? এছাড়াও মনে রয়েছে চন্দ্রযানের কথা। মাত্র ৩৮৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল চন্দ্রযানের মিশনে। একটি হলিউড সিনেমার থেকেও কম খরচে যে প্রযুক্তি, বিজ্ঞান এবং মেধাকে আশ্রয় করে মহাকাশে পৌঁছনো সম্ভব, সেটা অলরেডি দেখিয়ে দিয়েছে ইসরো। স্বাভাবিকভাবেই, ইসরো যে স্পেস ট্যুরিজমের জন্য এমনই কস্ট এফেক্টিভ বিষয়টা মাথায় রাখবে, সেটা বলে দিতে হবে না। তাই কোন ব্যক্তি যদি মহাকাশ ভ্রমণের ইচ্ছা দেখান, তাহলে আর কেন তিনি ব্লু অরিজিন বা স্পেস এক্সের ওপরে তাঁরা ডিপেন্ড করবেন? তার মানে, যত দিন যাবে ততই ইসরো এবং দেশের বেসরকারি স্পেস এজেন্সিগুলোর হাত ধরেই মহাকাশ ঘুরে আসা সম্ভব হবে। তার মানে, অদূর ভবিষ্যতে মহাকাশেও যে ভারত ডমিনেট করবে সেটা এখন বলার সময় এসে গিয়েছে। অবশ্য, এটা আমি বলছি না। বিশ্বের বহু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী দু’দশকে গ্লোবাল স্পেস ইকোনমিতে ভারতের কন্ট্রিবিউশন থাকবে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার। কিন্তু আপনি যদি ভেবে থাকেন যে, এই পুরো প্রোজেক্ট খুব তাড়াতাড়ি ইন্ডিয়া করতে সক্ষম হবে, তাহলে একটু হতাশই হতে হবে। তার কারণ, ভারতের সামনে রয়েছে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ। একের পর এক রকেট, স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে ভারত। আর এটাই ধীরে ধীরে একেকটা ধাপ পেরোতে সাহায্য করবে ভারতকে। ফলে স্পেস ট্যুরিজমের মতন লুক্রেটিভ মার্কেটে ইন্ডিয়া খুব ইজিলি ডমিনেট করার জায়গায় পৌঁছে যাবে।
এখানেই একটা বিষয়। স্পেস ট্যুরিজম যেমন লুক্রেটিভ একটা মার্কেট হয়ে উঠতে পারে, তেমনি এটার ভালোরকম নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট পড়তে পারে পৃথিবীতে। তার মধ্যে অন্যতম দূষণ। জানা গিয়েছে, একটি রকেট লঞ্চ করলে বাতাসে ৩ লক্ষ কিলো কার্বন ডাই অক্সাইডবাতাসে মিশে যায়। আর যদি পুরো বছরের কথা ধরি, সেটা দাঁড়িয়ে যায় প্রায় ১ হাজার টনে। যে কারণে ক্ষতির মুখে পড়বে ওজোন লেয়ার। এছাড়াও রয়েছে মহাকাশের জঞ্জাল। পৃথিবীর কক্ষপথে এই মুহূর্তে ৩৪ হাজার বড় বড় পিস রয়েছে যেগুলো আসলে স্পেস জাঙ্ক ছাড়া আর কিছুই নয়। এর সঙ্গে রয়েছে লক্ষ লক্ষ ছোট ছোট স্পেস জাঙ্ক। স্পেস ট্যুরিজম হলে, তখন একের পর এক রকেট লঞ্চ হবে। ফলে দুর্ঘটনা বৃদ্ধির সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে ব্যবসায়িক বা আর্থিক দিক থেকে স্পেস ট্যুরিজম একটা দেশকে যত শক্তিশালী করবে, অন্য দিক থেকেই সেটাই পৃথিবীর স্বাস্থ্যের বিষয়ে ঝুলিয়ে রাখবে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন। কিন্তু যত যাই হোক, হোপ ফর দ্য বেস্ট। স্পেস ট্যুরিজম ভবিষ্যতে ট্যুরিজম সেক্টরের জন্য হতে চলেছে এক যুগান্তকারী পরিকল্পনা। কিন্তু তার জন্য ভারতকে আর অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হবে না। কয়েকটা বছর সবুর করে যান। স্পেস ট্যুরিজমেও ডমিনেট করবে ভারত। প্রতিবেদন শেষ করছি এখানেই। কিন্তু আপনার ছোট্ট একটা কাজ বাকি।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ