Sports
২০০৭ সালে ১৬ টা টিম ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ খেলেছিল। ২০২৩-এ ওয়ার্ল্ড কাপ খেলছে ১০ টা টিম।
ওদিকে ২০০৬-এ ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ খেলেছিল ৩২ টা দল। ২০২৬-এ খেলবে ৪৮ টা। যেখানে ফুটবল ওয়ার্ল্ডকাপে পারটিসিপ্যন্ট বাড়ছে, সেখানে ক্রিকেট স্রিঙ্ক করছে কেন?
ক্রিকেট। যা নিয়ে আমাদের ক্রেজ ছিল, আছে, থাকবেও। ক্রিকেটের প্রতি ভারতের যা ক্রেজ আছে, পৃথিবীর অন্য কোন দেশের বোধ হয় তার সিকিভাগও নেই। ব্রিটিশরা অনেক কিছু না করার মধ্যে একটা কাজের কাজ করেছে। আমার, আপনার মতো হুজুগে মানুষের মাথায় ক্রিকেটের ভুত ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। এবছর আবার আমাদের দল ফাইনালিস্ট। কাজেই উন্মাদনা বলুন বা যাই বলুন- সেটা ডবল। নীল জার্সিতে অপ্রতিরোধ্য টিম ইন্ডিয়া। ময়দানে দামাল ছেলেদের কামাল করা পারফরম্যান্স। গ্রুপ পর্বে, ৯ টা ম্যাচের ৯ টাতেই জয়। এরপর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালের গ্রাউন্ড থেকে স্ট্রেট টিকিট টু ফিনালে। এবার মুখোমুখি ইন্ডিয়া অস্ট্রেলিয়া।
২০১১-র পর আবারও ওয়ার্ল্ড কাপ হোস্ট করছে ভারত। হিস্ট্রি রিপিটস ইটসেলফ যদি সত্যবচন হয়, তাহলে…। এই দেশের গলিতে গলিতে ক্রিকেটার- তারা উঠতে বসতে স্বপ্ন দেখে কেউ ভিরাট কোহলি হওয়ার, কেউ ধোনি হওয়ার কেউ আবার মহম্মদ শামি হওয়ার। আসলে ক্রিকেট আমাদের কাছে নিছক একটা গেম নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। আর সবচেয়ে বড় কথা এই দেশের ইকনমির এপিসেন্টার এই ক্রিকেট। আর সেই ক্রিকেট নিয়ে দেশবাসীর এতটুকু উন্মাদনা থাকবে না? ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা দেশবাসীর, ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা ক্রিকেট বোর্ডের। ঠিক কেন ক্রিকেটের এই ক্রেজকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়? ভারত বা যেকোনো দেশের জন্য কতটা ইম্পরট্যান্ট ক্রিকেট? জিওপলিটিক্যাল গ্রাউন্ডে ক্রিকেটের ঠিক কতটা গুরুত্ব আছে? সেটাই বলব আজকের প্রতিবেদনে।
লোকে বলে ঐ ২২ গজে নাকি স্কিল ছাড়া বাকী সব গৌণ। কিন্তু বাস্তবটা অন্য। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ক্রিকেট হচ্ছে উন্নয়নশীল বিশ্বে একটা সফট পাওয়ারের সংকেত। আর এই মুহূর্তে ভারত সেখানে রাজা। আপানারা কী জানেন, শুধুমাত্র বিশ্বকাপ থেকেই ভারতের কোষাগারে আশে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার? জোন বেসিসে ক্রিকেটের আবার আলাদা আলাদা গুরুত্ব। এই যেমন দক্ষিণ এশিয়া এবং ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্রিকেট মানে একটা পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার। দক্ষিণ এবং পূর্ব আফ্রিকায় এটা আবার মর্যাদার প্রতীক। আর আফগানিস্তানে বেঁচে থাকার রসদ।
তবে, বিগত ১০ বছরে টিম আফগানিস্তানের মারকাটারি পারফরম্যান্স একটা লাউড মেসেজ দিয়েছে বিশ্ববাসীকে। উদাহরণ তৈরি করেছে আফগানিস্তান। খেলার প্রতি তাদের ডেডিকেশন শিখিয়েছে, এভাবেই ফিরে আসতে হয়। সেখানে এখন তালিবানি শাসন। বদলেছে পতাকা, বদলেছে জাতীয় সঙ্গীত, বদলেছে শিক্ষানীতি, বদলেছে জীবন-যাপনের স্টাইল। বদলায়নি ক্রিকেটের প্রতি আফগানদের ক্রেজ। আজও অকপটে তারা পুরনো পতাকা উড়িয়ে, পুরনো জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে খেলা শুরু করে। হয়তো তালিবানি হাতছানি থেকে শতহস্ত দূরে আছে বলেই এখনও তারা অপ্রতিরোধ্য। অনেকেই বলতে পারেন, যে দেশে ১০ শতাংশ মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার, তাদের ক্রিকেট খেলাটা বিলাসিতা। কিন্তু ১০ লাখেরও বেশিবার ভুমিকম্পে বিধ্বস্ত হওয়া দেশটা কেন ক্রিকেটকে আঁকড়ে ধরে আছে, ভেবে দেখেছেন? আসলে উন্নয়নশীল বিশ্বে ক্রিকেটের যে ঠিক কতটা গুরুত্ব রয়েছে, সেটা আফগান ক্রিকেটাররা হারে হারে টের পাচ্ছে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে তারা ক্রিকেটকে প্রমোট করার মেসেজ দিচ্ছে গোটা বিশ্বকে। যদিও আল্টিমেট কাজটা করবে আইসিসি।
কিন্তু বিসিসিআই-এর অঙ্গুলিহেলন ছাড়া আইসিসি এক পাও নড়ে না। শুধু বিসিসিআই নয়। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং ভারতের ক্রিকেট বোর্ডই এই আইসিসি-র হর্তা-কর্তা-বিধাতা। ২.৫ বিলিয়ন রেভিনিউ-এর ৫৭২ মিলিয়ন ডলারই আসে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কোষাগারে। কেন? কারণ কমার্শিয়াল ইনফ্লুয়েন্স হিসেবে আইসিসি-কে সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট করে বিসিসিআই। ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে অ্যাডভারটাইজমেন্ট তোলে বিসিসিআই। যার জ্বলন্ত উদাহরণ আইপিএল। আইপিএল থেকে যে পরিমাণ স্পন্সরশিপ পাওয়া যায়, যে পরিমাণ টাকা রোজগার হয়- সেটা অকল্পনীয়। যেটা প্রভাইড করে বিসিসিআই। ক্যাল্কুলেশন করে দেখতে গেলে ক্রিকেটের ইকোনমিতে বিসিসিআই-এর কন্ট্রিবিউশন ৭০-৮০%।
বললে বিশ্বাস করবেন না হয়তো, ক্রিকেটকে অলিম্পিকে জুড়তে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। আর এর পিছনেও রয়েছে বিসিসিআই-এর হাত। বিসিসিআই কখনই চায়নি তাদের একাধিপত্যে থার্ড পার্টি আসুক। আপনাদের প্রশ্ন থাকতেই পারে, কিন্তু কেন? অলিম্পিকে ক্রিকেট জুরলে তো ভারতের জন্য একটা সোনার পদক থাকতই। এতে তো লাভ বৈ ক্ষতি কিছু নয়। কিন্তু না! আসলে ক্রিকেট যদি অলিম্পিকের লিস্টে এনলিস্টেড হয়- তাহলে আইসিসি-র কোন ডিসিশন নিতে অলিম্পিক বোর্ডের মতামত প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বিসিসিআই-এর ভ্যালু ডাইলুট হয়ে যেত। আর ভারতের জন্য, ভারতবাসীর জন্য এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের জন্য ক্রিকেট ঠিক এতটাই ইম্পরট্যান্ট। তাই এত প্রশ্রয়, তাই এত উন্মাদনা।
ইকনমিক্যাল গ্রাউন্ডে তো বটেই। জিপলিটিক্যাল গ্রাউন্ডেও ক্রিকেট যে টিক কতটা ইম্পরট্যান্ট সেটা বুঝতে পেরেছে আমেরিকা বা চীনের মতো উন্নত দেশগুলো। সেখানেও প্রমোট করা হচ্ছে ক্রিকেটকে। কেউ আবার অন্য দেশের ডলে ইনভেস্ট করছে। আফটারঅল সফট পাওয়ারের সাইন বলে কথা! ইগনোর তো করা যায় না। ক্রিকেটকে অলিম্পিকের সঙ্গে জুড়লে অনান্য দেশও এর পাওয়ারটা বুঝত। আরও আগে থেকে এই গেমকে প্রমোট করার কথা ভাবত। আর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার না হয়ে ক্রিকেটার হতে চাই বললেও সোসাইটি তাকে একইরকমভাবে অ্যাক্সেপ্ট করত। ২০২৮ সালের অলিম্পিকে এনলিস্টেড ক্রিকেট। এখন আগামীতে আরও অনেক ডেভলপমেন্টের আশায় ক্রিকেটভক্তরা। ভিডিওটি ভালো লাগলে লাইক ও শেয়ার করুন। নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যালেন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।