Tourism
জম্মু-কাশ্মীরে কি আদৌ পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে?
মোদী জমানায় কেন ধীরে ধীরে ফিকে হচ্ছে পর্যটন ব্যবসা?
মোদী ম্যাজিক তাহলে কি বিদেশি ট্যুরিস্ট টানতে ব্যর্থ?
প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেন উদ্বেগ নিয়ে চিঠি দিচ্ছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা?
তাহলে কি ট্যুরিজম শিল্পে বিজেপি সরকার কার্যত ফেল?
আসলে এতগুলো প্রশ্ন তৈরি হবার অনেক কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী মোদী যখন বিদেশে যান তখন সেই দেশের ইন্ডিয়ান ডায়াসপোরাদের বারবার তিনি উৎসাহ দিয়েছেন ভারতে আসার। একইভাবে মোদী বলেছেন যেন তাঁরা বাকিদের উৎসাহিত করেন ভারতে এসে অমূল্য ভারতকে নিজের চোখে দেখার। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে, এতোকিছুর পরেও কেন টিমটিম করছে পর্যটকদের সংখ্যা মানে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা? এদিকে আপনারা যদি দেখেন, তাহলে ইন্ডিয়ান ট্যুরিস্টদের সংখ্যা তো কম নয়। মানে ভারতীয়দের বিদেশে ঘুরতে যাবার ধুম ভালোরকম রয়েছে। কিন্তু বিদেশ থেকে আসছেন না কেউ। তাঁরা কোথায় যাচ্ছেন? মালদ্বীপ যাচ্ছেন, শ্রীলঙ্কা দেখছেন বা অন্য পড়শি দেশেও তাঁরা যাচ্ছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁরা আসছেন না ভারতে। ফলে বিদেশি পর্যটকদের আগমনে যে ভালোরকম ডাউনফল দেখা দিল তার কারণ কী? তাহলে কি বিদেশিরা ভারতে আসতে নারাজ? নাকি বিজেপির ব্যর্থতা- ভারতকে সেভাবে তুলেই ধরতে পারে নি এই দল।
ইন্ডিয়ান ট্যুরিজম স্ট্যাটিসটিক্সের একটা রিপোর্ট থেকে আমরা জানতে পারছি, ২০২৩ সালে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশে ভিজিট করেছেন প্রায় ৮৪ লক্ষ ভারতীয়। ঘুরতে যাওয়ার ডেস্টিনেশন লিস্টে সবসময় থাকে ইউনাইটেড আরব এমিরেটস, সৌদি আরব, আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ব্রিটেন, কাতার, কুয়েত, কানাডা এবং ওমান। এবং ভারতীয়দের ঘুরতে যাবার সংখ্যাটা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে বিদেশিদের আসার ঢল নেমেছে বেনজির। কি রকম? ২০১৯ সালে দেশে মোট বিদেশি পর্যটকরা এসেছিলেন ৩.১৪ কোটি মতন। তবে বছর যত ঘুরেছে ততই যেন কমছে পর্যটকদের সংখ্যা। কারণ ২০২২ সালে ৮৫.৯ লক্ষ বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা কমে গিয়েছে। এটা যে এমন একটা মেজর ডাউনফল সেটা আর চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর প্রয়োজন নেই। আর যে কারণে রীতিমত চিন্তায় পড়েছেন ট্যুর অপারেটর, ট্র্যাভেল এজেন্টরা। পরিস্থিতি এতটাই বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে যে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এই সমস্যার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেন দেশে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা ক্রমশ কমছে? তার কয়েকটা কারণ খুব উদ্বেগের। প্রথমেই উঠে আসছে প্রশিক্ষণের বিষয়। বিদেশি পর্যটকরা ভারতে এলে যে রীতিমত ফলো আপ রাখা, সেটা কিন্তু প্রশিক্ষণের অভাবের জন্য সমস্যা দিনে দিনে আরও চওড়া হচ্ছে। অতএব তাঁদের জন্য ইমিডিয়েট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, যেটায় বিজেপি সরকার একেবারে ফেল বলেই জানাচ্ছেন অনেকে। তার জন্য মিনিমাম একটা বছর প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে বলেই অনেকে মনে করছেন। একইসঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিজেপি সরকারের একটা বড় সিদ্ধান্ত। কিরকম? বিদেশি পর্যটক মারফৎ ট্যুর অপারেটররা যে আয় করছেন, সেই আয়ের ওপর থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ইনসেন্টিভ। এটাও একটা নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট তৈরি করছে। আর অন্য একটা বিষয় হল, কেন্দ্রীয় সরকার এখনো পর্যন্ত কোনরকম ফান্ডিং বাড়ায় নি। মানে ট্যুরিজম সেক্টরকে পুশ করার জন্য কেন্দ্র যে টাকা বরাদ্দ করে, সেটা অনেকটাই কম। একইসঙ্গে প্রচারের জায়গাটাও অনেকটাই ল্যাক রয়েছে। অর্থাৎ বিদেশি পর্যটকদের ভারতে টানার জন্য যা যা প্রোমোশনের দরকার, তার কোনটাই নাকি ভারত সরকারের তরফ থেকে সেভাবে গাঁ ঝাড়িয়ে করতে দেখা যায়নি। তাই এখন তাঁদের দাবি ন্যাশনাল ট্যুরিজম বোর্ড তৈরি করা হোক। সেটা অন্তত কিছুটা হলেও দিশা দেখাতে পারবে। খেয়াল রাখবেন, ভারতে সবথেকে বেশি ঘুরতে আসেন কোন কোন দেশের ট্যুরিস্ট ? ২০২২ এর রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে আমেরিকা, বাংলাদেশ, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, জার্মানি, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া থেকে পর্যটকরা বেশি এসেছেন। কিন্তু বছর ঘুরতেই এমন হাল?
তবে পর্যটন সেক্টর যে ধুঁকছে সেটাকেই বেদবাক্য মনে করার কোন কারণ আপাতত নেই। কারণ উৎসবের মরশুম প্রায় শেষের পথে। ফলে ভারতে পর্যটন ব্যবসার এটাই আদর্শ সময়। অনেকেই বলছেন, প্লেনের টিকিট ফেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি, ট্যুরিজম সেক্টরে জমজমাট হোটেল রুম, ট্যুর গাইডের ব্যস্ততা এসব ট্যুরিজম সেক্টর যে চাঙ্গা সেদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, ২০২৩-২৪ ফিনানশিয়াল ইয়ারে নাকি পর্যটনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে ৩০% মতন। আয়ের অঙ্ক বাড়বে আগের থেকে ১৮% বেশি। তারপর তো আবার রাম মন্দিরের ইমপ্যাক্ট ২০২৪-এ রয়েছেই। উদ্বোধনকে আন্তর্জাতিক মানের করা হচ্ছে, যাতে পুরো পৃথিবীর নজর সেই দিনে সেখানে থাকে। কিন্তু সত্যি বলতে কি আদৌ এই বিষয়গুলো পর্যটন সেক্টরকে কোনভাবে বুস্ট করবে? কারণ দেশের মানুষ বিদেশে যাচ্ছেন সেটা যেমন ঠিক, তেমনই বিদেশি পর্যটকদের দেশে আসাটা প্রয়োজন। না হলে ট্যুরিজমের মত বড় শিল্প যদি ধাক্কা খায় তাহলে চাপে পড়বেন অনেকে। বর্তমানে প্রায় ১৭৮ বিলিয়ন ডলার আয় হয় পর্যটন থেকে। ২০২০ সালেই ৭৯ মিলিয়নের বেশি মানুষ পড়বেন সংকটে। তাঁদের দিকে তাকিয়েই তো ব্যবস্থা নিতে হবে নাকি? মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক, শেয়ার মাস্ট। আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ