Tourism
তিস্তা নদীতে সাইক্লিং, ট্রেকিং, একগুচ্ছ আউটডোর আক্টিভিটি, সঙ্গে গরম গরম বরোলি মাছ ভাজা। যদি কাশ্মীরের ডাল লেকের ভাইব থাকে?- ভ্রমনপ্রিয় বাঙালির এর চেয়ে বেশি আর কী চাই? উপরি পাওনা হিসেবে যদি সিডনির হারবার ব্রিজের মতো একটা সেলফি জোন পেয়ে যান- তাহলে ব্যাপারটা জমে যায় কী বলুন? এমনি এমনি কী আর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের মঞ্চ থেকে উত্তরবঙ্গে শুটিং করতে আসার ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী?
২২০০ কোটি টাকা ইনভেস্টমেন্টে ২০০ একর জমির ওপর তৈরি হয়েছে পূর্ব ভারতের অন্যতম মেগা ট্যুরিজম প্রোজেক্ট, ‘ভোরের আলো’। আগে সেই আপডেট আমরা আপনাদের দিয়েছিলাম। আজ বিজনেস প্রাইম নিউজ আপনাদের ট্যুর করাবে সেই মেগা ট্যুরিজম পার্ক এবং একইসঙ্গে আপনারা জানতে পারবেন, আরও কী কী চমক অপেক্ষা করছে আপনাদের জন্য।
উষ্ণতার পারদ নামতেই, ফিরছে মাছের ঝাঁক। আসছে পরিযায়ী পাখির দল। থিকথিকে ভিড় নজরে আসছে গজলডোবায়। দক্ষিনবঙ্গকে ইকো পার্ক গিফট করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গই বা বাদ যায় কেন। তাই গজলডোবার এই মেগা প্রকল্পকে ঢেলে সাজাতে এতটুকু কারপন্য করেননি তিনি। রয়েছে ডুপ্লেক্স কটেজ, ফাইভ স্টারের মতো স্যুট, রয়েছে নৌকাবিহার, শিকারের ব্যবস্থাও। উপরি পাওনা হিসেবে রয়েছে পাশের বৈকুণ্ঠপুর অরন্য এবং সেখানে হাতির পিঠে সাফারি। খরস্রোতা তিস্তা এখানে একেবারে শান্ত। তাই শীতের নরম রোদ গায়ে মেখে নৌকা বিহারের মজাই আলাদা। শহরের ব্যস্ততা থেকে একটু দূরে গিয়ে প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলার এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর কী-ই বা হতে পারে?
শুধু কী আর পর্যটকদের ভিড় বাড়ানোই উদ্দেশ্য? এত বড় একটা ডেভলপমেন্ট প্রোজেক্টে লোকাল কমিউনিটির কোন লাভ হবে না তা তো আর হতে পারে না। উত্তরবঙ্গের এই মেগা প্রজেক্ট প্রায় ১০০ তা পরিবারের রুজিরুটির বন্দোবস্ত করেছে। আগে যেখানে এখানকার মানুষ শুধুমাত্র মাছ চাষ আর কৃষিকাজের ওপর নির্ভর করতেন, এখন সেখাতে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় বাড়তি রোজগার হচ্ছে তাদের। গজলডোবার হাত ধরে ভবিষ্যতে আরও ছোট ছোট পর্যটন কেন্দ্র তৈরি হবে শিলিগুড়িতে। বদলে যাবে শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের অর্থনৈতিক ছবিটা। আর সেই কারণেই খুশির জোয়ার বইছে সেখানকার সাধারণ মানুষদের মধ্যে।
এতকিছু শোনার পর নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে কীভাবে যাওয়া যায় এখানে? তাহলে শুনে নিন। যেহেতু গজলডোবা শিলিগুড়ি শহরের মধ্যেই তাই ট্রেনে করে সোজা এনজেপি চলে যান। আর সেখান থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দুরেই গজলডোবা। ট্রেনে টিকিট না পেলে প্লেনে যান। সামনেই তো বাগডগরা এয়ারপোর্ট। আর বাগডগরা থেকে ভোরের আলো ইকো-ট্যুরিজম পার্কের দূরত্ব মাত্র ৪২ কিলোমিটার।
ইতিমধ্যেই সাইবেরিয়া, তিব্বত, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পরিযায়ী পাখীরা আসতে শুরু করেছে। এছাড়াও সিডনির আদলে তৈরি হারবার ব্রিজ বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। লন্ডনের টেমস নদীর সেতু কিংবা, গঙ্গায় হাওড়া ব্রিজ আর উত্তরে পাহাড়ের কোলে সেবকের করোনেশন সেতু দেখতে পর্যটকরা ছুটে আসেন। গজলডোবাতেও একইভাবে একদিকে তিস্তা ব্যারেজ দেখতে আগে থেকেই পর্যটকদের দেখা যেত। এবার নতুনভাবে এই হারবার ব্রিজের আদলে সেতু দেখতে এখনই ছুটে আসছেন পর্যটকরা। দেশের কিংবা বিশ্বে সেতু কেন্দ্রিক পর্যটক ধরে রাখার মতোই অন্যতম জায়গা হয়ে উঠতে চলছে গাজলডোবার ‘ভোরের আলো’।
অরূপ পোদ্দার
শিলিগুড়ি