Science & Technology
মহাশূন্যে মাসের পর মাস মহাকাশচারীদের টিকে থাকার সংগ্রাম করে যেতে হয়। খাদ্য সংকট তখন মহাকাশচারীদের কাছে খুব বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। যে কারণে মহাকাশচারীদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন আনাজের চাষ করেছিল পরীক্ষামূলকভাবে। তার মধ্যে যেমন রয়েছে লেটুস পাতা, কাঁচা মরিচ তেমনই রয়েছে মুলোর মতন সব্জি। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন কাজের জন্য ব্যবহার করার অনুমতি পায় না চিন। তাই নিজের সমস্যা নিজেই দূর করতে উঠেপড়ে লাগে শিংপিং-এর সরকার। সাফল্য যে আসে, সেটাও স্বাভাবিক। চিন তার নিজের দেশের মহাকাশচারীদের জন্য খাবারের সমস্যা মেটাতে চলেছে। তার জন্য মহাশূন্যে ফলিয়েছে ধান। খবরটা প্রকাশিত হতেই হইচই পড়ে যায় পশ্চিমি দুনিয়ায়।
তিয়াংগং মহাকাশ স্টেশনে মহাকাশচারীরা দেখিয়েছেন ধানের সফল উৎপাদন। এর নাম দেওয়া হয়েছে স্বর্গীয় ধান বা মহাজাগতিক ধান। ২৯ জুলাই এই ধানের বীজ দিয়ে পরীক্ষা শুরু করেছিল চিন। তাঁরা দেখেন, সেই বীজ থেকে জন্ম নেয় চারাগাছ। আর সেই চারাগাছ সাফল্যের সঙ্গে বড় হয়। উৎপাদন হয় নতুন বীজ। পরীক্ষা শুরু হবার পর দেখা গিয়েছে অঙ্কুর উচ্চতায় বেড়েছে ৩০ সেমি মতন, অন্যদিকে শিয়াও ওয়েই নামের বামন ধানের চারাগুলো বেড়েছে ৫ সেমি মতন। এখানেই বলে রাখি, ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে চিনের মহাকাশযান চ্যাং-৫ ২৩ দিন ধরে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করেছিল। সেই সময় রাখা হয়েছিল ৪০ গ্রাম মতন ধানের বীজ। উদ্দ্যেশ্য ছিল, মহাকাশে ধানের ওপর কেমন প্রভাব পড়ে সেটাই খতিয়ে দেখার। সেই নিয়ে গবেষণাও চালায় এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি। বর্তমানে ধানের চারাগুলি থেকে ধানের ফলন ঘটানো সম্ভব হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, ধানের বীজগুলি মাঠেও রোপণ করা হবে চাষের জন্য। যা ভবিষ্যতে মাটিতে চাষ করা হবে। চিনা গবেষকরা এই বিষয়েও নাকি যথেষ্ট আশাবাদী। কিন্তু পশ্চিমী সমালোচকরা চিনের এই প্রচেষ্টাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চাইছে।
পশ্চিমী সমালোচকরা চিনের এই মহাজাগতিক ধান উৎপাদনের ব্যপারটা খুব একটা ভালো চোখে দেখেন নি। তাঁদের বক্তব্য, মহাশূন্যে বিকিরণ চলে সবসময়। যে কারণে মিউটেশন ঘটলে বদলে যেতে পারে সেই ধানের চরিত্র। ফলে বিভিন্ন ধরণের রোগের আশঙ্কাও তাঁরা প্রকাশ করছেন। তাঁরা মনে করছেন, এই ধরণের চাল থেকে ভাত তৈরি করা হলে সেটা বিভিন্ন ব্যাধি ডেকে আনতে পারে মানব শরীরে। তবে এই ধরণের মন্তব্যকে খুব একটা গুরুত্বের চোখে দেখছে না জিংপিং-এর সরকার। এখানেই বলে রাখি, মহাকাশে বীজ পাঠানোর প্রক্রিয়া চিন চালিয়ে আসছে সেই ১৯৮৭ সাল থেকে। ব্লুমবার্গের তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, এখনো পর্যন্ত চিন প্রায় ২০০ প্রজাতির বীজ পাঠিয়েছে। তার মধ্যে যেমন ছিল টম্যাটো, কার্পাসের মত বেশ কিছু উদ্ভিদ। তবে যত যাই হোক, চিনের কোন একটি পদক্ষেপ বরাবরই পশ্চিমা দেশগুলির ভ্রু কুঁচকে রেখেছে। এর আগেও চিনা ল্যাবরেটরিগুলোর বিরুদ্ধে জটিল রোগ ছড়িয়ে দেবার অভিযোগ উঠেছে। ফলে চিনের এই ধরণের পদক্ষেপ ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। তবে যত যাই হোক, দিনের শেষে যে সাফল্য এসেছে তাকে তো অস্বীকার করার জায়গা নেই। আর যদি চিনের এই গবেষণা ভবিষ্যতে আরও সাকসেসফুল হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে চিনের কৃষি অর্থনীতির জন্য সেটা মাইলস্টোন তৈরি তো করবেই।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ