Bangladesh
বাংলাদেশে পিঁয়াজ নিয়ে হাহাকার
ভারত থেকে বাংলাদেশে বন্ধ পিঁয়াজ রফতানি
পড়শি দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম
নির্বাচনের মুখে অস্বস্তি বাড়ল হাসিনা সরকারের
কিন্তু ভারত সরকারের এমন নির্দেশ কেন, হঠাৎ?
এমনিতেই বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ১০০ টাকা বা ১২০ টাকা কেজি দরে। তারপর হঠাৎ করেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে হুলুস্থুলু পড়ে যায়। কারণ দেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে, পিঁয়াজের দাম কোথাও বেড়েছে কেজি প্রতি ৮০ টাকা তো কোথাও বেড়েছে ১২০ টাকা। তারপর দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পিঁয়াজের দাম কেজি প্রতি বাড়ল কোথাও ২২০ টাকায়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে যে পিঁয়াজের ঝাঁঝে কার্যত নাকের জলে, চোখের জলে অবস্থা সাধারণ মানুষের। তারপরেই প্রশ্ন উঠছে ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের কারণেই বাংলাদেশে পিঁয়াজের এতটা মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। তাহলে একটা প্রশ্নঃ কেন ভারত সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিল? তাও আবার যখন বাংলাদেশে নির্বাচন প্রায় দোরগোড়ায়।
সামনের বছর ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে হবে জাতীয় সংসদের নির্বাচন। এমনিতেই গত কয়েক মাস ধরে নির্বাচনের আবহে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতি উত্তপ্ত। হাসিনা সরকারের অবস্থান মজবুত থাকলেও বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে দুশ্চিন্তার মেঘ ঘনিয়েছে। এরই মধ্যে নতুন করে একটা অস্বস্তি তৈরি হল হাসিনা সরকারকে কেন্দ্র করে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পিঁয়াজের দাম। ভারত এর আগেও অগাস্ট মাসে পিঁয়াজ রফতানির উপর ৪০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছিল। সেই সময় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা পিঁয়াজের দাম অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। পিঁয়াজ কিনতে গিয়ে নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছিল বাংলাদেশের আমনাগরিকদের। বাজারে পিঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতা চরমে ওঠে। সেই সময় বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, ভারত সরকারকে তারা অনুরোধ করেছে আলু বা পিঁয়াজের মত পণ্য রফতানি রদের কয়েক সপ্তাহ আগে যেন জানিয়ে দেওয়া হয়। তাহলে বাংলাদেশ সরকার অন্য কোন দেশ থেকে আলু বা পিঁয়াজ আমদানির কথা ভাববে। কিন্তু পণ্য পরিবহনে যে ভারত থেকে করাটাই সবথেকে সুবিধের। তাই বাংলাদেশ যে কোন পণ্য আমদানি করার জন্য চেয়ে থাকে ভারতের দিকে। পিঁয়াজ বা আলুর ক্ষেত্রেও সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হয় না। এবার সেই কথাই আগাম জানিয়ে দিয়েছে ভারত।
আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পিঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। এই সিদ্ধান্ত ভারত নেয় ৭ ডিসেম্বর। তারপরেই দেখা যায়, বাংলাদেশে হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে পিঁয়াজের দাম। চরম অস্বস্তি তৈরি হয়েছে হাসিনা সরকারের মধ্যে। উদ্বেগ জমা হচ্ছে আমজনতার মধ্যেও। যেটুকু জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই নাকি পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। হাসিনা সরকার এই মুহূর্তে এমন কোন পদক্ষেপ নেবে না, যার নেগেটিভ প্রভাব পড়তে পারে আসন্ন নির্বাচনে। তার জন্য চিনের কাছ থেকে পিঁয়াজ আমদানির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তারপর আম বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে ভারত বিরোধী মনোভাব জমা হলেও হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলঃ ভারত কেন পিঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করল?
পিঁয়াজের দাম সবসময় নিজের দেশে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চ্যা কেন্দ্র। আমাদের কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির অন্যতম কারণ খরিফ ফসল তুলতে দেরি হওয়া। আসলে খরিফ মরশুমে বৃষ্টি কম হয়েছে। ফসলের ক্ষতি হয়েছে ভালোরকম। ফলে নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে যে পিঁয়াজ বাজারে চলে আসার কথা ছিল, সেই পিঁয়াজ এসে পৌঁছয় অনেক দেরিতে। ইতিমধ্যেই কৃষকদের কাছ থেকে পিঁয়াজ কিনছে সরকার। কৃষকদের কুইন্টাল প্রতি দেওয়া হচ্ছে আড়াই হাজার টাকা মতন। এখানেই জানিয়ে রাখি, এই বছর প্রাথমিক পর্যায়ে ৫.১০ লক্ষ টন পিঁয়াজ কেনার পরিকল্পনা নেয় ভারত সরকার। তারপর সেটা আরও বাড়িয়ে করা হয় ৭ লক্ষ টনের বেশি। জানা গিয়েছে এই বাড়তি দু লক্ষ টনের পিঁয়াজ কেনার জন্যই সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে। বাড়তি পিঁয়াজ কিনে সেটা দেশের বাজারে ছাড়া হচ্ছে, যাতে প্রথমেই আমনাগরিকের সুবিধা হয়। তবে অনেকেই এর পিছনে আরেক রাজনীতি দেখছেন। তাঁরা মনে করছেন, সামনের বছর লোকসভা নির্বাচন। সময়টা তাই বড় ক্রুশিয়াল মোদী সরকারের জন্য। তাই ভারত সরকার কোনভাবেই চাইছে না দেশে এখন মোদী বিরোধী মনোভাব তৈরি হোক। আর যে কারণেই পিঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি যা ভারতে ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়াচ্ছিল, ক্রমেই সেটা ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এছাড়া তুর্কি বা মিশরের মত অন্যান্য দেশ যারা পিঁয়াজ রফতানি খুব বড় মাত্রায় করে থাকে, তারাও রফতানির উপর জারি করে বিধিনিষেধ। সত্যি বলতে কী, ভারতের বাজারে পিঁয়াজের দাম নাগালের মধ্যে থাকলেও, রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার কারণে বাংলাদেশের মত অন্যান্য পড়শিদেশেও পিঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি চোখে পড়ছে। তার মধ্যে রয়েছে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটানের মত দেশ। তবে বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হবার মত অবস্থাও নেই। বলছে বাংলাদেশে পিঁয়াজের মজুদ একটু কম থাকলেও সঙ্কটজনক জায়গায় সেটা পৌঁছয় নি। সরকার বলছে কোন কোন অসাধু ব্যবসায়ী নাকি অতিরিক্ত মুনাফার জন্য হাতে থাকা পিঁয়াজ বিক্রি করতে চাইছে না সরকার। আর যে কারণেই মূল্যবৃদ্ধি এবং কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের বাজারে। আপনাদের কি মনে হয়? মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন। আর নতুন হলে ভুলবেন না সাবস্ক্রাইব করতে আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ