Market Battle
নিউ মার্কেট। নাম নিউ মার্কেট হলেও এটাই কোলকাতার সবচেয়ে পুরনো বাজার। যদিও নিউ মার্কেটের একটা বিলিতি নামও আছে। হগ’স মার্কেট। কোলকাতা কর্পোরেশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান স্যার স্টুয়ার্ট হগের নাম অনুসারে মার্কেটের নাম রাখা হয় হগ’স মার্কেট। ভিক্টোরিয়ান গথ আর্কিটেকচারে সেজে একটা রয়্যাল ফ্লেভার নিয়ে আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে ব্রিটিশ রাজত্বে পথ চলা শুরু করে নিউ মার্কেট। তবে, আজ রাজাও নেই, রাজত্বও নেই। কিন্তু রাজপাট রয়ে গিয়েছে। ব্রিটিশদের হাত ধরেই কোলকাতায় মল কালচার শুরু হয়। তাই নিউ মার্কেটের এই বিল্ডিংটা একদম ওয়েল প্ল্যানড।
তবে যতই পাঁচতলা মল, পুরোটাই ঘুরে নেওয়া যাক না কেন, স্যাটিসফেকশনটা ঠিক আসে না। আহা! কেনাকাটা হল আর বারগেনিংটাই হল না, ঠিক জমল না। সো, টুকিটাকি কেনাকাটা হোক কি পুজোর গ্র্যান্ড শপিং… নিউ মার্কেট মাস্ট। কারণ ওই বারগেনিং-এর ফ্লেভারটা…উমহুম আলাদাই সুখ।
চারপাশটা তাকালেই শুধু খাজানাই খাজানা। এত্ত এত্ত ভ্যারাইটি। আর এত্ত ট্রেণ্ডি সব কালেকশন কোনটা ছেড়ে কোনটা কিনি, খুব মুশকিল! নিউ মার্কেটে এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে ওভার ৫০০০ স্টলস আর দেয়ার টু সার্ভ ইউ। গুঁতোগুঁতি করে টপ কালেকশনটা জাস্ট ব্যাগবন্দী করতে হবে। ব্যাস… কাশ্মীরি শাল থেকে শুরু করে কন্যাকুমারীর কালেকশন, গুজরাটি স্টিচ থেকে বাংলাদেশের টাঙাইল, কি চান বলুন না? দাঁড়ান দাঁড়ান। এখানেই শেষ নয়। এ তো গেল ক্লথিং। ফ্যাশেনেবেল ব্যাগ, স্টাইলিশ স্লিপারস, সানগ্লাস ব্যাঙ্গেলস, আর ইয়াররিংস। এভ্রিথিং ইস অ্যাভেলেবল আন্ডার দ্য সেম রুফ।
অফিস ফিরতি পথে নিউ মার্কেট ঢুঁ মারতে যাওয়ার উত্তেজনায় এগিয়ে আসে পুজো। পুজো মানে যেমন মণ্ডপসজ্জার হইহুল্লোড়, কেনাকাটার ভিড়, তেমনই পুজো মানে অপেক্ষা। অফিসের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ মিটিং-এ বসে ঠিক যেভাবে পুজোর শপিং-এর জন্য অপেক্ষা করেন আপনি, সেভাবেই সারাবছর শুধু এই পুজোর সময়টার জন্যই অপেক্ষা করেন ব্যবসায়ীরা। অপেক্ষা করেন হাতিবাগান ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকা সেই বেলুনওয়ালা, অপেক্ষা করেন হগস মার্কেটের সামনের ওই ঝুনঝুনিওয়ালা, গড়িয়াহাট মার্কেটে এক কোণে বসে থাকা সেই মুচিও। দিনশেষে তাদের রোজগারের অপেক্ষা করে তাদের পরিবার। পুজো যে সবার। সত্যিই সবার?
থিকথিক করছে আট থেকে আশির ভিড়ে। পা ফেলার জায়গা পর্যন্ত নেই। তারমধ্যেই চলছে ধাক্কাধাক্কি করে কেনাকাটা, দরদাম, কাস্টমার ডাকার কম্পিটিশন। এসবের মধ্যেই চলেছে রসনার তৃপ্তিও। সবটামিলিয়ে গমগম করছে কোলকাতার বাজার।
গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট তো হল। উত্তরের হাতিবাগানটাই বা বাদ যাবে কেন? কোলকাতার এনটায়ার ইকোনমির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এই হাতিবাগান মার্কেট। একটু শুরু থেকে শুরু করা যাক নাকি? না না, খুঁজলে এখানে হাতিও পাওয়া যায়, এমন ধারণা কিন্তু এক্কেবারে ভুল। বরং, হাতিবাগান নামে হাতি থাকলেও এখানে হাতির কোন অস্তিত্ব নেই। তবে অনেকেই বলেন, বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলা নাকি পলাশির যুদ্ধ চলাকালীন কোলকাতার এই জায়গাতেই হাতি রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই থেকে এই জায়গার নাম হাতিবাগান। আর এখন সেই জায়গাই হচ্ছে কোলকাতার ওয়ান অফ বিগেস্ট শপিং হাবস।
নরম হলদে আলোয় ঝিকমিক করছে ক্রিস্টালের সেটটা। অসাম লাগছে! ব্ল্যাক ফিনিশ অক্সিডাইজড জুয়েলারির তো আলাদাই গ্ল্যামার। এবারের ফ্যাশন ট্রেন্ডে এক নম্বরেই যে সে রয়েছে। আর ওদিকে বেড কভারটার কত দাম দাদা? ওফঃ বড্ড দাম বাড়িয়ে রাখেন আপনারা। ৩০০ লাস্ট, এর বেশি আর এক পয়সাও না। মন্ত্রের মত চলছে বারগেনিং। কিন্তু এত তর্ক বিতর্ক, দরকষাকষির পর বিক্রেতাদের লাভ কিছু থাকে কি?
এসি মল থেকে পিলপিল করে বেরচ্ছেন ক্রেতারা। ফিরতি পথে টুক করে ঢুকে যাচ্ছেন ফুটপাথ জুড়ে সাজানো কসমেটিক্সের দোকানে। কেউ কিনছেন ঘর সাজানোর ফুল, তো কেউ ব্যস্ত পর্দার ডিজাইন দেখতে। বাচ্চার গায়ে জামা ফেলে একেবারে মেপে নিচ্ছেন মায়েরা, ওদিকে প্রিয়জনের কথা ভেবে উপহার কিনছে অপরজন। দিনের আলো যত ফিকে হচ্ছে, ততই যেন জেগে উঠছে শহর।