Science & Technology
সময়টা ২০২০-এর মাঝামাঝি। প্রাইভেট ফার্ম এবং স্টার্ট আপগুলোর জন্য মহাকাশ গবেষণার দরজা খুলে দেয় ভারত সরকার। আর তারপরই ঠিক দু’বছরের মাথায় ভারতের মহাকাশ গবেষণায় আসে এক ঐতিহাসিক সাফল্য। উৎক্ষেপণ করা হয় স্যাটেলাইট ভিক্রম-এস। সফল হয় ভারতের প্রথম প্রাইভেট স্যাটেলাইটের জয়যাত্রা। আর তারপরেই নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রীয় সরকার। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এবার থেকে প্রাইভেট স্পেস টেক স্টার্ট আপগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এগবে ভারতে মহাকাশ গবেষণা। সেই থেকে শুরু। আজ ২০২২-এর শেষে তালিকা মেলালে দেখা যাবে প্রায় ১১০টিরও বেশি ইন্ডিয়ান স্পেস টেক স্টার্ট আপের নাম রেজিস্টার্ড রয়েছে ভারত সরকার পরিচালিত ইন-স্পেস-এ।
একদিকে নতুন যুগের শুরু হয়েছে ভারতের মহাকাশ গবেষণায়। ইসরো আর তার পাশাপাশি শতাধিক স্পেস টেক স্টার্ট আপের দিন রাতের পরিশ্রম মিলেমিশে একাকার। আর অন্যদিকে সাউথ এশিয়ার মার্কেট পরিদর্শনে ব্যস্ত আমেরিকান টেক জায়েন্ট সংস্থা মাইক্রোসফট। এখন আপনারা প্রশ্ন করতেই পারেন যে, মহাকাশ গবেষণার আলচনায় হঠাৎ টেক জায়েন্টের কথা কেন উঠছে? কারণ, শুধু জগৎসভাতে নয়। এবার মহাকাশ গবেষণাতেও শ্রেষ্ঠ আসন নেওয়ার লক্ষ্যে ভারত। সেই লক্ষ্যপূরণের দিকে আরও কয়েক ধাপ এগোল ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো। মহাকাশ প্রযুক্তিতে জোয়ার আনতে জোট বাঁধল ইসরো এবং মাইক্রোসফট। মহাকাশ প্রযুক্তি নিয়ে আগামী উদ্যোগগুলোকে সফল করতে যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই দুই সংস্থা। গত বৃহস্পতিবারই এই সংক্রান্ত একটি মৌ স্বাক্ষর হয় ইসরো এবং মাইক্রোসফটের মধ্যে।
ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটা ঐতিহাসিক বছর ছিল ২০২২। বিভিন্ন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ছাড়াও এই বছরই প্রথম প্রাইভেট রকেট উৎক্ষেপণেও রেকর্ড করে ভারত। এছাড়াও শুধুমাত্র ২০২২ সালেই স্পেস টেক স্টার্ট আপগুলোর মাধ্যমে ভারতের কোষাগারে আসে ১০৮.৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ভারতের মহাকাশ গবেষণাকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে প্রাইভেট স্পেস সংস্থাগুলোকে সাহায্যও করবে ইসরো। আর সেই লক্ষ্যেই হাত মেলাল ইসরো এবং মাইক্রোসফট। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে এই নয়া উদ্যোগপতিদের পাশে দাঁড়াচ্ছে এই দুই সংস্থা?
স্পেস স্টার্ট আপ থেকে ইউনিকর্ন- এই ট্রান্সফরমেশনে বেসরকারি সংস্থাগুলোর পাশে দাঁড়ালো দুই মহারথী। দেশজুড়ে প্রচুর বেসরকারি স্পেস স্টার্ট আপ সংস্থা মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করছে প্রতিনিয়ত। আর এই টাই-আপের মাধ্যমে স্পেস টেক স্টার্ট আপগুলোকে চিহ্নিত করে মাইক্রোসফট ফর স্টার্ট আপ ফাউন্ডারস হাব প্ল্যাটফর্মে অনবোর্ড করবে ইসরো। এবং টেক স্টার্ট আপ প্রতিষ্ঠাতারা, তাদের ব্যবসা তৈরি এবং পরিচালনার জন্য যাতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সরঞ্জামগুলোর অ্যাক্সেস পায়, সেই ব্যবস্থা করবে মাইক্রোসফট। ব্যবসাকে দাঁড় করাতে যতটুকু রিসোর্সের প্রয়োজন হবে, তার পুরোটাই জোগাবে আমেরিকান টেক জায়েন্ট সংস্থা মাইক্রোসফট। এ বিষয়ে মাইক্রোসফটের তরফে জানানো হয়েছে যে, ভারতীয় স্পেস টেক স্টার্ট আপ প্রতিষ্ঠাতারা তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সরঞ্জাম এবং সংস্থানগুলিতে বিনামূল্যে অ্যাক্সেস পাবেন। তবে, শুধু প্রযুক্তিগত সাহায্যই নয়। নয়া উদ্যগপতিরা যাতে সমস্তরকমের মেন্টরিং সাপোর্টও পায়, সেদিকেও নজর রাখবে মাইক্রোসফট। প্রয়োজনে প্রোডাক্ট ডিজাইনিং, ফাণ্ড রাইজিং এবং মার্কেটিং-এর ব্যাপারেও সাহায্য পাবেন তারা। এছাড়াও স্পেস ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের সঙ্গে বিভিন্ন নলেজ সেয়ারিং সেশনের সুযোগও পাবে টেক স্টার্ট আপগুলো। আর গবেষণাকে স্মুদ করতে ইসরোর স্যাটেলাইট ডেটা অ্যাক্সেস করার গ্রিন সিগন্যালও পেয়ে যাবেন তারা।
ভারতের মহাকাশ গবেষণা এগিয়ে চলেছে ঝড়ো গতিতে। আর এই টাই-আপ যে সেই অগ্রগতিতে বাড়তি ফুয়েল জোগাবে, সে বিষয়ে আশাবাদী মাইক্রোসফট ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট অনন্ত মহেশ্বরী। সব মিলিয়ে এই দুই সংস্থার চুক্তি ভারতই মহাকাশ গবেষণাকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশাবাদী বিশেষজ্ঞমহল।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ