Tourism
ধরুন, মন ভালো নেই, মুড অফ। অফিসের চাপ সামলে বাড়ি ফিরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য মনটা আঁকুপাঁকু করছে। হঠাৎ প্রিয় বন্ধুদের ফোন, ‘গেট রেডি ফর আ লং ড্রাইভ’। আর সেই লং ড্রাইভ আপনাকে পৌঁছে দিল সোজা ব্যাংকক। অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে তাই না? তবে বিশ্বাস করুন, এই ইনফরমেশনে এক বিন্দুও জল মেশান হয়নি। বাস্তবেই এটা হতে চলেছে আপনার সঙ্গে। অপেক্ষা মাত্র ৪ বছরের। আর তারপরই ক্রুজ বা উড়ানেই শুধু নয়, লং ড্রাইভে পৌঁছনো যাবে ব্যাংকক। Much awaited হাইওয়ে তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই।
কত খরচ হচ্ছে, কোন কোন জায়গা কভার করছে, আর কেনই বা হচ্ছে- সবটাই বলব। তবে তার আগে বলি কেন ব্যাংকক? সাল ২০০২। ইন্ডিয়া-মায়ানমার-থাইল্যান্ড বা ছোট করে বললে আইএমটি-কে সড়কপথে যুক্ত করার একটা স্বপ্ন দেখেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপায়ী। উদ্দেশ্য একটাই- তিন দেশের ব্যবসায়িক স্থিতি আরও মজবুত করা। দক্ষিণ এশিয়ার উপকূলবর্তী এই তিনটে দেষের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকলে, চিনের লাল চোখকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানোর সাহস পাওয়া যাবে। কম খরচে এবং কম সময়ে কানেক্টিভিটি তৈরি করা। আর তাছাড়াও ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন হিসেবে ব্যাংকক যাওয়ার হুজুগ যে নেই, এমনটা হলফ করে বলা যায় না। ব্যাংকক। হানিমুন হোক বা ব্যাচেলরেট- ভারতীয়দের মধ্যে বিদেশ ভ্রমনের তালিকায় ব্যাংককের নাম থাকে সবার প্রথমে। ক্রুজে ডিনার, পাটায়াতে অ্যাষ, ওয়াটার অ্যাডভেঞ্চার, থাই ফুড- উফ! যেন পারফেক্ট হলিডে ডেস্টিনেশন। এবার অটল বিহারী বাজপেয়ীর সেই স্বপ্ন আর কয়েকবছরের মধ্যেই সত্যি হতে চলেছে।
সম্প্রতি কোলকাতায় অনুষ্ঠিত হওয়া বিমসটেক বিজনেস কনক্লেভের মঞ্চে উপস্থিত ডেলিগেটসরা বারবার বলেছিলেন, কোলকাতা এবার নতুন পরিচয়ে পরিচিত হতে চলেছে গোটা বিশ্বের কাছে। তারা জানিয়েছিলেন, কোলকাতা হতে চলেছে সেতুবন্ধনের শহর। আপনারা যারা সেই ভিডিও দেখেননি, উপরের আই বটনে ক্লিক করে একবার দেখে নিতে পারেন। কোলকাতা তার সেই সেতুর বাঁধনে বাঁধতে চলেছে দীর্ঘ ২৮০০ কিলোমিটার রাস্তা। যা ভারতের কাছে একটা গেম চেঞ্জার তো বটেই। মাল্টিল্যাটেরাল ট্রেডকে বুস্ট করতেই বিমসটেক অর্থাৎ বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেকটরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন এই উদ্যোগে সামিল হয়েছে। কোলকাতা থেকে শুরু করে শ্রীরামপুর হয়ে, নর্থ বেঙ্গল, গৌহাটি, আসাম, কোহিমা, নাগাল্যান্ড, মনিপুর পেরিয়ে হাইওয়ে পৌঁছবে মায়ানমারের মাটিতে। আর এই হাইওয়ের সিংহভাগই থাকছে ভারতের জমিতে। দেশের ব্যবসা এবং ইকোনমিতে এর গুরুত্ব ঠিক কতটা পড়তে চলেছে, সেটা আলাদা করে বুঝিয়ে না বললেও আন্দাজ করতে পারছেন নিশ্চয়ই। তার পাশাপাশি নর্থ বেঙ্গল এবং নর্থ-ইস্টের ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রির গ্রোথের কথা ভুলে গেলে চলবে না। বিদেশ-বিভুইয়ের লকজনেরসঙ্গে দেখা, পারস্পারিক সম্পর্ক বিনিময়, সংস্কৃতির আদান-প্রদান, এই সবটাই সহজ হবে জলের মতো। আর যেই যেই অঞ্চলের উপর দিয়ে এই ইএমটি ট্রাইল্যাটেরাল হাইওয়ে যাবে, সেখানকার আশেপাশের মানুষজনের রুজরুটির ব্যবস্থাও করে দিয়ে যাবে। ওই যে, বেদবাক্য ‘ভোকাল ফর লোকাল’।
থাইল্যান্ড অবধি হাইওয়ে এক্সটেনশনের আরও একটা উদ্দেশ্য আছে ভারতের। থাইল্যান্ড হচ্ছে এমন একটা অর্থনৈতিক অঞ্চল যার কাছে মধ্যএশিয়া, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের একমাত্র স্থলপথের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ভারত এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউদেস্ট এশিয়ান নেশানস-এর মধ্যে ব্যবসা বৃদ্ধির করাই হচ্ছে এই কোলকাতা ব্যাংকক হাইওয়ে প্রজেক্টের মেইন মোটিভ। থাইল্যান্ড এবং ভারতের অংশে হাইওয়ে নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। আর মায়ানমার সরকার জানিয়েছে, তাদের সামিয়ানায় থাকা ফোর লেন হাইওয়ের কাজ শেষ হয়েছে ৫০ শতাংশ মতো। আর যেটুকু বাকি আছে, সেটা ২০২৬-এর শেষ দিকেই পরিপূর্ণতা পাবে। প্রসঙ্গত, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মায়ানমার এই হাইওয়ে তৈরির কাথে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে। তারপর ভারত সরকারের সাহায্যের জন্য আবেদন করলে ভারত সরকার সম্মতি দেয় এবং মায়ানমারের অংশে বাকি থাকা কাজ শেষ করার জন্য ইতিমধ্যেই প্রায় ২৫৬ মিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট করে ভারত। এছাড়াও মায়ানমারের এই প্রোজেক্টে ইনভেস্ট করার জন্য থাইল্যান্ডকেও রাজি করায় নরেন্দ্র মোদী সরকার। শুধু তাই নয়। মায়ানমারে আইএমটি হাইওয়ের এই বাকি থাকা অংশে বেসিক্যালি মায়ানমারের সাগাইং প্রদেশের মধ্যে পড়ে। যেখানে সামাজিক অস্থিরতা প্রবল। আর এই অস্থিরতার কারণেই দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে যায় হাইওয়ে তৈরির কাজ। তবে ভারতের সমঝোতায় সেই কন্সট্রাকশনে কাজ আবারও গতি পায়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে জগাজগের মাধ্যম আরও মজবুত করার জন্য এখন যথেষ্ট অ্যাক্টিভ ভারত। আইএমটি হাইওয়ে প্রোজেক্ট এই অঞ্চলের অন্যতম মেজর ইনফাস্ট্রাকচারাল প্রোজেক্ট। আর এই হাইওয়ে কমপ্লিট হয়ে গেলে কোলকাতা এবং ব্যাংককের ট্রেড, ট্রান্সপোর্টেশন এবং ট্যুরিজমকে অনেক স্মুদ করে তুলবে। কোথায় নয়। কাজেও তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে প্যাসেঞ্জার এবং গুডস ভেহিকেল রানিং স্মুদ করার জন্য খুব শীঘ্রই আইএমটিএম এগ্রিমেন্টে সই করতে চলেছে মায়ানমার সরকার। লক্ষ্য, এই প্রজেক্টের মাধ্যমে আসিয়ান গেট ওপেনিং। এবং একইসঙ্গে সাউথ-ইস্ট এশিয়ার বাকি অংশে ট্রেডিং বৃদ্ধি। কম্বোডিয়া, লাওস এবং ভিয়েতনাম পর্যন্ত এই হাইওয়ে এক্সটেনশনের একটা প্রপোজালও রেখেছে ভারত। সব ঠিক থাকলে এই ইস্ট-ওয়েস্ট হাইওয়ে এক্সটেনশনের কাজও খুব শীঘ্রই শুরু হতে পারে। আর এর ফলে যেমন ইকনমিক্যাল ডেভলপমেন্ট হবে, তেমনই এমপ্লয়মেন্টও জেনারেটেড হবে প্রচুর পরিমাণে। পাশাপাশি ভারত এবং অনান্য আশিয়ান দেশগুলো জিডিপি-তেও এর উল্লেখযোগ্য ছাপ পড়বে।
ব্যবসায়িক বা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতো বটেই, জিওপলিটিক্যালি ভারতের একজিসস্টেন্সকে আরও দৃঢ় করতে এই ট্রাইল্যটেরাল হাইওয়ে প্রোজেক্ট অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে ওই কথায় আছে, কেষ্ট পেতে কষ্ট করতে হয়। তাই হাজার একটা বাধাবিঘ্ন, ঝড়ঝাপটা সামলে অবশেষে এই প্রোজেক্ট গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছে, এবং আর কয়েকবছরের মধ্যে পূর্ণতাও পাবে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ।