Start-Up Business
লেদার ইন্ডাস্ট্রি আমাদের দেশে কতটা বড় বলুন তো? হাল ফ্যাশানের যে জুতো পরেন, অথবা কাঁধে যে স্টাইলিশ ডিজাইনের বিভিন্ন ব্যাগ থাকে সবই লেদার দিয়েই তৈরি। বাটা হোক বা ক্রকস, গুচ্চি হোক বা প্রাদা। হরেক জিনিসের হরেক দাম, কিন্তু একটাই কমন আর সেটা হল চামড়া। আপনারা জানেন কিনা জানি না। দেশি, বিদেশি যে বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো রয়েছে এদের কাছে বড় বিশ্বাসের জায়গা হচ্ছে আমাদের ভারত। স্পেশ্যালি আমেরিকা এবং ইউরোপ তো বটেই। কারণ এসব জায়গায় লেদার এক্সপোর্ট করে সবথেকে বেশি ভারত। আর আপনারা কি জানেন, ভারত যত লেদার এক্সপোর্ট করে তার ৫০% আবার তৈরি হয় খোদ আমাদের বাংলায়! এমনকি চাইলে আপনি নিজেও এই ব্যবসায় নামতে পারেন। বর্তমান যা পরিস্থিতি আর ভবিষ্যৎ যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে ফ্যাশান ইন্ডাস্ট্রি আয়তনে আরও বৃহৎ হবে। তার জন্য প্রয়োজন পড়বে লেদারের। যার ফায়দা তুলতে পারবেন আপনিও। মুনাফাও করতে পারবেন ভালোরকম। কিভাবে? বলব সেটা আজকের প্রতিবেদনে।
লেদারের মানিব্যাগ বা লেদারের জ্যাকেট বা লেদারের বেল্ট কেনার চাহিদা গোটা বিশ্বে ভালোরকম। আর লেদার দিয়ে বাল্কে বিশাল পরিমাণ এই সকল পণ্য তৈরি হয় কোথায় জানেন? ধারাভি বস্তিতে। ভারতের নানান প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন এই ধারাভি বস্তিতে। কারণ লেদারের রমরমা মার্কেট রয়েছে এখানেই। এখান থেকে তাঁরা ভালোরকম পরীক্ষা নিরিক্ষা করে পছন্দমতন মেটেরিয়াল নিয়ে যান তারপর সেটা চলে যায় বিক্রির উদ্দ্যেশ্যে। কিন্তু ধারাভিতে যে লেদারের বিভিন্ন পণ্য তৈরি হয় সেই লেদারের জোগান অনেকটা দিয়ে থাকে কোন রাজ্য? আমাদের বাংলা। একটা সময় বলা হয়েছিল যে, কলকাতার মত শহরে কোনভাবেই ট্যানারি রাখা যাবে না। ফলে হাইকোর্টের আদেশ মেনেই রাজ্য সরকার সকল ট্যানারি টেনে নিয়ে যায় বানতলায়। রাজ্য সরকার মনে করে যে, এই সকল ট্যানারি যদি আগের মতন কর্মদক্ষ থাকে, তাহলে ৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হওয়াটা কিন্তু একেবারেই বিচিত্র নয়। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, সেই লক্ষ্য অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।
আপনাদের স্মরণ করাই যে, একটা সময় ছিল যখন লেদারের সঙ্গে পুরোপুরি জড়িয়ে থাকত কানপুরের নাম। একটা সময় ছিল যখন দেশের ম্যাক্সিমাম লেদার এক্সপোর্ট করা হত এই কানপুর থেকেই। কিন্তু সত্যি বলতে কী, লেদার ইন্ডাস্ট্রি যেখানে দূষণ সেখানে। ফলে গঙ্গা ধীরে ধীরে অতি দূষণের গ্রাসে পড়ে যাচ্ছিল। আগ্রাসী দূষণের কারণে তাই একে একে প্রত্যেকটা লেদার ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপরেই ঘুরে যায় বাংলার ভাগ্য। কারণ কানপুর থেকে নাকি ৪০-টার বেশি লেদার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি শিফট করে চলে এসেছে বাংলায়। ফলে অন্যান্য রাজ্য থেকেও পরিযায়ী শ্রমিকরা এখন লেদার ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটে কাজের আশায় চলে আসছেন বাংলায়। যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, প্রায় শতাধিক ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রি আজ চলে এসেছে এই বাংলার বুকে মানে বানতলা লেদার কমপ্লেক্সে। সেখানে তারা রীতিমত জমি নিয়ে প্রোডাকশন শুরু করে দিয়েছে। ফলে বাংলার সরকার এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। কয়েক মাস আগের খবর বলছি। সেই সময় নাকি এখানে ২৮৬৫ টাকা পার স্কোয়ার মিটারে জমি দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। ফলে ট্যানারিজের সংখ্যা বেড়েছে। এবং এখন সেই নম্বরটা দাঁড়িয়েছে প্রায় চারশো-র বেশি। স্বাভাবিকভাবেই ২১৫টির বেশি ছোট বড় কোম্পানি এখন কাজ করছে এই বানতলার লেদার কমপ্লেক্সকে কেন্দ্র করে। আর কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ যদি আসেই, তাহলে বলতে হবে, ঐ যে বললাম শুধু লেদার ইন্ডাস্ট্রিকে ঘিরেই প্রায় লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। আর অদূর ভবিষ্যতে সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এবার আসি আপনার কথায়। মানে যারা স্টার্ট আপ করতে চান আর এই লেদার ইন্ডাস্ট্রিকে কেন্দ্র করেই। মানে আপনি যদি এখন লেদারের ব্যাগ, ওয়ালেট বা বেল্টের মত পণ্য তৈরি করে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের পা গলাতে চান তাহলে বলি যে এই সুযোগ মিস করবেন না।
তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন কারিগর। যারা এই লেদারের বিভিন্ন পণ্য তৈরি করতে ওস্তাদ। অবশ্যই সেটা ট্রেন্ডি এবং হালফ্যাশানের হতে হবে। তাই লটে বা পাইকারি রেটে যদি চামড়া কিনে আনেন এবং সেই চামড়া দিয়ে এই ধরণের পণ্য তৈরি করতে পারেন তাহলে কিন্তু বিভিন্ন বড় বড় ব্র্যান্ডে আপনার পণ্য বিক্রি হতে পারে। আর যদি নিজেও ব্যক্তিগত ভাবে লেদারের তৈরি পণ্য বিক্রি করতে চান, তাহলে বিভিন্ন অনলাইট মার্কেটিং সাইট যেমন মিন্ত্রা, অ্যামাজনের মত সাইটে গিয়ে আপনি লেদারের সেই সকল জিনিস বিক্রি করতে পারেন এবং সাকসেসফুলি নিজের একটা স্টার্ট আপ রান করাতে পারেন। প্রাথমিক পুঁজি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে আর চিন্তা থাকবে না। কারণ ঐ যে বললাম। ফ্যাশান ইন্ডাস্ট্রি দিনে দিনে আগ্রাসী হয়ে উঠছে। ফলে লেদার পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে ভালোরকম। আপনার মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন। আর নতুন হলে ভুলবেন না সাবস্ক্রাইব করতে আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ