pujo scope 2022
চরম ক্ষতির মুখে কুমোরটুলির শিল্পীরা,
কেন?
একের পর এক ঠাকুরের বরাত বাতিল হয়ে যাচ্ছে,
কেন?
লাভের গুড় খাচ্ছে পিঁপড়ে,
মানে?
আয় করতে গিয়ে শিল্পীদের ব্যয় হচ্ছে অনেক বেশি
সেটাই বা কেন?
কেন ভালো নেই কুমোরটুলির শিল্পীরা?
সেই খবরই নিতে গেছিল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
কী জানতে পারলাম আমরা?
সেটাই শেয়ার করব আজকের প্রতিবেদনে
কুমোরটুলি মানেই কলকাতার কুমোরটুলি। আর দুর্গা পুজোর প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে যদি কুমোরটুলির কথাই বলি তাহলে কলকাতার কথাই মনে আসাটা স্বাভাবিক। দুর্গা পুজোর বরাত যেভাবে এসেছে, আর ব্যস্ততা যেভাবে বেড়েছে তারপর সত্যিই কি কুমোরটুলির শিল্পীরা ভালো নেই? না সত্যি ভালো নেই। তবে কলকাতার কুমোরটুলির শিল্পীরা নন। ভালো নেই শিলিগুড়ির কুমোরটুলির শিল্পীরা। অসুর সিকিমে বাঁধভাঙা বৃষ্টি। আর দেবীর আশীর্বাদ- সেটাই বা কোথায়? একেবারে পরিশ্রম পণ্ড। অতএব, পুজোর আগে তাদের হাসিটাও ধীরে ধীরে হয়ে যাচ্ছে বন্ধ।
মুশকিল হল, সিকিমে যে সাংঘাতিক বিপর্যয় নেমেছে সেই কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে উত্তরের পর্যটন শিল্প। আর সেই সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে শিলিগুড়ির কুমোরটুলি। কারণ বৃষ্টি আর বিপর্যয়ের কারণে বাতিল হয়ে যাচ্ছে একের পর এক অগ্রিম বায়না। আর যেকটি বরাত এখনো রয়েছে, সেগুলো পাঠাতে হচ্ছে ঘুরপথে। ফলে খরচাও বেশি হচ্ছে। এদিকে মূল্যবৃদ্ধির কোপ পড়েছে উত্তর থেকে দক্ষিণ। সুতরাং, মাসের পর মাস ধরে যে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে, সেই প্রতিমা যদি বিক্রি না হয় তাহলে কি আর দুর্গা পুজো ভালো কাটে? এই যেমন শিল্পী নারায়ণ ভট্টাচার্যের কথাই ধরা যাক। তাঁর কলকাতাতেই বাসা। আর প্রতিমা নির্মাণ করে, দু-পয়সা রোজগার হবে এই ভেবে তো শিলিগুড়িতে আসা। ভালোই ছিল। কিন্তু বিপর্যয় যখন আসে তখন সর্বগ্রাসি হয়ে ওঠে। যে কারণে ভুগতে হচ্ছে তাঁদের। কিরকম? শুনেই নিন আপনারা নিজের কানে।
একই কথা শোনা গেল কুমোরটুলির আরেক শিল্পী দীপেশ পালের গলাতেও। তিনিও যেন প্রতিমার অর্ডার বাতিল হওয়ায় খানিক দিকভ্রান্ত। খরচা বেড়েছে ডবল, এদিকে দিনের শেষে কাজটা করে যেতে হবে।
মুশকিলটা হয়েছে, সিকিমের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটা। দেখুন, পোস্ট কোভিডে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকেই যাচ্ছিল। আশার আলো সকলেই দেখছিলেন। কুমোরটুলির শিল্পীরাও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন। কারণ সমতলের বিভিন্ন এলাকা থেকে যেমন বরাত আসছিল, তেমনই বায়না মিলছিল পাহাড় থেকেও। দিনে দিনে অনেক প্রতিমা এই সময় পাহাড়ে রওনাও দিয়ে দেয়। সেই লক্ষ্যে কয়েক মাস আগে থেকেই কাজ শুরু করে দেন প্রতিমা শিল্পীরা। এই বছর বৃষ্টি এলেও তাকে কাঁচকলা দেখিয়ে নিজ নিজ কারখানায় দিনরাত এক করে কাজ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সিকিমে বিপর্যের খবর সামনে আসতেই যেন তাদের মাথায় বাজ পড়ে। একে একে শুরু হয় বরাত বাতিল হওয়া। যে দু একটা বরাত শেষ অবধি টিকে রয়েছে সেক্ষেত্রেও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন শিল্পীরা। তাদের কথায় শিলিগুড়ি এবং সিকিমের লাইফলাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও তা স্বাভাবিক হয়নি। এই পরিস্থিতিতে অনেকটাই ঘুর পথে প্রতিমা পৌঁছোতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মোটা টাকা গাড়ি ভাড়ায় খরচ হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম শুধু বেড়েই চলেছে। আর এই দুইয়ের সাঁড়াশি চাপেই শিল্পীদের হাঁসফাঁস অবস্থা। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। কী অদ্ভুত ব্যপার বলুন দেখি। দেবী পক্ষের সূচনায় শারদ উৎসবকে কেন্দ্র করে আট থেকে আশি সকলেই উৎফুল্ল। আনন্দে মাতোয়ারা সকলেই। কিন্তু সেই দর্শনার্থীদের মন ভরাতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন সেই শিল্পীরা ভালো নেই। তাদের হাসিটা যেন ফিকে হয়ে এসেছে। প্রকৃতির ইচ্ছের ওপর কে আর ছড়ি ঘোরাতে পারে? কিন্তু তাই বলে ব্যবসায় ক্ষতি হবে? কোন কি সুরাহা নেই? আপনারা বরং এই প্রশ্নের নিজস্ব মতামতগুলো লিখে ফেলুন কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন আমাদের প্রতিবেদন। আর সাবস্ক্রাইব করে নিন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
অরূপ পোদ্দার
শিলিগুড়ি