Tech-Talk
আরে আরে ওই লিঙ্কটায় ক্লিক করবেন না। ওটা স্প্যাম কল, ভুল করেও ধরবেন না। ব্লুটুথ অন করে রাস্তায় বেরবেন না। ওটা হ্যাকারদের ট্রাম্প কার্ড। কেন বলছি এসব? ধরুন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ই-কমার্স ওয়েবসাইট তোলপাড় করে একটা স্টাইলিশ ব্লুটুথ এয়ারপড কিনলেন। এরপর ফোন ব্লুটুথ অন করে এয়ারপড কানেক্ট করে মিউজিক… পথে ঘাটে রাস্তায়, দোকানে বাজারে, বাসে ট্রামে যেখানে যাচ্ছেন, মাদুলির মতো এয়ারপড নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছেন। এদিকে আপনার খেয়ালই নেই যে ফোনের ব্লুটুথ অন। কিছুক্ষণ পর দেখলেন আপনার এই অসাবধানতার জন্য যাবতীয় পার্সোনাল ডেটা, সব পাবলিক হয়ে গেছে। মানে আপনার ফোনটা হ্যাক করা হয়েছে। কি করবেন তখন? হাত কামড়ানো ছাড়া আপনার কাছে আর কোন রাস্তাই খোলা নেই। কারণ যতক্ষনে আপনি সেটা খেয়াল করেছেন, ততক্ষণে হ্যাকারের ব্লু-বাগিং ডান। ব্লু-বাগিং? এই ব্লু-বাগিংটা আবার কি? তো আজ আমরা আপানাদের জানাবো, কি এই ব্লুবাগিং এবং এখান থেকে বাঁচবেন কি করে?
ভুয়ো ফোন কল কিংবা ভুয়ো ইউআরএল লিঙ্ক দিয়ে ফোন হ্যাকিং-এর মতো কাজ আমরা আগেও শুনেছি। কিন্তু আপনার ফোনের ব্লুটুথ ফিচারটি দিয়েও যে হ্যাকার এন্ট্রি নিতে পারে, ভেবে দেখেছেন কখনও? হ্যাঁ এক্ষেত্রে আপনি প্রশ্ন তুলতেই পারেন যে ব্লুটুথ একটা সারটেন ডিসটেন্স অবধি কাজ করে, এই ধরুন ১০ মিটার বা ১৫ মিটার। তাই দূরে চলে গেলে আর কোন রিস্ক নেই। ওসব ভেবে নিজেকে মনসান্ত্বনা দিতে পারেন, কিন্তু হ্যাকারকে আটকানো জাস্ট ইম্পসিবল। দেখুন আইন থাকলে আইনের ফাঁদও রয়েছে। ব্লুটুথ অ্যান্টেনা ব্যবহার করে আপনার থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে থেকেও হ্যাকার কিন্তু অসাধ্য সাধন করবেই। তাই পথে ঘাটে ব্লুটুথ এয়ারপড ব্যবহার করছেন ঠিক আছে, কিন্তু একটু সাবধানে।
এবার চলে আসি আসল প্রসঙ্গে। কি এই ব্লু-বাগিং। আর আট থেকে আশি, এই ব্লু-বাগিং নিয়ে এত কনসার্ন কেন? নামটা শুনেই বুঝতে পারছেন যে ব্লুটুথের সঙ্গে এর একটা লিঙ্ক রয়েছে। ঠিক ধরেছেন, ব্লুটুথ অ্যাক্টিভ ডিভাইস ব্যবহার করে আপনার স্মার্ট ডিভাইসটি হাইজ্যাক করার জন্য হ্যাকাররা যে সমস্ত উপায় ব্যবহার করে থাকেন, তাদের মধ্যে ব্লু-বাগিং অন্যতম। বেসিকালি ব্লুটুথ সাপোর্ট আছে এমন ল্যাপটপগুলোকে টার্গেট করেই হ্যাকাররা এগিয়েছিল। এখন ফোনে যেহেতু ব্লুটুথ অ্যাক্টিভিটি বেড়েছে, তাই এদিকেই ঝুঁকেছে হ্যাকাররা। আর আপনার স্মার্ট ডিভাইসটি একবার যদি ব্লু-বাগড হয়ে যায়, তাহলে আর রক্ষে নেই। যাবতীয় কল ডাইভার্ট হয়ে যাবে হ্যাকারের কাছে। হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার- সমস্ত মেসেজ পড়তে পারবেন হ্যাকাররা। এবং ব্যাঙ্কিং বা পার্সোনাল সব ইনফরমেশন চলে যাবে হ্যাকারের পাঁচ আঙ্গুলের মধ্যে।
সাইবার সিক্যুরিটি এক্সপার্টরা বলছেন, যে সমস্ত অ্যাপ্লিকেশনগুলি আপনার ফোন বা ল্যাপটপকে ওয়ারলেস এয়ারপডের সঙ্গে যুক্ত করে সেগুলো ইউজারের কনভারসেশন রেকর্ড করতে পারে। এবং এগুলো সাংঘাতিক ঝুঁকিপূর্ণ। দাঁড়ান দাঁড়ান। এটুকুতে গলদঘর্ম হলে হবে? ক্লাইম্যাক্স তো এখনও বাকি… কি ভাবছেন? অ্যাপলের ফোন ইউজ করছেন, সো রিস্ক লো? আজ্ঞে না। জেড প্লাস সিক্যুরিটি দেওয়া সত্ত্বেও অ্যাপল ডিভাইসও ব্লুবাগড হতে পারে। আর তখন, কথা হবে আপনার আর সিরির, শুনবে মিঃ হ্যাকার। দ্য হিন্দুর প্রকাশিত সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট বলছে, ব্লুটুথ অ্যাক্সেসসহ যেকোনো অ্যাপ, এয়ারপডস বা বিট হেডসেট ব্যবহার করার সময় আপনার আর সিরির কনভারসেশনে থার্ড পার্টি হিসেবে উপস্থিত থাকতে পারেন অ্যাপ ডেভলপাররা।
তাহলে কি ডিসিশন নিচ্ছেন? সখের হেডসেটটা বয়কট করবেন? না না। ওসব দরকার নেই। সিম্পল, রাস্তাঘাটে যেমন ওপেন ওয়াইফাই ব্যবহার করাটা রিস্কি তেমনই, ব্লুটুথ অন করে রাস্তায় না বেরলেই হল। আননেসেসারিলি ব্লুটুথ অন করে রাখবেন না। আর ব্লুটুথ ডিভাইসগুলোও ডিসকানেক্টেড করে রাখবেন। অবশ্য বেশ কিছু সাইবার সিক্যুরিটি এক্সপার্ট আবার ফোন বা অন্য স্মার্ট ডিভাইস আপডেট করার পরামর্শও দিচ্ছেন। নিজেও আপডেটেড থাকুন, ফোনটাও আপডেটেড রাখুন, সঙ্গে দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ