Tourism
আজ যে শহর তমলুক, কাল সে ছিল তাম্রলিপ্ত। প্রাচীন এই শহর ইতিহাসে ঠাসা। ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে এখানেই এসেছিলেন বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং। সেই উল্লেখ আমরা পেয়ে থাকি। উল্লেখ রয়েছে তাম্রলিপ্ত বন্দরের। একদিন এই তাম্রলিপ্ত বন্দর ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের হাব। তবে সময়ের জাম্প কাটে তাম্রলিপ্ত বা তমলুক হারিয়েছে তার জৌলুশ। কিন্তু এই শহর নিয়ে তো মাতামাতি হওয়া উচিৎ ছিল। অন্তত পর্যটন দফতরের সেই খেয়াল রাখা উচিৎ ছিল নাকি? আর এখানে তো পর্যটন দফতর নজর দিলে আরও বেশি করে এই জেলার ইকোনমি জেনারেট হতে পারে। কারণ এখানেই তো রয়েছে বর্গভীমা মন্দির। সতীর ৫১ পীঠের অন্যতম এটি। তাহলে? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই একবার ঢুঁ মারল বিজনেস প্রাইম নিউজ। প্রতিবেদনে রইল সেই উত্তর খোঁজার একটা প্রয়াস।
প্রথমে বর্গভীমার মন্দির দিয়ে শুরু করা যাক। এই মন্দির হচ্ছে সতীর ৫১ পীঠের অন্যতম। কথিত আছে, সতীর দেহত্যাগের পর শিব যখন সতীর দেহকে কাঁধে নিয়ে তান্ডবনৃত্য করছিলেন, সেই সময় নারায়ণের সুদর্শন চক্রে সতীর দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এখানে পড়েছিল সতীর বাঁ-পায়ের গোড়ালি। এখানে দেবীর পুজো হয় তন্ত্রমতে। দেবীর ভোগে অবশ্যই দিতে হবে মাছ। বলা হয় শোলমাছ নাকি দেবীর অত্যন্ত প্রিয় ভোগ। আগে গোটা তমলুকে সেভাবে শক্তির আরাধনা করা হত না। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দুর্গা এবং কালীর পুজো। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিত্যপুজো চলে। কালীপুজোর দিন সারারাত চলে বর্গভীমার পুজো।
তবে শুধু স্থানীয়রাই নন। বর্গভীমার মন্দিরের খ্যাতি ছড়িয়েছে গোটা রাজ্য এবং রাজ্যের বাইরেও। দেবী মাহাত্ম্য সম্পর্কে সচেতন বহু ভক্তরা প্রতিদিন এখানে আসেন। শুধু কালীপুজোর দিন বলে নয়। এখানে প্রতিদিন নানান দর্শনার্থীদের ভিড়ে এই মন্দির গমগম করে। আমাদের ক্যামেরায় ধরা পড়ল এমনই দুই ভক্ত, যার একজন এসেছেন নৈহাটি থেকে আর আরেকজন এসেছে বোম্বে থেকে। শুনুন, তাঁরা কী বলছেন।
এ তো গেল ধর্মক্ষেত্রের দিক। যদি ইতিহাসের পাতা খুলি, তাহলে তাজ্জব হতেই হবে। তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ির মতনই তাম্রলিপ্ত পুরসভা সুপ্রাচীন। ১৮৬৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানেই এসেছিলেন নেতাজি। তিনি যে চেয়ারে বসেছিলেন সেটি আজও সংরক্ষণ করা রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। রয়েছে প্রাচীন গৌরাঙ্গ মন্দির, মাতঙ্গিনী হাজরার শহীদ বেদী। ইতিহাসের বই খুললে এই শহরের অতীত একবারে শেষ হবার নয়। কারণ এই শহরে এখনো রয়েছে একাধিক জিনিস ঘুরে দেখার। ফলে ট্যুরিস্টদের পা পড়ে এখানে মাঝেমধ্যেই। তাই দীর্ঘদিন ধরে এই জায়গাকে ট্যুরিজমের খাতিরে নতুন পর্যটনের জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এই বিষয়ে আদৌ কোন প্ল্যান রয়েছে কিনা বিজনেস প্রাইম নিউজকে জানালেন বর্তমান রাজপরিবারের সদস্য ও বর্তমান তাম্রলিপ্ত পৌরসভার চেয়ারম্যান দীপেন্দ্র নারায়ণ রায়।
কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে এই তাম্রলিপ্তের সঙ্গে। একটা সময় এই তাম্রলিপ্ত বন্দর ছিল ইস্ট এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার খুব গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। অতীতে নজর দিলে দেখা যাবে, এই বন্দর দিয়ে একটা সময় গোটা এশিয়াতে ব্যবসা বাণিজ্য হত। তার মধ্যে অন্যতম ছিল কপার এবং সিল্কের বসন। আরকিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া এই তাম্রলিপ্ত শহর নিয়ে যথেষ্ট কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিহাসের বহু বিষয়কে সংরক্ষণে রাখার চেষ্টা করছে। এখানে একটা সময় যে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব ছিল সেটাও বুঝতে কারুর অসুবিধা নেই। সুতরাং কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন এই তমলুক বা তাম্রলিপ্ত যেন ইতিহাসের খনি। তাই সুনির্দিষ্ট রূপরেখা এঁকে যদি তমলুক শহরকে আদ্যোপান্ত ট্যুরিজমের ঘাঁটি হিসেবে তৈরি করা যায় তাহলে পর্যটকদের সংখ্যা যে বাড়বে, সেটা আলাদা করে বলার প্রয়োজন মনে হয় নি। আর যত পর্যটক, তত ব্যবসা। আর যত ব্যবসা হবে, ততই সেটা রাজ্যের ইকোনমির পক্ষে শুভ হতে চলেছে।
প্রসূন ব্যানার্জী
পূর্ব মেদিনীপুর