Trending
কলকাতা লন্ডন হয়েছে কিনা তার উত্তর দেবেন আপনারা। তবে কলকাতায় বইতে শুরু করছে নিউ ইয়র্কের হাওয়া। কারণ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার হবে এবার কলকাতায়। গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে যাবতীয় চর্চা। কিন্তু কবে তৈরি হবে এই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার? কোথায় দেখতে পাওয়া যাবে? আর কতজনের কর্মসংস্থান তৈরি হবে |
সাল ২০১১। ৩৪ বছরের বাম জমানার পতন হল। বাংলার মাটিতে গজাল ঘাসফুল। মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কুর্সিতে বসার পর প্রথম যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, সেটি হল কলকাতাকে লণ্ডনের ধাঁচে গড়ে তুলবেন। চারিদিকে শিল্পায়নের জোয়ার দেখা যাবে। কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প- কলকাতা যেন শ্রমনির্ভর অর্থনীতির বুনিয়াদ হয়ে উঠবে। এরপর কেটে গেল অনেকগুলো বছর। আজ একের পর এক অভিযোগের ভিত্তিতে বর্তমান সরকারের অবস্থা ঢিলেঢালা। কলকাতা লন্ডন হয়ে ওঠেনি। যে সমস্যা আগেও ছিল, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠল। শিক্ষা দুর্নীতি, কাজের অভাব, বেকারত্বের হাহাকারের মতন বিষয় যখন বিরোধী দল সহ সাধারণ মানুষের মনেও ক্ষোভের আঁচ জমাতে শুরু করেছে, ঠিক এমন সময় কলকাতার আকাশে বইতে শুরু করল একেবারে মার্কিনী হাওয়া। জানা গেল, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার হবে তিলোত্তমার বুকে। বিষয়টা কি? মার্কিন মুলুকে যে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার রয়েছে, তারই একটি শাখা অফিস খোলা হবে কলকাতায়। পূর্ব ভারতে এই শাখা কিন্তু প্রথম।
সূত্রের খবর, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার তৈরি করা হবে ৩৫ লক্ষ বর্গ ফুট জমির ওপরে। জানা গিয়েছে, শাখা খোলার জন্য বিনিয়োগ আসতে পারে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এই শাখা খোলার জন্য গত ২১ মার্চ স্বাক্ষরিত হয় একটি মউ। আর এই বাণিজ্য কেন্দ্রটি তৈরি করার জন্য, মার্লিন গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত করল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার অ্যাসোসিয়েশন। যেটুকু খবর জানা গিয়েছে, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের এই শাখা খুললে, ৩০ হাজার কর্মসংস্থান নতুন করে তৈরি হবে। সূত্রের খবর, নবদিগন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথোরিটির অধীনে সেন্ট্রাল বিজনেস ডিসট্রিক্টে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের শাখাটি তৈরি হবে। রাজ্য সরকার তার জন্য চার একর জমি দেবে বলেও জানা গিয়েছে।
যেটুকু খবর পাওয়া যাচ্ছে, প্রথম ধাপে ২০২৪ সালের শুরুতেই হয়ত পুরোপুরিভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাবে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের এই ১৬ তলা বিল্ডিং। তবে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার তৈরি হলে সেদিক থেকে রাজ্যে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার তৈরি হওয়া মানে আন্তর্জাতিক স্তরে বাণিজ্যের পরিধি আরও কিছুটা তৈরি হওয়া। এদিকে নভেম্বর মাসেই রাজ্যে শুরু হবে বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলন। তার ঘোষণা করে দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশের বহু শিল্পপতিদের পা পড়বে এই রাজ্যে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার তৈরি হয়ে গেলে, রাজ্যে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনাটা অনেক গুণ বেড়ে যাবে। যে কারণে, রাজ্য জুড়ে তৈরি হবে কর্মসংস্থানের পরিবেশ। এখানেই আরেকটা বিষয় জানিয়ে রাখি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই ২০১৩ সালে ১ অগাস্ট মুম্বই-এর এই বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের শাখায় বসেছিল এক বাণিজ্য সম্মেলন। সেখান থেকেই জানা গিয়েছিল, কলকাতাতেও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নিজের শাখা খোলার জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছে। অবশেষে, সেই স্বপ্ন সফল হবার পথে।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার অ্যাসোসিয়েশন আসলে একটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। যার মূল অফিস বর্তমানে রয়েছে নিউ ইয়রকে। বিশ্বব্যাপী ১০০-র বেশি দেশে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ৩৩০-টির বেশি শাখা রয়েছে। তবে ভারতে সবচেয়ে পুরনো শাখা অবস্থিত মুম্বইতে। এছাড়া দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, পুনে এবং নয়ডাতে রয়েছে এর শাখা। এবার পূর্ব ভারতের মধ্যে প্রথম শাখা খোলা হচ্ছে কলকাতায়। জানা যাচ্ছে, এর ফলে পূর্ব ভারতের সঙ্গে গোটা বিশ্বের বাণিজ্যিক সম্পর্ক যে অন্য উচ্চতায় উঠবে, সে কথা বলাই যায়। একইসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাজকম্মো নিয়ে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল, মনে করা হচ্ছে, সেই ক্ষোভ অচিরেই মিটে যাবে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ