Daily
ন্যাচারাল রিসোর্স, সেটাও পণ্য। পয়সা দিয়ে কিনতে হচ্ছে খাওয়ার জল! জানি, এই দৃশ্য নতুন নয়। বহু বছর ধরে এই অভ্যাসকে রপ্ত করা হয়েছে। এবং কী অদ্ভুত ভাবুন! কোনোদিন এ নিয়ে টুঁ শব্দটি করা হয়নি। গরিবিয়ানা যে দেশের অন্যতম প্রধান দুর্বলতা, সেই দেশের মানুষকে পয়সা দিয়ে জল কিনতে হচ্ছে। আর মাসের শেষে এই অতিরিক্ত খরচ মেটানোর জন্য হিমশিম খেতে হচ্ছে। আপনি এখনও চুপ করে থাকবেন? আচ্ছা কোনোদিন যদি এমন আসে যে বাঁচার জন্য অক্সিজেনটুকুও দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে, সেদিনও এমনভাবেই চুপ করে থাকবেন? কিচ্ছু বলবেন না? কোন প্রতিবাদ করবেন না?
নদীয়া জেলার হরিণঘাটা ব্লকের কাস্টডাঙা গ্রামপঞ্চায়েতের বেশ কিছু এলাকা দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যায় জর্জরিত। প্রতিটা ঘরে নিরাপদ পানীয় জল পৌঁছে দিতে পাইপলাইন বসেছে গ্রামে গ্রামে। নামকে ওয়াস্তে পাইপালাইন তো বসল… কিন্তু সেই পাইপলাইন দিয়ে নিরাপদ জল এসে পৌঁছল কোথায়? যাও বা জল আসছে, সেই জলে রয়েছে ভর্তি আয়রন। দুর্গন্ধে ভরা সেই জল খাওয়া তো দূরের কথা রান্নার কাজেও ব্যবহার করতে পারছেন না গ্রামবাসীরা।
জল ছাড়া তো আর জীবন চলতে পারে না। কাজেই বিকল্প উপায় খুঁজে বের করতে হবে। গ্রামের সাধারণ মানুষকে সামান্য টাকার বিনিময়ে পানীয় জলের পরিষেবা দিচ্ছেন স্থানীয় জল ব্যবসায়ীরা। গ্রামবাসীরা কুড়ি লিটার ব্যারেল নিয়ে অপেক্ষা করেন। আর ব্যবসায়ীরা ব্যারেল এ জল ভরে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। মূল্য ব্যারেল প্রতি ১০ টাকা। ভূগর্ভস্থ জল কখনও আইনিভাবে, কখনও বেআইনিভাবে তুলে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে পিউরিফাই করে বিক্রি করা হচ্ছে। রোজগারের উপায় খুঁজে পেয়েছেন গ্রামের কিছু বেকার যুবক। আর সরকারের উদাসীনতার সুযোগ নিচ্ছেন স্থানীয় জল ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু এটা তো সমাধান নয়। কতদিন এইভাবে জল কিনে দিন চলবে এই গরীব মানুষগুলোর? যাদের নুন আনতে পান্তা ফুঁড়োয়, তাদের কাছে পয়সা দিয়ে জল কেনাটা লাক্সারি। হ্যাঁ এটা ঠিক যে স্থানীয় কিছু যুবক এতে রোজগারের দিশা পেয়েছেন। কিন্তু সরকারের তরফে তো জল পৌঁছনোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কি না,সেটা খেয়াল রাখাও কি সরকারের দায়িত্ব নয়? এখন জলের দাম মেটাতে নাজেহাল গ্রামবাসী শুধু সরকারী সাহায্যের দিকেই মুকিয়ে রয়েছে।
সুব্রত সরকার
নদিয়া