Tourism
উত্তরবঙ্গ বললেই প্রথমে মাথায় আসে একটাই নাম, আর সেটা দার্জিলিং। কিছু কিছু ভ্রমণপ্রেমী মানুষ অবশ্য কার্শিয়ং, কালিম্পং-এও ঝটিকা সফর সেরে আসেন। অবশ্য এখন ডিজিটাল জমানায় পাহাড়ের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা বহু অজানা গ্রামের খোঁজ আমরা পেয়ে যাই। কিন্তু চাইলেই কি আর সেসব জায়গায় আমরা যাই? তবু অচেনা, অজানা নিখাদ বন্য পাহাড়ি আবহাওয়ায় নিজেকে মানিয়ে নিতে কার না ভালো লাগে? তাই আজ আপনাদের এমনই একটি জায়গায় ঘুরিয়ে নিয়ে আসব। যেখানে দার্জিলিং বা কার্শিয়ং টাউনের মত ভিড় পাবেন না। বরং পাহাড়ি প্রকৃতি এক নির্জন কোলে কয়েকটাদিন স্বচ্ছন্দে কাটিয়ে আসতে পারবেন। জায়গার নাম শিবখোলা। শিবখোলা অবস্থিত কার্শিয়ং-এ। বলতে গেলে এই কার্শিয়ং থেকে একটু ভেতরের দিকে অফবিট একটি জায়গার নাম হল এই শিবখোলা। কেন এই নাম, থাকা খাওয়ার খরচা কত এই সবই আপনাদের ডিটেলে বলব। জানতে হলে প্রতিবেদনটি দেখুন শেষ পর্যন্ত।
এনজেপি স্টেশনে নামার পর অধিকাংশ যাত্রীদের ভিড় থাকে চিরাচরিত দুটো জায়গা দার্জিলিং এবং কালিম্পং। এছাড়া সিকিমে যাবার ভিড়ও খুব একটা কম থাকে না। কিন্তু এটা তো সত্যি যে, যেখানে টুরিস্টদের পা পড়ে বেশি সেই সকল জায়গাই আসলে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে লোকমুখে। যাকে বলা যেতে পারে মাউথ পাবলিসিটি। কিন্তু আজ আপনাদের বলব, এনজেপি বা শিলিগুড়ি স্টেশনে নামার পর এইসব পরিচিত জায়গায় যাবেন না। বরং তার বদলে গাড়ির অভিমুখ ঠিক করুন সরাসরি শিবখোলার দিকে। আচ্ছা, একটা বিষয়। স্টেশনের বাইরে প্রচুর শেয়ার গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। আপনাদের সুবিধের জন্য জানিয়ে রাখি। একটা গোটা গাড়ি চাইলেই ভাড়া নিতে পারেন। কিন্তু শেয়ার কারেও আপনার পক্ষে পৌঁছনো সম্ভব শিবখোলায়। এখন আপনার মনে হতে পারে, আরে এতো জায়গা থাকতে কেন শিবখোলায় গিয়ে থাকতে যাব? এর উত্তরটা দেওয়া যাক।
শিবখোলা জায়গাটার একটা মাহাত্ম্য রয়েছে। সেটা পরে বলছি। আগে এই জায়গার প্রকৃতি নিয়ে দু’একটা কথা সেরে নিই। দেখুন, উত্তরবঙ্গে মানুষ আসে কেন? শহরের ক্যাকোফনি, পলিউশন বোরিং দিনলিপি থেকে খানিক নিষ্কৃতি পেতে- তাই তো নাকি? আর দার্জিলিং বা কালিম্পং মানে সেখানেও মানুষের ভিড় ভয়ঙ্কর। সন্ধ্যেবেলা ম্যালের রাস্তায় হাঁটলে মনে হবে যেন কোন দুর্গা পুজোর প্যান্ডেল দেখতে এসেছি। তা এই ভিড় আবার অনেকের এক্কেবারে না-পসন্দ। আর যে কারণে অনেকেই চান, উত্তরবঙ্গের এমন একটি জায়গায় থাকতে যেখানে সন্ধ্যে হলেই নিঝুম হয়ে পড়ে চারপাশ। কানে ভেসে আসে অদূরে বয়ে যাওয়া পাহাড়ি নদীর স্রোত ভাঙার শব্দ। সকাল বেলাতেও শোনা যায় অজানা বুনো পোকার ডাক। সন্ধ্যেবেলা যে ডাক আরও বেড়ে যায়। চারিপাশে পাহাড়। পাহাড়ের বুকে জঙ্গল আর অদূরেই এক পাহাড়ি নদী। নির্জন সময় কাটানোর জন্য একেবারে পারফেক্ট প্লেস। এই সবকিছুই আপনি পেয়ে যাবেন যদি আসেন শিবখোলায়। শিলিগুড়ি থেকে মাত্র ৩০ কিমি দূরে অবস্থিত এই বন্য পাহাড়ি জায়গাটা সবদিক থেকে যেন আলাদা। মানুষের ভিড় বর্জিত একটি প্লেস। হ্যাঁ, ঠিক যে তেমন একটা মানুষের পা পড়ে না এখানে। কিন্তু তাই বলে পর্যটকদের কোনরকম অসুবিধা হবার কথা নয়। কারণ, এখানে রয়েছে থাকা-খাওয়ার সু-বন্দোবস্ত। রয়েছে শিবখোলা অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্প। যেখানে রয়েছে ডিলাক্স রুম। থাকা-খাওয়া নিয়ে খরচ মাত্র ১৫০০ টাকা। আচ্ছা, আরেকটা বিষয়। এখানকার অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পে পর্যটকদের জন্য রয়েছে বন ফায়ারের সুবিধে। সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পে থাকলে পর্যটকদের জন্য কাঠের উনুনে রান্নার ব্যবস্থা করা রেখেছে। আহ, আর কী চাই বলুন না!
যে গুটিকয়েক মানুষ এই জায়গার খোঁজ পান, তাঁরা কিন্তু আর উত্তরবঙ্গ সফরে তেমন ভাবে দার্জিলিং, কালিম্পং-কে ঘুরতে যাওয়ার লিস্টে রাখেন না। কারণ শিবখোলা তাঁদের জন্য একেবারে পারফেক্ট প্লেস। পাহাড়ি বুনো নির্জনতায় ডুব দিতে চাওয়া পর্যটকরা তাই চাইলেই চলে আসেন এখানে। তেমনই কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল বিজনেস প্রাইম নিউজের প্রতিনিধির। কলকাতার পাটুলি থেকে তাঁরা এসেছেন। যেখানে গাড়ির শব্দ, ধোঁয়া এবং ধুলোর মধ্যে দিন কাটাতে হয় সেখানে শিবখোলার মতন জায়গা তো কোনদিক থেকে স্বর্গের চেয়ে কম নয়। এবার ঘুরতে আসা এই পর্যটকরা কী বলছেন, সেটা আমরা বরং জেনে নিই।
আচ্ছা আরেকটা বিষয়। শিবখোলা অন্য আরেকটি কারণের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটা বার্ড ওয়াচার্সদের জন্য। যারা পাখিপ্রেমী তাঁর চাইলে ক্যামেরায় জুম লেন্স নিয়ে কিন্তু এখানে ঠায় বসে থাকতে পারেন। একটু অপেক্ষা করলেই দেখা মিলবে বিভিন্ন ধরণের পাখির। বিভিন্ন ধরণের উডপেকার, কিংফিশার বা মাছরাঙার দেখা আপনি হামেশাই পেয়ে থাকবেন। আচ্ছা, এবার বলি, কেন জায়গার নাম হল শিবখোলা। কারণ এই পাহাড়ে একটি পুরনো শিবের মন্দির রয়েছে। স্থানীয় পাহাড়ের মানুষরা এই মন্দিরে যাতায়াত করেন। তাঁদের বিশ্বাস এই মন্দিরে অধিষ্ঠিত শিব খুব জাগ্রত। তিনি আজও রক্ষা করে চলেছেন পাহাড়ের মানুষদের।
যাই হোক, ধর্ম এবং ভক্তিভাব সম্পূর্ণ নিজের নিজের বিষয়। কিন্তু নির্জন প্রকৃতির নিখাদ প্রেমে পড়তে চায় না এমন মানুষ মনে হয় নেই। তাই কলকাতায় বড়সড় ছুটি পেলেই তো আপনারা উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং বা কালিম্পং-এ হানা দেন। এবার না-হয় স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে চলে আসুন শিবখোলায়। ভেবে দেখুন, পাহাড়-নির্জন বন্য প্রকৃতি- আর পাহাড়ি নদী। আপনাদের ছুটির মেজাজ কোনভাবেই নষ্ট হবে না।
অরূপ পোদ্দার
শিবখোলা