Market
শুরুটা করি জটায়ুর একটা কথার রেশ টেনে। নিজের বই সেলিং এর ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন, সেলিং লাইক হট কচৌরিজ। আসলে উৎসবের মরশুম শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। আর কেনাকাটার ব্যপারে কি শুধু বাঙালিই হুজুগে? আর কেউ নয়? ফলে খুচরো বাজারে বিকিকিনির রমরমা। আর এবারেই নাকি অতীতের যাবতীয় রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে বলে খবর। ক্রেতাদের মধ্যে সাড়া পড়েছে বিপুল। মনে করা হচ্ছে, অঙ্কটা পৌঁছে যেতে পারে কয়েক লক্ষ কোটি টাকায়। অবাক হচ্ছেন! ভাবছেন ই-কমার্সের যুগে খুচরো বাজারে এই বিপুল অঙ্কের ব্যবসা! এটা কি সত্যিই সম্ভব? হ্যাঁ। আর সেই কারণে এই প্রতিবেদন নিয়ে আসা।
উৎসবের মরশুম শুরু হয়েছে আগেই বললাম। নবরাত্রি, দশেরা, দুর্গা পুজো, দীপাবলি, ধনতেরাস, ভাইফোঁটা, ছট পুজো- সব মিলিয়ে প্রায় ৮০ দিনের বেশি উৎসবের মেজাজে থাকবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত। মানে ঐ ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত বলা যেতে পারে। এরই মধ্যে দেশ জুড়ে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করার মতন। আর ক্রেতাদের ভিড় মানে বিক্রেতাদের মুখে হাসি। সবদিক থেকে খুচরো বাজারে বিক্রি এই সময় থাকবে একেবারে তুঙ্গে। কত জানেন? অনুমান করা হচ্ছে, এই যে প্রায় ৮৫ দিন মত গোটা দেশজুড়ে উৎসব চলবে, তার জন্য খুচরো ব্যবসার অঙ্ক পৌঁছে যেতে পারে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকায়। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। ৩ লক্ষ কোটি। ব্যবসার এই অঙ্কটা যেন সবদিক থেকে পিছনে ফেলে দেবে অতীতের সব রেকর্ড। গত বছরে উৎসবের মরশুমে ব্যবসার অঙ্ক রেকর্ড করেছিল ঐ ২.৫ লক্ষ কোটি মতন। এবারে সেই ব্যবসা ছাপিয়ে যাবে। এমনটাই মনে করছে, কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডারস। এখানেই শেষ নয়। অঙ্কের একটা হিসেব তাঁরাও কষেছেন। মনে করা হচ্ছে, ক্রেতাদের যেরকম কেনাকাটার বহর তাতে প্রতি সেকেন্ডে ৪ লক্ষ টাকার বেচাকেনা হতে পারে। মানে বিগ বিলিয়ন ডের তর্জন গর্জন আর কাজে আসছে না।
আমাদের দেশে মেনলি দুটো ই-কমার্স সংস্থার মধ্যে একটা জোরদার কমার্শিয়াল প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে। ফ্লিপকার্ট এবং অ্যামাজন। এই দুটো ই-কমার্স জায়ান্টের লক্ষ্য থাকে এই সময়টা। ফ্লিপকার্ট চালু করে বিগ বিলিয়ন ডে আর অ্যামাজন চালু করে গ্রেট ইন্ডিয়ান ফেস্টিভাল। দামি দামি জিনিস একেবারে জলের দরে বিকিয়ে দেবার লক্ষ্য থাকে তাদের। এভাবেই কাস্টমার টেনে আনে এই দুই সংস্থা। এছাড়া তো ফ্লিপকার্ট প্লাস, অ্যামাজন প্রাইম মেম্বারদের জন্য থাকে আরও আকর্ষণীয় অফার। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। যেমনঃ আইফোন ১৩। এর অরিজিনাল প্রাইস যদি হয় অলমোস্ট ৫২ হাজারের কাছাকাছি, সেটা ডিসকাউন্টে দেওয়া হচ্ছে ঐ ৪৬ হাজার টাকা মতন। এর ওপর রয়েছে আরও অ্যাডিশনাল ব্যাঙ্ক ডিসকাউন্ট, এক্সচেঞ্জ ডিলস। এগুলো অ্যাড হলে দেখা যাবে, প্রায় ৫২ হাজারের মোবাইলের দাম পড়ছে ঐ ৪০ হাজারের মত। ১২ হাজার টাকা লেস। আর শুধু মোবাইল বলে তো নয়। এই সময় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে সব ধরণের পণ্যের ওপরেও বিপুল অঙ্কের ছাড় দেওয়া হয়। আর যে কারণে জটায়ুর ভাষায় বিক্রি যেন সবই সেলিং লাইক হট কচৌরিজ।
বিষয়টা হচ্ছে, ই-কমার্স মার্কেটের যে দাপাদাপি সেটা ধীরে ধীরে দেশের খুচরো বাজারকে গিলে নিচ্ছিল- এই অভিযোগ অনেকদিন ধরেই করে আসছেন খুচরো ব্যবসায়ীরা। তার সঙ্গে ছিল পোস্ট কোভিড ফিয়ার। তখন ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজনের মতন কোম্পানিগুলো তুমুল মুনাফা তুলে নিয়েছিল। কারণ খুচরো বাজারে গিয়ে পণ্য কেনার মত পরিশ্রম আর কেউ করতেন না। ক্রেতারা বাজারে না গিয়ে দোরে পরিষেবা পেয়ে যাচ্ছে তাও আবার কম মূল্যে, সুতরাং খুচরো বাজারে গিয়ে কেন সময় এবং অতিরিক্ত অর্থ তারা ঢালবেন? প্রবলেমটা তৈরি হয় এখান থেকেই। খুচরো ব্যবসায়ীরা অভিযোগ তুলেছিলেন, যেভাবে ই-কমার্স সংস্থাগুলো পুরো কনজিউমার সার্কেলকে ধরতে চাইছে তারপর এদের অবস্থা যে খুব একটা অনুকূল হবে না সেটা আর নতুন করে বলে দেবার কিছু নেই। কারণ খুচরো বিক্রেতারা কোনদিন ফ্লিপকার্ট বা অ্যামাজনের সঙ্গে টেক্কা দিতে পারবেন না। এই বিপুল ছাড় তাঁরাও দিতে পারবেন না। অতএব…হ্যাঁ একটা প্ল্যাটফর্ম ওদের জন্যও রয়েছে। ওএনডিসি- কিন্তু সেটা ঐ নামেই রয়েছে। আমি আপনি বা আপনার আশেপাশে কাউকে একটু জিজ্ঞেস করে দেখবেন তো, ওএনডিসি থেকে কেউ পারচেজ করেন কিনা। সংখ্যাটা হয়ত ১০০:১ রেশিওতে পাবেন। মানে প্রতি ১০০ জনে হয়ত ১ জন। দেখুন, ওএনডিসি-র উদ্দ্যেশ্য কি ছিল? ফ্লিপকার্ট বা অ্যামাজনের মত বেসরকারি সংস্থাগুলোই শুধু মুনাফা কুড়িয়ে যাবে? তাহলে দেশের আভ্যন্তরীণ খুচরো বাজারের অবস্থা কোথায় দাঁড়াবে? এই কথা মাথায় রেখেই ওএনডিসি চালু করা হয়। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু সত্যি বলতে কি, এই প্ল্যাটফর্মটিকে প্রচার করার জন্যও সরকারের তরফ থেকে চরম গাফিলতি লক্ষ্য করা গেছে। আর যে কারণে ফ্লিপকার্ট অ্যামাজনের মার্কেটের কাছে দাঁড়াতে পারেনি সেভাবে।
যা পরিণতি দেখা যাচ্ছিল, তাতে সবদিক থেকেই খুচরো ব্যবসায়ীদের অবস্থা ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। আমাদের দেশে প্রায় ৬০ কোটি খুচরো বাজারের গ্রাহক রয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, পোস্ট কোভিড ফিয়ার কেটে যাবার কারণেই খুচরো বাজারের হাল ফিরছে। সেটা গত বছর থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু এই বছরে বিকিকিনির বিষয়টা যেন আরও ছড়িয়ে পড়েছে। আর সেটাই টার্ন ওভার এনে দেবে বিশাল অঙ্কের। পুরোটাই অনুমানের স্বাপেক্ষে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কি রকম? বলা হচ্ছে, ৬০ কোটি গ্রাহক যদি অ্যাভারেজে ৫ হাজার টাকার পণ্য কেনেন, তাহলেই অঙ্কটা ৩ লক্ষ কোটি টাকা ছুঁয়ে ফেলবে। ৮৫ দিনের হিসেব ধরলে একদিনে ব্যবসা হবে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার। মানে প্রতি ঘণ্টায় ১৪৭ কোটি টাকার। অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে ৪ লক্ষ টাকার ব্যবসা!
খুচরো ব্যবসায়ীদের মধ্যে উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে কারণ, সকলেই এখন উৎসবের মরশুমে পুরনো অভ্যাসে ফিরতে চাইছেন। মানে জিনিস হাতে দেখে বিচার করে কেনা। যেটা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে একেবারেই সম্ভব নয়। বাড়ির জিনিসপত্র, উপহার, জামা কাপর, গয়না, ইমিটেশন জুয়েলারি, বাসন, ঘর সাজানোর জিনিস, রান্নাঘর সাজানোর জিনিস, কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, মোবাইল, ল্যাপটপ আর যা আছে সব। এই মুহূর্তে কলকাতায় দুর্গা পুজো উপলক্ষ্যে ব্যবসার রেশ দেখা যাচ্ছে। তবে আগামীদিন দেশের অন্যান্য শহরে খুচরো বাজারে বিক্রি ভালোরকম হবে। অনলাইনের পাশাপাশি এখন অফলাইনে যে ব্যবসা এবার তাকেই আপন করে নিতে চলেছেন দেশবাসীরা। ফ্লিপকার্ট বা অ্যামাজন তো থাকলই। সঙ্গে খুচরো বাজারে ব্যবসা যে এমন গ্যালোপিং জাম্প দেবে সেটা অবশ্যই সমৃদ্ধ অর্থনীতির আরেকটা লক্ষণ বলা যেতে পারে। আপনি কিভাবে মার্কেটিং করতে অভ্যস্ত? অনলাইন নাকি অফলাইন? জানাবেন কমেন্ট বক্সে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ