Trending

জিনপিং-এর আপন দেশে আশঙ্কার মেঘ নতুন করে জমা হচ্ছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ পড়েছে যথেষ্ট সংকটে। যার দরুন নেগেটিভ প্রভাব পড়তে চলেছে দেশটায়। আর এই নিয়েই এবার সমস্যা দিনে দিনে আরও গভীর সংকট নামছে। কী হচ্ছে চিনে? কেনই বা দেশটায় জমা হচ্ছে অর্থনীতির সংকট? আজকের ছোট্ট প্রতিবেদন এই নিয়েই।
প্রি-কোভিডের কথা যদি ধরি, তাহলে বলতেই হবে যে চিনের ইকোনমিক সিচুয়েশন সেই সময় ছিল যথেষ্ট মজবুত। শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য মজুরি পাচ্ছিলেন। পড়াশুনো শেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের হাঁ করে বসে থাকতে হত না। চাকরি ছিল দুয়ারে। কারণ চিনের ইকোনমির ভাগ্য সেই সময় ছিল একেবারে তুঙ্গে। অবশ্যই এর পিছনে কাজ করেছে বিশ্ব জোড়া চিনের কদর এবং চিনের বাজার। কিন্তু চিনের পরিস্থিতি পাল্টে গেল একেবারে কোভিডের পরে। অতিমারি ঝড় সামাল দেবার জন্য চিন সরকার তখন বেশ কিছু পলিসি নেয়। এতে পরিস্থিতি আরও হাতের বাইরে যেতে শুরু করে। এখন পরিস্থিতি এমন যে, পরীক্ষায় পাশ করার পর তরুণ তরুণীর হাতে এখন শুধুই জমা হচ্ছে হতাশা। কারণ বেকারত্ব। আর এই বেকারত্বের শিকার একেবারে চিনের নতুন প্রজন্ম। কেউ জমা দিয়েছেন ৫০টি আবেদন, কেউ জমা দিয়েছেন ১০০টি আবেদন। কিন্তু দিনের শেষে ১০০টার মধ্যে হয়ত ডাক পাচ্ছেন মাত্র চার থেকে পাঁচটা। তারপরেও যে চাকরির কনফার্মেশন- কোথায়?
নিউইয়র্ক টাইমসের একটা রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, চিনে বেকারত্ব দিন দিন ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। বলছে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করতে চলেছে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ তরুণ তরুণী। চিনের সরকারি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, চাকরি খুঁজছে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে তরুণ তরুণীর ভাগ্য পড়তে চলেছে হতাশার গ্রাসে। এপ্রিল মাসে কাজের বাইরে ছিলেন প্রায় ২০.৪ শতাংশ তরুণ তরুণী। কিন্তু চাকরির বাজার নেই কেন? বলা হচ্ছে, চাকরির বাজার সংকুচিত হচ্ছে কারণ ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর যে কারণে পরিস্থিতি ক্রমশই অবনতির পথে হাঁটছে। চিনের সরকার অবশ্য যখন জিরো কোভিড পলিসি নিয়েছে। তুলতে শুরু করে বিধিনিষেধ। কর্মসংস্থান যাতে আরও বৃদ্ধি পায় তার জন্য চিনের সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের ভর্তুকি দেবার কথাও জানায় চিনের সরকার।
ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার জন্য নির্দেশ রয়েছে যে, তরুণরা যখন কর্মজীবন শুরু করেন তখন এই ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকেই তারা অভিজ্ঞতা জমা করতে শুরু করে। তবে দেখা যাচ্ছে, পরিস্থিতি যেভাবে বদলাচ্ছে তারপর ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায় ক্রমশ সঙ্কোচন আসছে। তার জন্যই কার্যত দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে বেকারত্ব। যেসকল তরুণরা উচ্চ শিক্ষিত, তারা মূলত স্নাতক স্তর পেরনোর পরেই টেকনোলজি, এডুকেশন এবং মেডিকাল সেক্টরেই কর্মজীবনে প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু এসব খাতে সঙ্কোচন আরও দীর্ঘ হচ্ছে। ফলে বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের নিজস্ব গ্রোথ ধাক্কা খাচ্ছে ভালোরকম। বেসরকারিখাতে বৃদ্ধি পেয়েছে সরকারি নজরদারি। তাই বিনিয়োগ করতে ভরসা পাচ্ছেন না অনেকেই।
চিনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিনপিং সরকার যে পোস্ট কোভিড পলিসি নিয়েছিলেন আদতে সেটা সাধারণ মানুষের মনে বিরক্তিকেই তুলে ধরেছে। তাদের মনে আশঙ্কার পাশাপাশি জমা হচ্ছে হতাশা। তাঁরা এখন বেশি পণ্য কিনতে পারছেন না। আর কনজিউমার ডিম্যান্ড কমছে বলে ধীরে ধীরে কমছে ম্যানুফ্যাকচারিং-এর ক্ষমতা। আর ম্যানুফ্যাকচারিং কম মানে কাজের পরিসরে সংকোচন। যে কারণে স্নাতক শেষ করা তরুণের হাতে কাজের বাজার কমছে বেনজির। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে চিন?
বিশেষজ্ঞরা দাবি তুলেছেন যে, চিনের সরকার কোনভাবেই বিনিয়োগের বাজারকে এভাবে সংকটে ফেলতে চায় না। আর চিনের সরকার চায় না যে তাদের দেশে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাক। স্নাতক পাশ করা পড়ুয়ারা চাকরির আশায় হাপিত্যেশ করে বসে থাকুক। তাই অর্থনীতি নিম্নমুখী, এই কথাটা মানতে নারাজ চিনের সরকার। যেটুকু ডামাডোল বা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে সেটা কাটিয়ে তোলা সম্ভব। আর সেদিকে নজর রেখেই হয়ত আগামীতে আরও ভালো কোন পলিসি নিয়ে আসতে পারে তারা।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ