Science & Technology
ব্যর্থতা সাফল্যের চাবিকাঠি। আগের ভুল থেকে শিখে নিয়ে নতুনভাবে নেমে পড়া। আর এই বিষয়টা ইসরোর চেয়ে বেশি কেউ জানে বলে হয় না। ঘুরে দাঁড়াতে পারে ইসরো। একইসঙ্গে বিশ্বকে চ্যালেঞ্জও ছুঁড়তে পারে ইসরো। হ্যাঁ, তাও যদি বিপুল অর্থের বিনিয়োগ হত না-হয় একটা কথা ছিল। কিন্তু একেবারে নামমাত্র খরচে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছনোর জন্য দিনের শেষে প্রয়োজন পড়ে তীক্ষ্ণ মেধা এবং পরিশ্রমের। সেই কথাটা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন। না-হলে এবারেও রেকর্ড গড়ে ফেলতে পারে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন! হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। চন্দ্রাভিযানের আগেই রেকর্ড গড়েছে ইসরো। প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নিশ্চয়ই। পুরোটা জানতে হলে স্কিপ না করে প্রতিবেদনটি দেখুন একেবারে শেষ পর্যন্ত।
সাল ১৯৬৯। মানব ইতিহাসে রেকর্ড তৈরির পথে নাসা। চাঁদে পাঠানো হল অ্যাপোলো-১১। খরচ হল ২ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা মতন। মাঝে ৫৪ বছরের গ্যাপ। ভারত গেলবারের থেকে শিক্ষা নিয়ে ফের পাঠাতে চলেছে চন্দ্রযান-৩। খরচ কত জানেন? মাত্র ৬১৫ কোটি টাকা। এই মাত্র শব্দটা বলা নাসার বাজেটের নিরিখে কিন্তু নয়। এই মাত্র শব্দটা বলা হয়েছে কারণ, সম্প্রতি একটি সিনেমার বাজেট ছাড়িয়ে গিয়েছে চন্দ্রযান-৩ এর বাজেটকে। আহ…কোন হলিউড মুভি নয়। খাস ভারতীয় সিনেমা। যেখানে পরতে পরতে রামায়ণের ছায়া। আশা করি বুঝতে পারছেন। হ্যাঁ, আদিপুরুষের কথা বলছি। জানেন তো আদিপুরুষের বাজেট কত ছিল? প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। একদিকে যেখানে বিপুল অর্থ খরচ হবার পরিবর্তে জমা হয়েছে হতাশা, সেখানে কম খরচে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়ে ইতিহাস তৈরির পথে ইসরো। মিশন চন্দ্রযান-৩। পাড়ি দেবে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার কিলোমিটার। তারপর নামবে চাঁদের মাটিতে। এবার প্রশ্ন করতে পারেন যে ভারত কিভাবে এতো কম খরচে চন্দ্রাভিযান চালায়?
বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আমেরিকায় একজন ইঞ্জিনিয়ারের বেতন বছরে পৌঁছে যায় প্রায় ৮০ লক্ষ টাকায়। এদিকে যদি একজন ইসরোর ইঞ্জিনিয়ারের বেতন কাঠামোকে ধরা হয় তাহলে বলতে হবে, ইসরোর ইঞ্জিনিয়ারের বেতন নাসার তুলনায় অনেকটা কম। সেটা হচ্ছে প্রায় অর্ধেক। তাছাড়া চন্দ্রযানের যন্ত্রাংশ বাইরে থেকে ইমপোর্ট করা হয় না। দেশীয় মেধা এবং দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করেই তৈরি হয়। আর যে কারণে সেই খরচও নেমে আসে অনেকটাই। বিষয়টা কেমন জানেন? অনেকেই বলেন, পুঁজি কম তাই বুঝি কম। কিন্তু এই আপ্তবাক্যটি একেবারেই ইসরোর সঙ্গে খাটে না। কারণ ইসরোর পুঁজি কম মানেই যে সে বোঝে কম, এটা এক্কেবারে ভুল। বরং পুঁজি কম বলেই ইসরো চেষ্টা করে কিভাবে কম খরচে বিজ্ঞানীরা তাদের পদ্ধতি এবং প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে পারে। গত বারেও যেভাবে ইসরো কম খরচে মঙ্গলযান তৈরি করে সেটাকে পাঠিয়ে গোটা বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছিল, এবারেও সেটাই হবে।
প্রায় ৪ হাজার কেজি ওজন এই মহাকাশযানের। আজ ১৪ জুলাই উড়বে, চাঁদের বুকে নামবে ২৩ অগাস্ট। এবারেও চন্দ্রযান-৩ নামবে চাঁদের দক্ষিণদিকে। যে অন্ধকার দিকটা কোনদিন প্রকাশ্যে আসেনি। আগেরবারের মতন এবারেও সেখানে নেমে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাবে চন্দ্রযান-৩। তাপমাত্রা, আবহাওয়া এমনকি চাঁদের ঐ অন্ধকার দিকের গঠন কিরকম এই সব নিয়েই পরীক্ষা চালাবে চন্দ্রযান-৩। এখানেই জানিয়ে রাখি, ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ পাঠিয়েছিল ভারত। কিন্তু সেবার পুরোপুরি সফল হতে পারেনি ইসরো। তাই এবার আর কোন নতুন করে অরবিটার পাঠাচ্ছে না তারা। চন্দ্রযান-২ এর সময় যে অরবিটার পাঠানো হয়েছিল, তার হাত ধরবে এবারের চন্দ্রযান-৩।
একটা বিষয় ভেবে দেখুন। আদিপুরুষ নিয়ে কোন প্রতিবেদন তৈরি করতে হলে যেখানে নেগেটিভিটির বন্যা বওয়াতে হত, সেখানে কম খরচে চন্দ্রযান-৩ মিশন নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি হল আশা, আকাঙ্খা, উৎসাহ এবং উত্তেজনাকে নির্ভর করেই। আর শেষে একটাই বলা। টাকার ব্যবহার কিভাবে করতে হয়, সেটা অন্তত ইসরোর কাছ থেকে শেখা উচিৎ। কাদের? সেসব আর নাই বা বললাম। বরং আপাতত চন্দ্রযান-৩ যাতে ভারতকে মহাকাশে মহাগুরুর আসনে বসাতে পারে, সেটাই প্রার্থনা করি। আমাদের সঙ্গে আপনারাও করুন।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ