Science & Technology
ধরুন, আজ অফিসের জন্য বেরোতে আপনার খুব দেরি হয়ে গেল। বাস ধরলেন। রাস্তাতেও ভয়ঙ্কর জ্যাম। নির্দিষ্ট স্টপেজে পৌঁছনোর কিছু আগেই থমকে গেল বাসের চাকা। ভাবলেন হেঁটে চলে যাবেন। যেই বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করলেন, অমনি বাস চলতে শুরু করল। এরকমই আরও বিচ্ছিন্ন বহু ঘটনা, যা আসলে খুবই ছোট ছোট, প্রত্যেকটাই আমার বা আপনার সকলের সঙ্গে হামেশাই হয়ে থাকে। তখন নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করা ছাড়া আর কিছু মাথায় আসে না। একবারও ভাবার চেষ্টা করেন না যে এই ঘটনার মধ্যে আদৌ কোন যুক্তি বা ব্যাখ্যা আছে কিনা। সেক্ষেত্রে নিজের ভাগ্যকে দোষ দিয়েও লাভ নেই। কারণ শুধু আপনার সঙ্গেই কেন এমন ঘটনা ঘটছে এই কৌতূহল যদি তৈরি হয়, তাহলে বলতে হবে এর জন্য দায়ি মারফির সূত্র। স্বাগতম বিজনেস প্রাইম নিউজে। আজ আমরা প্রতিবেদনে এমনই একটি বিষয় তুলে ধরব, যা প্রতিদিনের ঘটনাবহুল জীবনকে দেখতে সাহায্য করবে একটু অন্যরকম ভাবে।
মারফির সূত্র ঠিক কী, তাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বোঝানোর চেয়ে বরং একে দর্শনের তত্ত্বে ফেলে দেওয়া ভালো। ইংলিশে যাকে বলে হাইপোথিসিস। মারফির ল বা মারফির সূত্র বলে, ‘If anything can go wrong, it will’ অর্থাৎ যা ভুল হবার সেটা হবেই। খণ্ডাতে পারবেন না কেউ। আসলে মারফির সূত্রকে আমরাই টিকিয়ে রেখেছি বহুদিন ধরে। আলাদা করে তার পিছনে কোন পরিশ্রম আমরা করি না। মুশকিলটা হয়, যখন আমাদের সঙ্গে প্রতিটা কাজ খুব ভালোভাবে হতে থাকে তখন আমরা কোন কথাই ভাবি না। কিন্তু আমাদের ইচ্ছেমতন সেই কাজ ঠিকঠাক না হলেই ভাগ্যের ওপর বিষয়টাকে ছেড়ে দিই। একইসঙ্গে এটাও ভুলে যাই, আমরা প্রতিদিন যে কাজগুলো করছি তার ইতিবাচক দিক একটা রয়েছে। মারফির সূত্র অবশ্য এই ইতিবাচক দিক নিয়ে নয়। মারফির সূত্র আপনাকে ফেলে দেবে নেতিবাচক অংশে।
ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড মারফি। তিনিই নাকি এই মতবাদের সূত্রধর। কিন্তু মারফির আগেও এই মতবাদ আগেও অনেকে উল্লেখ করেছিলেন। যেমন ম্যাজিশিয়ান এডাম হাল। ১৯২৮ সালে তিনি একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সেখানেই তিনি বলেন, ম্যাজিক দেখানোর সময় যদি কোন ভুল হওয়ার থাকে, তবে সেটা হবেই। ব্রিটেনে এটাই আবার Sode’s Law নামে পরিচিত। তবু এই তত্ত্বকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় করেন ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড মারফি। পেশায় তিনি ছিলেন মার্কিন বিমানবাহিনীর একজন ইঞ্জিনিয়ার। সাল ১৯৪৯। এয়ারফোর্সের ঘাঁটিতে তিনি একটি পরীক্ষা চালাচ্ছেন। পরীক্ষার বিষয়বস্তু গ্র্যাভিটি। একজন পাইলট অভিকর্ষজ ত্বরণ কতটা সামলাতে পারেন। এই কাজে মারফিকে সাহায্য করার জন্য উপস্থিত ছিলেন কর্নেল জল পল স্টাপ। এবার আসা যাক আসল গল্পে। মারফি ঠিক করেন বিমানে বেশ কয়েকটি সেন্সর বসাবেন এবং এই পরীক্ষার ফলাফল যাচাই করবেন। কিন্তু পরীক্ষার ফল এলো শূন্য। মারফি দেখলেন প্রত্যেকটি সেন্সর ভুল জায়গায় লাগানো রয়েছে। রেগে গিয়ে মারফি স্টাপের উদ্দ্যেশ্যে বললেন, একটি কাজ করার জন্য যদি দুটি পথ থাকে তাহলে এই লোকটি সেই দুটি উপায়ের মধ্যে ভুল উপায়েই কাজটি করবে। রাগ দেখালেন মারফি, কিন্তু অন্য একটা তত্ত্ব পেলেন স্টাপ। পরবর্তীকালে তিনি বলেছিলেন, মারফির ঐ একটি কথাই তাঁদের নির্ভুলভাবে বহু কাজ করতে সাহায্য করেছিল। যদিও ঐ ঘটনার পর ক্যাপ্টেন মারফি এয়ারফিল্ডে চলে যাবার কথা ভেবেছিলেন। এবার আসা যাক মারফির সূত্র’র সঙ্গে তাপগতিবিদ্যার।
তাপগতিবিদ্যায় বলা হয়, বাইরের শক্তি ছাড়া নিম্ন তাপমাত্রার কোন বস্তু থেকে উচ্চ তাপমাত্রার কোন বস্তুতে তাপের স্থানান্তর ঘটা সম্ভব নয়। আমরা কখনোই এমন কিছু করতে পারব না, যেখানে ১০০ শতাংশ ইনপুটের পরিবর্তে আমরা ১০০ শতাংশ আউটপুট পাব। অর্থাৎ যাই করি না কেন, সামান্য হলেও শক্তি আমরা হারাবই। অর্থাৎ এই ধরাধামের যা সিস্টেম, সেই সিস্টেমে শক্তি একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। মারফির সূত্র সেটাই দাবি করে। মানে, আপনি যদি দেখেন খুব মসৃণভাবে কোন কাজ একের পর এক ধাপ টপকে করে ফেলছেন, তাহলে বুঝতে হবে, আপনি হয়ত এতক্ষণে নিশ্চয়ই কিছু ভুল করেছেন, যা আপনার চোখ এড়িয়ে গেছে। আসলে বিষয়টা হচ্ছে, এই পৃথিবীতে কোন সিস্টেম নির্ভুল নয়। আবার মানুষ যে কাজই করুন না কেন, সেটাও যে নিখুঁত হবে এমন ভাবার কোন কারণ নেই। তাই মারফির সূত্র বলে, যে কাজ করতে গিয়ে আপনি ভুল করছেন, বা করে ফেলেছেন, তার জন্য কখনোই হতাশ হয়ে পড়বেন না বা নিজের ভাগ্যকেও দোষারোপ করবেন না। বরং তার পরিবর্তে ভুল কোথায়, সেটা খোঁজার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ যে ভুল হবার সেটা তো হয়ে গেছেই। খেয়াল রাখুন ভবিষ্যতে যেন সেই ভুল আর না-হয়। প্রতিবেদন শেষ করব আরেকজনের কথা বলে। নোবেলজয়ী সাহিত্যিক রুডিয়ার্ড কিপলিং একবার বলেছিলেন, যতবারই আপনার হাত থেকে মাটিতে পাউরুটি পড়ে যাবে, খেয়াল করে দেখবেন, প্রতিবারই মাখন লাগানো দিকটাই মাটিতে পড়ে। তার কারণ মাখন লাগানোর কারণে পাউরুটির সেই দিকটা ভারি হয়ে যায়। কিন্তু অপর দিকটা যদি কোন কারণে পড়ে যায়, তাহলে ভাগ্যকে দোষ না-দিয়ে বরং ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করাই ভালো। আজকের মতন এখানেই শেষ করছি প্রতিবেদন।
বিজনেস প্রাইম নিউজ ।
জীবন হোক অর্থবহ