Daily
বর্তমান ভারতের গ্রামবাংলায় যাকে লুডো খেলা বলা হয় তারই ওল্ড সংস্করণ ছিল পুরাণের পাশা খেলা। হাতে গরম উদাহরণ পাওয়া যায় মহাভারতে। শকুনির কাছে এই খেলাতে সর্বস্বান্ত হয়ে রাজ্য হারায় পঞ্চপান্ডব।
তাই পুরাণে পাশার আরেক নাম ছিল ভাগ্য খেলা। বর্তমান ভারতের গ্রামবাংলায় যা লুডো নামে বেশ পরিচিত। এখন এই লুডো নিয়েই লঙ্কাকাণ্ড হচ্ছে আদালতে। টুইটারে উঠছে ট্রোলের ঝড়। ট্রোল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলিউডের বাদশা খানের পোস্টারকে।
ভারতের লুডোর জনপ্রিয়তা এতটাই যে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে অনলাইন গেম মেকাররা এখন লুডোকে লঞ্চ করেছেন অনলাইনেও। আর এখান থেকেই গণ্ডগোলের সূত্রপাত। কেউ বলছেন লুডো হল ভাগ্যের খেলা। কেউ বলছেন, লুডো হল কৌশলের খেলা। মহাভারতের পঞ্চপান্ডবদের অবস্থা দেখে শেষ পর্যন্ত অনলাইনে লুডুর মাধ্যমে জুয়া খেলাকেই উৎসাহিত করা হয় এমন অভিযোগ নিয়ে সম্প্রতি একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয় মুম্বাই হাইকোর্টে। চাওয়া হয়েছে আদালতের কাছে সঠিক রায়। তবে আদালত লুডো নিয়ে কি রায় দেবেন আর সেই রায় জনমানসে কতটা প্রভাব ফেলবে সে তো পরের কথা। লুডো যে বাংলার ঘরে ঘরে বেশ জনপ্রিয় তা ধরা পড়ল বিজনেস প্রাইম নিউজের ক্যামেরায়।
কার্যত বিধি-নিষেধের গেরোয় গোটা বাংলা যখন গৃহবন্দী ঠিক তখন স্কুলের বাচ্চা কাচ্চা থেকে বড়রা অনলাইন গেমের থেকে মুখ ফিরিয়ে ঝুঁকছেন লুডোতে। এখন মাঠেও চলছে কার্যত লকডাউন। ছাত্র-ছাত্রী থেকে যুবক সবারই চলছে বন্দিদশা। সেই বন্দিদশা কাটাতে একঘেয়ে মোবাইল সার্ফিংকে পাশ কাটিয়ে বাংলা যেন আপন করে নিয়েছে পিচবোর্ডের লুডোকে।
বাড়ির বারান্দায় রীতিমতো মাস্ক পড়ে চোখ বোর্ডের দিকে রেখে চলছে ছক্কা দিয়ে অন্যের গুটি কাটবার চরম উত্তেজনা। ক্লাস সিক্সের ছাত্রীর সৃজিতা তো বলেই ফেলল আর মোবাইল ভালো লাগছেনা।
ক্লাস টেনের ছাত্রী সঙ্গীতা। নিজের মা-বাবা ঠাকুমাদের কাছ থেকে লুডো শিখে অন্যদেরকেও খেলবার জন্য উৎসাহিত করছে।
কার্যত গৃহবন্দি জীবনে সময় কিভাবে কাটবে? এই প্রশ্নের উত্তর শোনা গেল গ্রামের যুবতী পূর্ণিমার গলায়।
গৃহবধূ বন্দিতা দাস তো বলেই ফেললেন বাইরে বেরোনো যাবে না তাই ঘরে বসে লুডো খেলি বাড়ির লোকের সঙ্গে সময় কাটাই।
স্কুলের ছাত্রী কিংবা গৃহবধূ বা গ্রামের যুবতীরা নয় লুডোর নেশায় মজেছেন স্থানীয় যুবকরা। মাঠ-ঘাট দোকানপাট সবই প্রায় এখন চলছে শাটডাউন মোডে। তাই আর অগত্যা নেট খরচ করে গেম খেলার বদলে প্লাস্টিকের ছোট্ট ছক্কাটাই হয়ে উঠেছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
লুডো আসলে নেশার খেলা না ভাগ্যের খেলা তা হয়ত জানা যাবে আরো কিছুদিন বাদে। তবে করোনা অতিমারির সময়ে বাচ্চা থেকে বড় সকলের একঘেয়েমি কাটাতে লুডোর জুড়ি মেলা ভার।
দেবস্মিতা মন্ডল, উত্তর ২৪ পরগনা