Science & Technology
অবশ্যই এটা একটা অ্যাবস্ট্রাক্ট আইডিয়া। মানে কেন আপনি শূন্য বা ‘নাথিং’-কে কাউন্ট করবেন? কিন্তু সবথেকে মজার বিষয়, এখান থেকেই অঙ্কশাস্ত্র, ক্যালকুলাস থেকে শুরু করে আধুনিক ম্যাথামেটিক্স- এই সবই শূন্য ছাড়া অসম্ভব। তাই শূন্যকে নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে, মোস্ট এক্সট্রাঅর্ডিনারি ম্যাথামেটিকাল ইনভেনশন। বিদেশের বহু প্রথম সারির গণিতজ্ঞরাও মেনে নিয়েছেন, শূন্য যা আসলে কিছুই না, আর সেই কিছুই না থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল আধুনিক অঙ্ক শাস্ত্রের। দেড় হাজার বছর ধরে যা মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আর এই শূন্যের আবিষ্কার কোথায়? ভারতে মানে প্রাচীন ভারতবর্ষে। যখন অন্যান্য দেশে শূন্যের কোন কনসেপ্টই আসলে ছিলই না। ঠিক তখনই ভারতের প্রাচীন পুঁথিতে পাওয়া গেল শূন্যকে। শূন্য মানে একটা ‘ডট’। এক এক্সট্রাঅর্ডিনারি ম্যাথামেটিক্যাল জার্নি শুরু এখান থেকেই। যেখানে তুলে ধরব শূন্যের ইতিহাস। আর এই শূন্য কিভাবে আধুনিক ম্যাথামেটিক্সকে ফর্ম দিল, বলব সেটাও।
আজ থেকে ৪ হাজার বছর আগে পজিশনাল নাম্বার সিস্টেমের প্রচলন ছিল ব্যাবিলনে। বর্তমানে যা ইরাক। সেই সময় ব্যাবিলনে সংখ্যা গণনার পদ্ধতি ছিল শূন্যহীন ষাটভিত্তিক। মায়ান সিভিলাইজেশনেও গণনার পদ্ধতি ছিল কুড়িভিত্তিক। মায়ান সভ্যতা মানে বর্তমানে যা ব্রাজিল এবং মেক্সিকোর অংশ। এমনকি ৩ হাজার বছর আগেও রোমান সভ্যতাতেও গণনা হয়েছিল দশভিত্তিক। কিন্তু ভারতবর্ষে শুরু হয়েছিল দশ ভিত্তিক সংখ্যার প্রচলন। আর যে কারণেই উঠে আসে এই শূন্য বা ‘ডট’। ভাবলে অবাক হবেন যে, এই শূন্য থেকেই গণিতশাস্ত্র দুর্দান্ত একটা চেহারা পায়। গণিতের এটি একটি রহস্যময়ী আবিষ্কার। সেই সময় শূন্যকে ডট হিসেবে ভারতীয় গণিতজ্ঞরা প্রকাশ করলেও পরে গ্রীকদের হাত ধরেই শূন্য আজকের রূপ পায়। সংস্কৃতে সেই সময় শূন্যকে শূন্যিয়া বলা হত। সেই সময় যে কয়েকজন ভারতীয় গণিতজ্ঞরা বিশেষ ছাপ রেখেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন আর্যভট্ট, ব্রহ্মগুপ্ত, ভাস্করাচার্য, বরাহমিহির, শ্রীধর, নারায়ণ পণ্ডিত। আর শূন্যের গুরুত্বকে যারা ভালোকরে বুঝিয়েছিলেন, তাঁরা হলেন আর্যভট্ট এবং ব্রহ্মগুপ্ত।
ব্রহ্মগুপ্ত। প্রাচীন ভারতবর্ষের এবং ম্যাথামেটিক্স হিস্ট্রির এক অন্যতম স্তম্ভ। যার জন্ম হয়েছিল আনুমানিক ৫৯৮ খ্রিষ্টাব্দে। এবং মৃত্যু হয়েছিল আনুমানিক ৬৬৮ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ছিলেন একদিকে গণিতবিদ এবং অন্যদিকে জ্যোতির্বিদ। তিনি মোট তিনটি বই লিখেছিলেন যার মধ্যে অন্যতম ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত। ব্রহ্মগুপ্তই প্রথম শূন্যের ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের পরিচিতি করান। শূন্যের মাধ্যমে যোগ, বিয়োগ, গুণ প্রচলন করেন তিনি। তিনিই প্রথম বলেছিলেন, শূন্য দিয়ে যোগ বা বিয়োগ করলে সেই সংখ্যাই পাওয়া যায়। এমনকি শূন্য দিয়ে গুণ করলে গুণফল শূন্য হয়, সেটাও তিনি জানিয়েছিলেন। যদিও ভাগ করা নিয়ে একটা বিপত্তির মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। তিনি বলেছিলেন, শূন্য দিয়ে ভাগ করলে সেটাও শূন্য হয়। তবে ১২ শতাব্দিতে আরেক ভারতীয় গণিতবিদ দ্বিতীয় ভাস্কর বলেন যে, শূন্য দিয়ে ভাগ করলে সেক্ষেত্রে শূন্য নয়। ভাগফল হয় অসীম।
তবে শূন্যের ব্যবহারকে আরও বেশি হাতেকলমে করতে শেখান ভারতের অন্যতম গণিতবিদ আর্যভট্ট। মাত্র ২৩ বছর বয়সে এই বিখ্যাত গণিতবিদ আর্যভটিয়া নামক একটি বই রচনা করেন। তিনি গণিতবিদের পাশাপাশি ছিলেন একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী। এই গ্রন্থে তিনি চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণের একাধিক বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেন। এমনকি তিনি ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল, পিরামিডের আয়তন নিয়েও একটি ব্যাখ্যা প্রকাশ করেছিলেন। এটা ঠিক যে, এগুলি প্রকাশের সময় তিনি কোন ম্যাথামেটিক্যাল ল্যাঙ্গুয়েজের আশ্রয় নেন নি। তাই বর্তমানের অনেক গণিতবিদ মনে করেন, তিনি অজান্তেই শূন্যের ব্যবহারকে চিনিয়েছিলেন গোটা বিশ্বের কাছে। কিন্তু শূন্য কিভাবে ধীরে ধীরে জিরো হয়ে উঠল? জানা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে শূন্য সংখ্যাটির সঙ্গে প্রথম পরিচয় ঘটে দুই আরবের গণিতজ্ঞর। তাঁদের মধ্যে একজন আল কিন্দির এবং আল খোয়ারিজমি। এই আল খোয়ারিজমিঃ শূন্যকে বোঝাতে একটি গোল বৃত্তকে ব্যবহার করেছিলেন। সেই সময় এর নাম দেওয়া হয়েছিল সিফর। বিখ্যাত গণিতবিদ লিওনার্দো ফিব্বোনাচ্চি আফ্রিকায় গিয়ে ধীরে ধীরে গণিতবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তারপর নিজের দেশ ইতালিতে ফিরে গিয়ে পাশ্চাত্যের সঙ্গে পরিচয় করান শূনিয়া থেকে সিফরের সঙ্গে। যা পরবর্তীতে জিরো-য় পরিণত হয়। এখানেই বলে রাখি, প্রাচীন ভারতের বকশালী ম্যানস্ক্রিপ্টে প্রথম জিরো বা শূন্যের ব্যবহার লক্ষ্য করা গিয়েছিল।
শূন্য, যা আসলে কিছুই নয় আজ তাকে আশ্রয় করেই আধুনিক বিজ্ঞানের যত জয়জয়কার। এই শূন্যের আবিষ্কার কিভাবে প্রাচীন ভারতীয়দের মাথায় এলো, তা আজ সত্যিই রহস্য। মনে করা হয়, ব্রহ্ম থেকেই শূন্যের কনসেপ্ট গ্রহণ করেছিলেন তাঁরা। আজ পাশ্চাত্য দুনিয়া একের পর এক কিংবদন্তি পদক্ষেপ ফেলে বিজ্ঞানের জয়ধ্বজা ওড়াচ্ছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, আধুনিক ভারতের বিজ্ঞান দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন ভারতীয় গণিতজ্ঞের দেখানো ভিতের ওপরেই। আজ সকল ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের উচিৎ, প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান থেকে সামগ্রিক উৎকর্ষতার সঙ্গে পরিচয় করার।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ