Story
বাঙালি মানেই আরামপ্রিয়, বাঙালি মানেই অলস। এই ধারণা বহুদিনের। আবার এও শোনা যায় যে মাছেভাতে বাঙ্গালির দ্বারা নাকি ব্যবসা হয় না। কারণ বাঙালি ঝুঁকি নিতে সাহস পায় না। কিন্তু বাস্তব তো অন্য কথা বলে। প্রচুর উদাহরণ আছে সফল বাঙালি ব্যবসায়ীর। আসল কথাটা হল, if there is will there is way too. মানে ইচ্ছেটাই বড় কথা। চলুন আজ আমরা এরকমই এক সাধারণ মানুষের সফল হওয়ার গল্প শুনব, যিনি বাঙ্গালিদের নিয়ে প্রচলিত ভাবনাচিন্তা জাস্ট ভেঙে দিয়েছেন।
কাঁথির দেবকুমার শতপথী। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বেশ কিছু উদ্যোগপতিদের মধ্যে এই নামটি এখন ভীষণভাবে পরিচিত। তার কাজুবাদামের ব্যবসা এখন সারা ভারত জুড়ে। শুরুটা প্রায় ২৪/২৫ বছর আগে। শুরুর দিকে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করলেও আজ তিনি নিজস্ব কারখানা খুলে জমিয়ে ব্যবসা করছেন ঐ এলাকায়। কীভাবে শুরু করলেন? শুনুন সেই গল্প…
দেবকুমার বাবু এখন মস্ত এক কাজু প্রসেসিং ইউনিটের নেতৃত্ব দেন। সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কাঁচামাল এনে নিজে আলদা করে আরম্ভ করেন কাজুর এই প্রসেসিং ব্যবসা। সরকারি সাহায্য পেয়েছেন ২৫ লক্ষ টাকা। এই টাকাকে কাজে লাগিয়ে এলাকার স্থানীয় মানুষদের নিয়ে শুরু হয় তার নিজস্ব কাজু প্রসেসিং সেন্টার। বর্তমানে প্রায় দেড়শরও বেশি পরিবার তার এই কাজু প্রসেসিং ইউনিটের ওপর নির্ভরশীল।
প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে শুধুমাত্র কাঁথি অঞ্চলেই প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান করিয়েছেন দেবকুমার বাবু। এই কাজু প্রসেসিং এর কাজটি কিন্তু খুব একটা সহজ বিষয় নয়। বীজ কেনা থেকে শুরু করে মার্কেটিং পর্যন্ত প্রায় ৫টি স্তরে এই প্রসেসিং হয়।
মার্কেটে এখন ড্রাই ফ্রুটের হাই ডিম্যান্ড। আর সেখানে দাঁড়িয়ে কাজুর প্রসেসিং-এর ব্যবসা যে দু-হাত ভরিয়ে রোজগার দেবে, সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু সবকিছুরই তো ভালো-মন্দ থাকে।
মুম্বাইয়ের শপিং মল হোক বা দিল্লির পাইকারি বাজার, কোলকাতার বড়বাজার বলুন কিংবা আসামের কোন নামকরা মার্কেটে গিয়ে আপনি অনায়াসেই খুঁজে পাবেন কাঁথি-র এই প্রসেসড কাজু। দেশজোড়া ব্যবসা দেবকুমারবাবুর। আর সারা বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকার ব্যবসা করেন তিনি। টাকার অঙ্কটা নেহাত মন্দ নয়।
কৃষি-প্রধান জেলায় বসে ব্যবসা করার সাহস দেখানো নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে অর্থনৈতিক কারণে ব্যবসা বাড়ানোর বিষয়ে ভেবেও পিছু হটছেন বাংলার এই প্রত্যন্ত ব্যবসায়ী। তার থেকে তার ব্যবসার ওপর নির্ভর করে যেসব পরিবারের সংসার চলে তাদের সুরক্ষা নিয়ে তিনি বেশি চিন্তিত। আর এইখানেই শতপথী বাবু অন্যদের থেকে আলাদা। আজকের নতুন প্রজন্ম যারা নিজেদের উদ্যোগে ব্যবসা করে জীবনে দাঁড়াতে চান শতপথীবাবু নিঃসন্দেহে তাদের কাছে খুব বড় এক inspiration.
প্রসূন ব্যানার্জি
পূর্ব মেদিনীপুর