Bangladesh
প্রথমে বাংলাদেশ। তারপর মালদ্বীপ। চাল, চিনি, আটার পর এবারপিঁয়াজ রপ্তানিতেও রাশ টানল ভারত। পিঠে নয়। ভারতের ভালোমানুষির সুযোগ নিলে পেটে মারার সিদ্ধান্তই কী নিল মোদী সরকার?
কিছুদিন আগেই ছিল মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। যেখানে জয় লাভ করেন চিনপ্রেমী প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু। প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসে ভারতের নাকের ডগা দিয়ে বেজিং-ও ঘুরে আসেন তিনি। আর তারপরই চীনের ইশারায় ওঠা-বসা শুরু করে মালদ্বীপের সরকার। শুরু হয় ভারত বিরোধী কার্যকলাপ। নির্বাচনে জেতার পরই অবিলম্বে ভারতীয় সেনাকে মালদ্বীপ ছাড়ার নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। তিক্ত হতে শুরু করে ভারত-মালদ্বীপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক।
‘ইন্ডিয়া-আউট’- এই নীতিতে ক্যাম্পেন চালিয়ে বিরাট জনসমর্থনে মালদ্বীপ এখন মুইজ্জুর দখলে। যিনি কি না আবার চিন প্রেমী। প্রসঙ্গত, সামরিক এবং স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে ভারত মহাসাগরে মালদ্বীপের অবস্থান ভারতের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন গুরুত্বপূর্ণ শ্রীলঙ্কাও। কাজেই ভারত অপেক্ষা চীনের সঙ্গে যদি মালদ্বীপের সম্পর্ক গভীর হয়, তাহলে ভারতের জন্য সেটা উদ্বেগজনক তো বটেই।
২০১৩ সালে মনমোহন সিং সরকার ভারতের সাহায্য হিসাবে মালদ্বীপকে দুটি হেলিকপ্টার উপহার দিয়েছিলেন। সঙ্গে সেগুলি চালানোর জন্য কয়েকজন সেনাও পাঠান। মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে আরও একটি বিমান পাঠিয়ে ভারতীয় সেনার সংখ্যা বাড়িয়ে দেন। চুক্তি হয় একটি সামরিক বন্দর ও ডক নির্মাণের এবং ভারতের সেনার সঙ্গে যৌথভাবে সেটা পরিচালনার। শর্ত ছিল এই বন্দরে ভারতের অনুমতি ছাড়া অন্য কোনও দেশের জাহাজ ভিড়তে পারবে না। এখানেই মালদ্বীপের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। গত নির্বাচন তারই প্রতিফলন। জনগণের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে ভারতবিরোধী মনোভাব।
তবে এটাও ঠিক যে, সামরিক, বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল মালদ্বীপ। মালদ্বীপের ট্যুরিজম ভারতের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। আর তাছাড়া প্রসঙ্গ যদি সার্বভৌমত্ব রক্ষাই হয়, তবে সেটা চীনের ছত্রছায়ায় থেকে কতটা সম্ভব, সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে পাকিস্তানকেই দেখে নিন। পাকিস্তান এখন চীনের ইশারায় উঠছে বসছে। দেউলিয়া দেশটাকে চিনই কন্ট্রোল করছে। আগামী দিনে মালদ্বীপও কী তেমনটাই এক্সপেক্ট করছে?
ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব-পূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে সমঝোতা করে নিলে হয়তো রপ্তানি বাণিজ্যে রাশ টানার কথা ভাবনা-চিন্তা করত না ভারত সরকার। তবে এখন পরিস্থিতি অন্যরকম। সম্পর্ক যখন তিক্ত হয়েছে, তখন চরম সিদ্ধান্ত নিতেই বাধ্য হলেন মোদী। আর তাছাড়া বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে দেশের বাজারে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে একটা মাস্টারস্ট্রোক হবে। আর ওদিকে মালদ্বীপের দাপাদাপিতেও একটু রাশ টানা যাবে।
ছোট্ট দ্বীপপুঞ্জ মালদ্বীপের অবস্থান ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিনা আগ্রাসনের হাত থেকে এবং ভারত মহাসাগরে ভারতের আধিপত্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে মালদ্বীপ ভারতের জন্য ট্রাম্প কার্ড। কিন্তু এইমুহূর্তে ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্ক যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে চিনা আগ্রাসন কতটা আটকান সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
তবে, ভারতের কূটনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত যে মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব বেশিদিন তিক্ত থাকবে না। তার কারণ, ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার। যা দুই দেশের জন্যই ভীষণ ইম্পরট্যান্ট। কাজেই শুভবুদ্ধির উদয় হলে মালদ্বীপ খাল কেটে চীনের কুমির ডাকবে না। এখন সাময়িকভাবে রপ্তানি বাণিজ্যে রাশ, ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্কের পরিবর্তন আনে কি না- সেটাই দেখার।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ