Tourism
পৃথিবীতে আর যা কিছু ঘটে যাক, মানুষ আজ অবধি না কোনোদিন কাঞ্চনজঙ্ঘার ডাক অস্বীকার করতে পেরেছে না পারবে। শীতকাল! আর শীতকাল মানেই নাকে, বুকে আর পায়ে সর্ষের তেল মেখে সোজা পাহাড়। মধ্যবিত্ত বাঙালির সস্তায় সাহেবি ভ্রমণের ঠিকানা দার্জিলিং। কিন্তু প্রতি বছর দার্জিলিং ঘুরতে গিয়ে আপনিও নিশ্চয়ই বিরক্ত? তাই নতুন একটা অফবিট স্পটের খোঁজ নিয়ে এসেছি আমরা।
বানকুলং। নামটা খটমট, কিন্তু জায়গাটা ফাটাফাটি। মিরিক থেকে ঐ ১৫-১৬ কিলোমিটার মতো দূরত্বে ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। সবুজে-সবুজ চারপাশ। পাহাড়, জঙ্গল, পাখি, নদী- কী নেই সেখানে। ঈশ্বর যেন সবটুকু সৌন্দর্য দিয়ে ঢেলে সাজিয়েছেন উত্তরবঙ্গের এই মডেল গ্রামকে।
কীভাবে যাবেন? আসলে পাহাড়ের স্থানীয়রা বানকুলংকে ব্যবহার করেন এগ্রিকালচারাল ল্যান্ড হিসেবে। বাজরার চাষের জন্য এই অঞ্চল বেশি জনপ্রিয়। ধাপে ধাপে পাহাড় কেটে চাষ করেন স্থানীয়রা। দেখলে মন জুরিয়ে যাবে। আর এখানে যেতে গেলে আপনাকে এ মিরিক গ্রাম হয়েই যেতে হবে। এনজেপি থেকে মিরিক হয়ে বানকুলং মাত্র ৫০ কিমি। এনজেপি অথবা তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস থেকে আপনি শেয়ার গাড়িতে মিরিক আসতে পারেন। এরপর সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে বানকুলুং।
রাতে থাকা- খাওয়ার কোন চিন্তা নেই। রয়েছে প্রচুর হোম স্টে। তবে জঙ্গলে ক্যাম্পে থাকার মজাই আলাদা। হ্যাঁ! হয়তো পাঁচতারা হোটেলের স্যুটে থাকার অনুভূতি নেই। কিন্তু এখানে জঙ্গল ক্যাম্পে থেকে আপনি যেটা পাবেন, সেটা সারাজীবনের অ্যাসেট। একেবারে প্রকৃতির মাঝে রয়েছে কটেজ। ঠিক তাঁবু নয়, কিন্তু তাঁবুর মতো অনুভুতি হবে আপনার। বালাসন নদীর ধার বরাবর ট্রেকিংয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে। কম উচ্চতার ট্রেকিং, সার্ভাইভাল ক্যাম্প, নেচার ক্যাম্পেরও সুযোগ রয়েছে।
এখানে শহুরে কোলাহল নেই। ট্রাফিক জ্যামের বালাই নেই। সকালে ওঠো রে, টিফিন প্যাক করো রে, ১০ টা ৫ টার রুটিনে বাঁধন- এখানে এসব কিছু নেই। আছে বলতে শুধুই চোখের আরাম। মনরম সবুজ, কুয়াশা মাখা ভোর আর মনের শান্তি। নদীর শীতল জলে পা ডুবিয়ে আর পাখিদের কলতানে কখন যে বেলা গড়িয়ে যাবে টেরই পাবেন না। ফটোগ্রাফারদের কাছে এ যেন এক স্বর্গ।
বছরের যেকোনো সময় এখানে আসা যেতেই পারে। তবে, বর্ষার সময়টায় একটু এড়িয়ে চলাই ভালো। পাহাড়ের রাস্তা, রিস্ক বেশি। তবে অ্যাডভেঞ্চারের ইচ্ছে থাকলে সেটা অন্য কথা। বর্ষার বানকুলং-ের আবার অন্যরূপ। বালাসন আর মুরমাহ নদী ঘেরা পাহাড়ের এই ছোট্ট গ্রাম বছরের ঐ সময়টায় কোন মায়ানগরীর থেকে কম কিছু নয়।
অরূপ পোদ্দার
মিরিক