pujo scope 2022
ব্রাজিল রিও দি জানেরিও কার্নিভাল। জাপানের চেরি ব্লসম ফেস্টিভ্যাল, যাকে জাপানি ভাষায় বলা হয় সাকুরা বা দ্য ওয়েলকামিং অফ স্প্রিং। একটি হয় এপ্রিলে। আরেকটি হয় বসন্ত শুরুতে। আর কোথাও গিয়ে যেন এই দুটো ফেস্টিভ্যাল এক সুতোয় গাঁথা হয় বাংলার একটি ফেস্টিভ্যালের সঙ্গে। আশ্বিনের শারদ প্রাতে- দুর্গা পুজো।
রিও কার্নিভাল, চেরি ব্লসম ফেস্টিভ্যাল এবং দুর্গা পুজো এই তিনটি ফেস্টিভ্যাল- যাদের কালচারাল ডিফারেন্স অনেক, তবু দিনের শেষে এই তিনটি ফেস্টিভ্যাল মিলে গেছে কোথাও গিয়ে এক সুরে। কিসে জানেন? ইকোনমিক আপলিফটমেন্ট, আর তুমুল কর্মসংস্থান।
নেট দুনিয়ায় একটি ক্লিকে দুর্গা পুজো নিয়ে দেখতে পাবেন কোটি কোটি ভিডিও, অগণিত মানুষের মাথা আর পা, ষষ্ঠী থেকে দশমি পর্যন্ত প্যান্ডেল হপিং-এর নেশা প্রচুর খাওয়া দাওয়া, বাড়ির পুজো, রাজবাড়ির পুজো, থিমের পুজো। এই কদিন কলকাতা শহরে যেন সন্ধ্যে নামে না। সূর্য ডুবলে জ্বলে ওঠে কলকাতা আর সেই আলোতে ফুটে ওঠে শিল্পীর ভাবনা। যেন পুরোদস্তুর ক্রিয়েটিভ রেসে সামিল হন সকলে। এই ক্রিয়েটিভ রেস থাকে প্রতিমা নির্বাচন থেকে প্যাণ্ডেল তৈরি, আলো-ছায়ার খেলা থেকে জাঁকজমকে ঠাসা- সর্বত্র।
তাই দুর্গা পুজোর এই বিষয়টা নিয়ে চর্বিতচর্বণ প্রতিবেদন তৈরি করার কোন ইচ্ছে নেই। বরং এবারে আমরা নজর দেব কিভাবে একটা ফেস্টিভ্যাল দিনের শেষে একটা রাজ্যের ইকোনমিকে এতটা বুম দিতে পারে। কিভাবে একটা ফেস্টিভ্যাল কোটি কোটি টাকার টার্নওভার নিয়ে আসতে পারে। কিভাবে একটা ফেস্টিভ্যাল কর্মসংস্থানে জোয়ার আনতে পারে, কিভাবে একটা ফেস্টিভ্যাল ব্র্যান্ডিং থেকে প্রোমোশন সবকিছুই তুলে ধরতে পারে কর্পোরেটের সহায়তায়। কিভাবে চলে এই র্যাট রেস? কেনই বা প্রয়োজন পড়ে। আসুন, দুর্গা পুজোর এই স্পেশ্যাল প্রতিবেদনে নজর দেওয়া যাক ইকোনমিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। কিন্তু বর্তমানের সময়কাল ধরতে গেলে ইতিহাসের পাতা না ওলটালে হয় বলুন? তাই আগে আবেগ। চলুন, একটু ইতিহাসের দিকে নজর দেওয়া যাক।
১৭৭০ সাল। পলাশির যুদ্ধে পরাস্ত সিরাজ-উদ-দউল্লা। ক্লাইভের অনুরোধে মানুষের আবেগ ফেরাতে আন্দুল রাজবাড়িতে শুরু হল দুর্গা পুজো। পুজো শুরু করছেন রাজা রামলোচন রায়। এই রাজা উপাধিটা তিনি পেয়েছেন ক্লাইভের সুপারিশে। উপাধি দেন শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম। সপ্তমীর সকাল। এমন সময় রাজবাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল ক্লাইভের ফিটন। সকলে অবাক। আন্দুল রাজবাড়িতে দুর্গা পুজো দেখতে এসেছেন স্বয়ং লর্ড ক্লাইভ! সঙ্গে নিয়েও এসেছেন অনেক কিছু। শোনা যায় ১০ হাজার টাকার সন্দেশ, ১০৮-টি পদ্ম, আর প্রণামি হিসেবে এনেছেন ১ হাজার টাকা। ইতিহাসের ঐ সময় টাকার অঙ্কটা নেহাত কম নয়। তখন আন্দুল জঙ্গলাকীর্ণ গরীব গ্রাম বাংলার মানুষের বসতিতে পূর্ণ। ক্লাইভের এমন অনুদানের কথা হয়ত আপনারা কয়েকজন শুনেছেন। তাহলে ইতিহাসের আরেকটা পাতা ওলটান যাক।
তাহিরপুরের কংসনারায়ণ রাজবাড়ি। অনেকেই বলেন বাংলায় প্রথম দুর্গা পুজো চালু হয় এই তাহিরপুর থেকেই, ৮৮৭ বঙ্গাব্দে। সেই হিসেবে ধরলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মতে ঐ ১৪৮০-৮১ সালের আশেপাশে। রাজার নাম কংস নারায়ণ রায়। আশ্বিনের মহাষষ্ঠীর সকালে অকালবোধনের মাধ্যমে শুরু হল দুর্গা পুজো। দুর্গা প্রতিমার গায়ে উঠেছিল সোনা আর মণিমুক্ত দিয়ে সাজানো গয়না। মনে করা হয়, আজকের হিসেবে সেই পুজোর আনুমানিক খরচ ছিল প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। কতটা সত্যি আর কতটা মিথ্যে- এসব প্রশ্নে যাবার কোন মানে নেই। তবে খরচের বহর দেখে মনে হয় এ যেন সত্যিই রাজার পুজো। ঐশ্বর্যের পুজো, ক্ষমতা দেখানোর পুজো।
পুজোর দামামা বেজেছে ওপার বাংলাতেও। দুর্গার আরেকরূপ দেবী ঢাকেশ্বরী। সিপাহী বিদ্রোহের আগে ঐ ১৮৩০ সাল নাগাদ ঢাকার বড় ব্যবসায়ী নন্দলাল বাবুর মৈসুণ্ডির দুর্গাপুজো, সকলের নজর কেড়ে নিল। আচ্ছা এখানেই বলে রাখি, দেবী ঢাকেশ্বরীর নামেই নাকি আজকের বাংলাদেশের রাজধানীর নাম হয়েছে ঢাকা। আর ঢাকার কথা বললাম এদিকে কলকাতার কথা হবে না? আবেগ থেকে অর্থনীতি সবই যে ধীরে ধীরে তিলোত্তমার বুকে বেড়ে উঠেছে।
কলকাতার প্রাচীন দুর্গোৎসব সম্ভবত সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের পুজো। বড়িশার আদি বাসভবনে। ১৭৫৭ সালে শুরু হল শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো। শুরু করলেন রাজা নবকৃষ্ণ দেব। সেই সময় কিন্তু শাস্ত্রাচার এবং পুজোর রমরমা থাকলেও গৌণ হয়ে যেত কোথাও গিয়ে, যখন নজর পড়ত বৈভবের দিকে। ইংরেজ সাহেবরা আসবেন। বসবে মুসলমান বাইজীর আসর। চলবে সুরাপানের ফোয়ারা। আপনারা যদি খেয়াল করেন দেখবেন, সেই সময় দুর্গা পুজো কিন্তু মূলত রাজবাড়ির পুজো হিসেবেই অধিক সমাদৃত ছিল। রাজবাড়ির দুর্গা পুজোকে রাজকীয় করতে রাজারা কোন কসুর করতেন না। সঙ্গে এটাও দেখা হত, কোন পুজোয় কতজন ইংরেজ সাহেবদের সমাগম হচ্ছে। মানে যত সাহেবের পা, ততই পুজোর রমরমা।
আর সেই সময় থেকেই ধীরে ধীরে দুর্গা পুজো তৎকালীন বাবু সম্প্রদায়ের মর্যাদার প্রতীক হিসেবে ধরা দিল। এদিকে দুর্গা পুজো সাধারণ মানুষের আবেগে ঠাঁই পেলেও, তাঁরা চট করে দর্শন পেতেন না। অর্থাৎ দুর্গা পুজো যেন কোথাও গিয়ে সাধারণ মানুষের পুজো তখনো হয়ে ওঠে নি। কেউ যদি সেই পুজো দেখার জন্য রাজবাড়ির দরজায় গিয়ে দাঁড়াতেন, তাহলে সহ্য করতে হত দ্বাররক্ষীর শাসানি আর অপমান। আর এটাই যেন এক নিমেষে দুর্গাপুজোকে নামিয়ে আনল সটান রাজপরিবার থেকে একেবারে সাধারণের মধ্যে।
সাল ১৭৬১। মতান্তরে ১৭৫৮। হুগলীর গুপ্তিপাড়ায় সেন বংশের রাজাদের বংশধররা করছেন বনেদী জগদ্ধাত্রী পুজো। সেই পুজো দেখতে এলেন কয়েকজন। কিন্তু তাঁদের তাড়িয়ে দিল দ্বাররক্ষীরা। অপমান সহ্য করতে না পেরে তাঁরা ঠিক করলেন নিজেরাই পুজো করবেন। প্রতিবেশীদের থেকে চাঁদা তুলে বারোজন মিলে শুরু করলেন পুজো। যে পুজো কোনভাবেই উচ্চ-নীচের ভেদ করে না। যে পুজো সর্বসাধারণের জন্য। বলা হয়, বারো বন্ধু বা ইয়ার পুজোর এই ধারা শুরু করেছিলেন। তাই নাম হয় বারোয়ারি পুজো। অবশ্য সেই পুজো দুর্গার ছিল না। তাঁরা পুজো করেছিলেন জগদ্ধাত্রীর। দেবীর নাম ছিল বিন্ধ্যবাসিনী। ১৭৫৯ সালে দ্য বেঙ্গল গেজেটে এই খবর পাবলিশড হয়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিভাবে যেন সেই বারোয়ারি পুজো ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল সর্বত্র। তবে কলকাতায় বারোয়ারি পুজো চালু করে সনাতন ধর্মোৎসাহিনী সভা। সাল ১৯১০। আজ যে রাস্তার নাম বলরাম বসু স্ট্রিট সেখান থেকেই পথ চলা শুরু হয় কলকাতার বারোয়ারি দুর্গা পুজোর। ১৯১১ সালে চালু হয় শ্যামবাজারে সিকদার বাগানের পুজো। ১৯১৯ সালে শুরু হয় নেবুবাগানের পুজো। আজ যেটা বাগবাজার সার্বজনীন পুজো নামে খ্যাত। তারপর ধীরে ধীরে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন দেবী দুর্গা।
এরপর গঙ্গার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে হাওয়া। পাল্টেছে সমাজের ছবি। সমাজ বদলের এই ভাষার প্রভাব পড়েছে দুর্গা পুজোতেও। তবে একটা বিষয় কিন্তু প্রথম থেকে রয়েই গিয়েছে। দেবী দুর্গার আরাধনার সঙ্গে বৈভব এবং ক্ষমতার যে যোগসূত্র ছিল, সেই বাঁধন আলগা হয়নি আজও। বদলানো সমাজ এবং বদলে যাওয়া অর্থনীতি যেন সবদিক থেকে আগাগোড়া মুড়িয়ে দিয়েছে দুর্গা পুজোকে। তাই পুজোর ভাবধারায় দুর্দান্ত বদল এলেও মুছে যায় নি ঐ বৈভব দেখানোর প্রচ্ছন্ন রীতি। এখন রাজবাড়ির পুজো সাবেকি পুজোয় টার্ন নিয়েছে। সঙ্গে কলকাতা মহানগরে থিমের পুজোর বাড়বাড়ন্ত। আর যেদিন থেকে ভক্তির থেকেও চাকচিক্যের থাবা বেশি পড়তে শুরু করল, সেদিন থেকেই যেন আরও জোরে ঘুরতে শুরু করল অর্থনীতির চাকা। দুর্গা পুজো সর্বস্তরের সর্বসাধারণের আবেগ। লক্ষ লক্ষ মানুষের পথচলা, মায়ের আরাধনা, ইচ্ছেপূরণের আকুতি- এই সবকিছুই দুর্গা পুজোর ভাইবকে গ্লোবাল এরিনায় এতো হাইলাইট করেছে। এবং যতদিন এগোচ্ছে ততই যেন সেই ভাইব আরও বেশি করে নাড়া দিচ্ছে। আর যেখানে একটি উৎসবকে কেন্দ্র করে এতো মানুষের ঢল সেখানে ব্যবসা, প্রোমোশন সবই যে দুর্দান্ত হবে অর্থাৎ র্যাট রেস। হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ- সেটাই তো স্বাভাবিক। তার কারণ কী জানেন?
২০১৩ সালে বাংলায় দুর্গা পুজোর দরুন ইকোনমির অঙ্কটা পৌঁছে যায় ২৫ হাজার কোটি টাকায়। তথ্য প্রকাশ করে অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বারস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া। ২০২১ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিল দুর্গাপুজো নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। দেখা যায় সেই বছর ব্যবসা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। ২০২২ সালে ব্যবসার অঙ্কটা আরও এক ধাপ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ হাজার কোটি টাকায়। অনেকে বলছেন অঙ্কটা ৫০ হাজার কোটিতেও পৌঁছতে পারে। যেখানে চারদিনের একটি মহোৎসব বাংলার ইকোনমিতে এমন মহৎ কন্ট্রিবিউশন রাখছে তার হাওয়া যে সর্বত্র পড়বেই। তারই একটা হিসেব পাওয়া যাচ্ছে কুমোরটুলিতে। কুমোরটুলিতে ছোট বড় মিলিয়ে মৃৎশিল্পীর সংখ্যা ৬০০ মতন। আমরা যদি ২০১৯ সালের তথ্য হাতে নিই, তাহলে দেখব, সেই সময় শুধু কুমোরটুলিতে ব্যবসা হয় সর্বমোট ১০০ কোটি টাকার। ২০২২ সালে সেটা বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছয় ১৫০ কোটি টাকায়। পোস্ট কোভিডের পর দাম বেড়েছে সব জিনিসের। সকল কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ভালোরকম। ফলে সার্বিকভাবে খরচ বেড়েছে। আগে যেখানে কুমোরটুলির এক মৃৎশিল্পীর পারিশ্রমিক ছিল দৈনিক ১ হাজার টাকা থেকে ১২০০ মতন সেখানে পারিশ্রমিক বর্তমানে দৈনিক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০০ টাকা। আর হেল্পারদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৮০০ টাকা মতন।
যত জিনিসের দাম বাড়ুক না কেন, যতই আর্থিক পরিস্থিতি ঘোরালো হোক না কেন দুর্গা পুজোর রমরমা ফিকে হয়নি একটুও। বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। রিটেলার এবং হোটেলের এই সময় ব্যবসা বৃদ্ধি পায় ৩০-৪০%। রুম অকুপেনসি থাকে ৮০-৯০ শতাংশ মতন। ২০২২ সালে প্রায় ৪০% বৃদ্ধি পেয়েছিল ২০১৯ এর নিরিখে। রিটেলের পর এবার যদি আর কোন সেক্টর দারুণভাবে সমৃদ্ধ হয় সেটা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ। যা শেয়ার করে বাংলার এই সময়ে উঠে আসা ইকোনমির প্রায় ৭-৮ শতাংশ নিজেই। ২০২০ সালে অঙ্কটা দাঁড়িয়েছিল ২ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকায়। একটা ছোট্ট তথ্য দিচ্ছি। সাউথ সিটি মলে গত বছর যেখানে শুধু সেপ্টেম্বর মাসে মানুষের পা পড়েছিল প্রায় আড়াই লাখ মতন, সেখানে অক্টোবরে পুজো শুরুর আগে সংখ্যাটা পৌঁছে যায় ৫ লাখে। আর সেটা মাসের প্রথম ৫ দিনেই। পুজো শুরুর আগে প্রথম ৬-৭ দিনে সাউথ সিটির ব্যবসা পৌঁছে গেছিল ৭ কোটি টাকায়। অ্যাক্রোপলিস মলে ব্যবসার গ্রোথ হয়েছে ২৫%। পঞ্চমী থেকে দশমীর মধ্যে মলে এসেছিলেন প্রায় ২ লক্ষ মানুষ। আর যত বেশি মানুষ তত বেশি ইঁদুর দৌড়। এই দৌড় ব্র্যান্ডের। এই দৌড় মানুষের নজরে পড়ার। ২০২২ সালে বিজ্ঞাপন বাবদ খরচের অঙ্কটা বৃদ্ধি পেয়েছিল ৪৫-৫০% মতন। ব্রিটিশ কাউন্সিল বলছে, ২০১৯ সালে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন বাবদ অঙ্কটা দাঁড়িয়েছিল ৫০৪ কোটি টাকায়। এবং যত দিন যাচ্ছে ততই যেন এই অঙ্কটা বহরে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আর এই সুবিশাল অর্থনীতি তৈরির অন্যতম ধারক এবং বাহক হল ট্যুরিস্ট। বিভিন্ন রাজ্য থেকে এতো এতো মানুষের পা পড়ছে যা বাংলার ইকোনমির সর্বস্তরে তার প্রভাব পড়ছে দুর্গা পুজোর সময়। সব মিলিয়ে এই কর্মযজ্ঞ যেন দেবী দুর্গার আবাহনকে আরও জোরালো করে তুলেছে। বিজনেস ইনসাইডারের রিপোর্ট বলছে, দুর্গা পুজো শুধু ব্যবসার চাকা সচল রাখে নি একইসঙ্গে তৈরি করেছে দুর্দান্ত কর্মসংস্থান। ২০২২ সালে শুধুমাত্র এই পুজোকে কেন্দ্র করেই প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। ফলে কর্পোরেট সংস্থাগুলো এই পুজোর মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছে না। ছোট, বড় সকল কর্পোরেট সংস্থাই আজ দুর্গা পুজোকে পাখির চোখ করছে। তারা স্পন্সরশীপ এবং অন্যান্য খরচখরচা বাবদ অঙ্কটা নিয়ে গিয়েছে ৫০০ কোটি টাকায়।
বন্ধুরা, যে তথ্য তুলে ধরা হল সেটা থেকে পরিষ্কার সেই অতীত কাল থেকেই দুর্গা পুজো কিভাবে বাংলার ইকোনমিকে সমৃদ্ধ করে আসছে। আকারে এবং বাহারে যার প্রভাব আজ সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে পৌঁছে যাচ্ছে, তার প্রভাবে বাংলার অর্থনীতি মজবুত তো হবেই। অনেকেই মনে করছেন এই বছর অঙ্কটা হয়ত পাঁচ দিনে পৌঁছতে পারে ৭০ হাজার কোটি টাকায়। ভেবে দেখুন দেখি, দুর্গা পুজো শুধু আবেগের বশে চলে এই কথাটা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে একেবারে সত্যি নয়। কারণ দুর্গা পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা। সেটা শিল্পীর ভাবনা থেকে ব্র্যান্ডিং-এর মুনশিয়ানা হতে পারে আবার কর্মসংস্থান থেকে একটি বেলুনওলার গান। দুর্গা পুজো সব করতে পারে। অসহায় মানুষকে নতুন শক্তি দিতে পারে। হেরে যাওয়া মানুষের মনে পুঁতে দিতে পারে আশা আকাঙ্খার বীজ। ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি এবং সাহস সবই দিতে পারে। দুর্গা শক্তির প্রতীক। তিনিই শক্তির এক সনাতনি রূপ। যার রূপে, গুণে মুগ্ধ আট থেকে আশি সকলেই। যার বর সাদরে গ্রহণ করতে চান সকলেই। সুতরাং তাঁকে নিয়ে মানুষের আবেগ তো থাকবেই। সেটা ভাঙা সাইকেলওলা হতে পারেন আবার লাখ টাকার গাড়িতে চরা কোন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হতে পারেন। দেবীর কাছে উচ্চ-নিচের কোন যে বিভেদ নেই। আর নেই বলেই তো গরীব থেকে বড়লোক সকলেই আজ মেতে ওঠেন নিজের নিজের মতন করে। তাই তো বলছি, আবেগ না থাকলে কি আর অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়? আপনারাই বলুন না…