Daily
পণ্যবাহী ট্রেন কিনা স্পীডে মাত দিচ্ছে রাজধানী এক্সপ্রেসকে! রেললাইনের উপর দিয়ে মালগাড়ি ছুটছে ১০০ কিমি পার আওয়ারে! ভাবা যায়? মিরাকেল তাই না? এটা বিশ্বাস করতে অসুবিধা হওয়ারই কথা। আমারও হয়েছিল। যে পণ্যবাহী ট্রেন তার ধীর গতির জন্য নিত্যযাত্রীদের বিরক্তির কারণ, সেই পণ্যবাহী ট্রেন কি না কম্পিট করছে সুপারফাস্ট যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে। এটাই সত্যি এবং আজকাল এমনটাই ঘটছে! ভারতীয় রেল অন্তত সেই তথ্যই দিচ্ছে। তবে কি এই আচ্ছে দিন-এর কথাই বলেছিলেন মোদীজি?
হাতে সময় মাত্র ২৫ বছর। গা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে উন্নয়নশীল দেশের তকমা। উন্নয়নশীল দেশের ট্যাগলাইন নিয়ে মাতামাতি অনেক হয়েছে। ভারতকে এবার উন্নত দেশের ক্লাবে নিজের নাম লেখাতে হবে। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ক্যাপ্টেন মোদী। এর জন্য কি কি করতে হবে, সেই To do list-ও আমাদের কম বেশি সকলেরই জানা। বিনিয়োগের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে ইনফাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট। যেকোনো দেশের কর্মদক্ষতাকে ট্রিগার করতে যার কোন বিকল্প নেই। এবার তাকেই পাখির চোখ করলেন নরেন্দ্র মোদী সরকার। কমিউনিকেশন সহজ করতে দেশের প্রতিটা কোণা জুড়তে হবে এক সুতোয়। আপনারা সকলেই জানেন যে, সেই উদ্দেশ্য সফল করতেই মন্ত্রী নিতীন গডকরির নির্দেশে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় হাইওয়ে এক্সপানশনের কাজ। কিন্তু কমিউনিকেশন সহজ করতে শুধু হাইওয়েতেই ফোকাস করলে চলবে না। প্রয়োজন স্মুদ রেলওয়ে কানেক্টিভিটি। সুতরাং Golden Triangle হাইওয়ে প্রজেক্টের পাশাপাশি শুরু হল মিশন Golden Quadrilateral। ২০০৫ সালে মনমোহন সরকার যে প্রস্তাব রেখেছিলেন, মোদী সরকার সেই প্রস্তাবকেই বাস্তবায়িত করলেন। শুরু হল ডিএফসি প্রোজেক্ট। পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ যুক্ত করা হবে বর্গক্ষেত্রের মাধ্যমে। আর এই বর্গক্ষেত্র দিয়েই চলবে পণ্যবাহী ট্রেন। কী লাভ? কেন হচ্ছে? কতটা গুরুত্বপূর্ণ এই প্রোজেক্ট? ইত্যাদি বৃত্তান্ত জানতে হলে দেখতে হবে পুরো ভিডিওটা।
লক্ষ্য, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা। সুতরাং কানেক্টিভিটি সুপারস্মুদ করাটা প্রায়োরিটি। দেশের র্যাপিড গ্রোথ মেন্টেন করতে গেলে হাইওয়ে, রেলওয়ে, এয়ারওয়ে,ওয়াটারওয়ে এবং ইনফরমেশন ওয়ে- কানেক্টিভিটির এই পাঁচটা চাকাকে স্মুদলি রান করাতে হবে। তাই স্বাধীনতার পর এই প্রথম গোটা দেশজুড়ে বসছে দীর্ঘতম পণ্যবাহী রেল ট্র্যাক। যার অফিশিয়াল নাম ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর। যাদের কাছে এই টার্মটা একবারেই অজানা, তাদের জন্যে বলে রাখি, ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর হচ্ছে মালবাহী ট্রেনের জন্য তৈরি করা একটা স্পেশ্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট। যেটা দিয়ে ডেডিকেটেডলি পণ্যবাহী ট্রেনই চলবে। ইতিমধ্যেই প্রায় ১ লাখের বেশি ট্রেন চালানো হয়েছে এই উদ্যোগের মাধ্যমে। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, এখনও পর্যন্ত এই এন্টায়ার প্রোজেক্ট মাত্র দুটো ডায়াগনাল অর্থাৎ ইস্টার্ন এবং ওয়েস্টার্ন সাইটে ফ্রেইট ট্রেন চালানো শুরু হয়েছে। তবে, রেলমন্ত্রক সূত্রে খবর, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ এই পুরো প্রোজেক্টটাই শেষ হয়ে যাবে। এবং Golden Quadrilateral মাধ্যমে পণ্যবাহী ট্রেন দেশের প্রতিটা কোণায় গিয়ে পৌঁছবে। এবার আসা যাক এই প্রজেক্টের গুরুত্ব এবং বেনিফিট সম্বন্ধে।
ইস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডোরের কথা যদি বলি, তাহলে প্রথমেই বলতে হয় যে, এটা হচ্ছে ভারতের দীর্ঘতম রেল প্রোজেক্ট যেটা প্রায় ১৮৭৫ কিলোমিটার এরিয়া কভার করছে। পাঞ্জাবের সাহানেওয়াল থেকে শুরু করে হরিয়ানা উত্তর প্রদেশ, বিহার এবং ঝাড়খণ্ড হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ডানকুনি পর্যন্ত এলাকাকে যুক্ত করছে। আর এই করিডোরের আশপাশ জুড়ে রয়েছে প্রচুর কোল মাইন্স এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইট। ইস্টার্ন করিডোরের মেজর পোরশনের ফান্ডিং করেছে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক। নেক্সট হচ্ছে ওয়েস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডোর। যেটা মুম্বাইয়ের জহরলাল নেহেরু পোর্ট থেকে গুজরাট, রাজস্থান, হরিয়ানা হয়ে উত্তরপ্রদেশের দাদরি পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে। এই দাদরিতেই ওয়েস্টার্ন করিডোর এবং ইস্টার্ন করিডোরকে যুক্ত করা হবে। দেশের মেজর করিডোরের পাস দিয়ে এই ট্র্যাক পাস করবে এবং এটি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি দ্বারা ফান্ডেড। স্বাধীনতার পর দেশের সমগ্র ফ্রেইট ট্র্যাফিকে রেলওয়ের শেয়ার ছিল ৮৩ শতাংশ। ২০১১-১২ সাল নাগাদ সেটা কমে প্রায় ৩৫ শতাংশে পৌঁছয়। কারণ একটাই। পণ্যবাহী ট্রেনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছতে প্রচুর সময় নিয়ে ফেলে। আর অন্যদিকে উন্নত মানের হাইওয়ের কারণে ফ্রেইট সার্ভিসের প্রেফারড মিডিয়াম হয়ে ওঠে সড়কপথ। আর ঠিক এই ঘাটতি পূরণের জন্যই ফ্রেইট করিডোর বানানোর মতো একটা মেজর স্টেপ নেয় ভারত সরকার।
দেশের ইনফাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্টের জন্য প্রচুর ইনভেস্টমেন্ট করা হচ্ছে। ঝড়ের গতিতে উন্নত হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিনারিও। সুতরাং কয়লার চাহিদা বাড়ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কয়লা ট্রান্সপোর্ট করার বিষয়টা ইম্পরট্যান্ট হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কোন কিছুর জন্যই দেশের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্টকে কম্প্রোমাইজ করা যাবে না। অতয়েব, পণ্য পরিবহণের মাধ্যম হতে হবে ইজি অ্যান্ড ফাস্ট। ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডোরের গুরুত্বটা এখানেই। এতক্ষন শুনতে শুনতে নিশ্চয়ই আপনাদের মনে হচ্ছে যে এর ফলে সাধারণ মানুষের কী সুবিধা হতে চলেছে? এবার সেটা খোলসা করার পালা। সংক্ষেপে বললে বলব, এর ফলে সবচেয়ে বেশি বেনিফিটেড হবে এক্সপোর্টার্স, ইমপোর্টার্স, শিপিং লাইন্স, কন্টেইনার অপারেটর ইত্যাদি ক্ষেত্র। আর দেশের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে এত বড় একটা প্রোজেক্ট হচ্ছে সেখানে দেশের মানুষের কর্মসংস্থান হবে না? হবে। হতেই হবে। যে স্পীডে হাইওয়ে ডেভল্পমেন্টের কাজ চলছে, সেই একই স্পীডে ফ্রেইট করিডোর তৈরির কাজও চলছে। সুতরাং দেশের ইকনমিক্যাল গ্রোথ এখন রকেট স্পীডে এগবে এবং সেটা ঠেকানো যাবে না। আর তাছাড়াও যেহেতু পণ্যবাহী ট্রেনের জন্য ডেডিকেটেড ট্র্যাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে তাই প্যাসেঞ্জার ট্রেন এবং নিত্যযাত্রী- কাওকেই কোন দুর্ভোগটাও কমবে। ফ্রেইট ট্রেনের গতি বাড়িয়ে শুধু দেশের ইকোনমিক গ্রোথ এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই উদ্দেশ্য নয় ভারত সরকারের। এর পাশাপাশি পরিবেশে দূষণের মাত্রাও যাতে কমে, সেই ব্যবস্থাও নিয়েছে রেল। কীভাবে? প্রথম ৩০ বছরেই প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন টন কম কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের চ্যালেঞ্জ নিয়েছে রেলমন্ত্রক।
ইন্ডিয়ান রেলওয়েজের সঙ্গেই এই ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডোর ইন্ডিয়ান ইকোনমির ছবিটা পুরোপুরি বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কমবে ট্রান্সপোর্টেশন কস্ট। কারণ, প্রতিটা ট্রেন সাইমালটেনিয়াসলি ১৩০০ টন করে গুডস ক্যারি করতে পারবে। যেটা ট্রাকের মাধ্যমে বাই রোড করলে খরচ অনেক বেশি। আর তাছাড়া সড়কপথে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও বেশি। কিন্তু এত কিছুর পরেও ট্রেন দুর্ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে কি? ভারত সরকারের এই নয়া উদ্যোগ নিয়ে আপনাদের কি মতামত?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ।