Academy
আইনি জট কাটার ৭ দিনের মধ্যেই হবে আপার প্রাইমারির শিক্ষক নিয়োগ। স্পষ্ট করলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সব ঠিকাছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এ রাজ্যে প্রাইমারি বা আপার প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা কত? আর সেখানে ছাত্র সংখ্যাই বা কত?
আকাশ-পাতাল ভেবে লাভ নেই। সরকারী হিসেব অনুযায়ী রাজ্যে বর্তমানে প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা ৫০,১৫১ টি। উচ্চ প্রাথমিকের সংখ্যা ৭,২২০ টি। হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের সংখ্যা ৬,৩৫৬ টি। মোট স্কুলের সংখ্যা ৬৩,৭২৭ টি। এবার আসা যাক এই স্কুল গুলোর ছাত্র সংখ্যায়। সরকারী সমীক্ষা বলছে, স্কুল আছে, পড়ুয়া নেই। কোথাও ক্লাসে ছাত্রের সংখ্যা মাত্র এক জন৷ কোথাও একটু বেশি, তিন জন। বেশিরভাগ আপার প্রাইমারি স্কুলেই ৩০ জনের বেশি ছাত্র নেই। ধরে নিলাম, অদূর ভবিষ্যতে আইনি জট কেটে গেল এবং তার ৭ দিনের মাথায় শিক্ষক নিয়োগও হয়ে গেল। একটা বিষয় ভেবে বলুন তো, ক্লাসে পড়ুয়া না এলে নতুন শিক্ষক নিয়োগ করে কী হবে? কাদের পড়াবেন তারা?
শিক্ষামহলের একাংশের দীর্ঘদিনের বক্তব্য, শহর-শহরতলি বা জেলা সদরে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলির দাপটে ধুঁকছে সরকারি ও সরকার পোষিত অনেক স্কুল। কলকাতায় এমন পাঁচশোর বেশি স্কুল রয়েছে, যেখানে ছাত্র সংখ্যা ৩০-এর নীচে। এর মধ্যে একশোর বেশি স্কুলে আবার ছাত্রসংখ্যা শূন্য থেকে মাত্র ২ বা ৩-র মধ্যে।সিংহভাগ স্কুলেই অশিক্ষক কর্মী নেই। সরকারি বোর্ডের অধীন এই বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলির ভবিষ্যৎ কী?
শিক্ষামন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করায় তিনি জানিয়েছেন যে, এবিষয়ে আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী আলোচনার প্রয়োজন। তাহলে প্রয়োজন যখন তখন এই বিষয়টা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে না কেন? কেন গাফলতি করা হচ্ছে? অনেকে অবশ্য বলছেন, ইংরেজি মাধ্যমের প্রতি একটি স্বাভাবিক টান রয়েছে অভিভাবকদের একটি বড় অংশের।দেখুন, স্কুল যদি ভালো হয়, তাহলে সেখানে ছাত্রসংখ্যা বাড়বে- সেকথা সকলের জানা। কিন্তু গত কয়েক দশকে যেভাবে সরকারী স্কুলের প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে, সেটা কিন্তু কার্যত নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা রাজ্যকে। আর এত হিসেব, এত তথ্য সামনে থাকতেও সরকার উদাসীন।
শিক্ষকদের একটা বড় অংশ রাজনীতিতে এতটাই জড়িত যে, তাঁদের অনেকে ক্লাস নেন না। ফলে মধ্যবিত্তরা বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমে আর গরীব মানুষ কষ্ট করে হলেও বেসরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করাচ্ছেন।ফলে হালফিলে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির মতো জেলাতেও গড়ে প্রতি পাঁচ কিলোমিটারে একটি-দু’টি করে বেসরকারি স্কুল গড়ে উঠেছে।
এটা বা দুটো জেলায় ছবিটা এরকম নয়। এরাজ্যের জেলায় জেলায় ছবিটা এই একইরকম। সরকারী স্কুলের ওপর থেকে আস্থা হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ, আর সেই ভয়েড পূরণ করছে বেসরকারি স্কুল। কাজেই বেসরকারি স্কুলের দাপটে সরকারী স্কুলের এই হাল- একথা অপ্রাসঙ্গিক। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন, এই স্কুলগুলিকে বাঁচাতে সরকারকে যথাযথ পরিকল্পনা করতে হবে। তারা যেন এই সব স্কুল বন্ধ করে না দেন।
২০২২ সাল থেকে আপার প্রাইমারি নিয়োগ নিয়ে ধুন্ধুমার কাণ্ড। শিক্ষামন্ত্রী কখনও আশ্বাস দিচ্ছেন, আবার কখনও বেফাঁস কিছু বলে বসছেন। এবার আবার তিনি জানিয়েছেন যে আইনি জট কাটলেই ৭ দিনও যাবে না, চাকরি পেয়ে যাবেন প্রার্থীরা। প্রশ্ন হচ্ছে সেই জট ছাড়াবে কে? কবে ছাড়বে। এ বিষয়ে সরকারের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন থাকছে। উত্তর যদি আপনারা জানেন তাহলে কমেন্ট বক্সে জানতে পারেন। তবে, আইনি জট কাটিয়ে শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি সরকার যদি সরকারী স্কুলগুলোর হাল ফেরানর বিষয়টা নিয়েও ভাবনাচিন্তা করতেন, তাহলে বেশ কিছু গরীব মানুষের সুরাহা হত। দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।