Trending
আগামী পাঁচ বছরে চাকরিহারা হবেন ৮ কোটি মানুষ। অশনি সংকেত দিচ্ছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। যে বাজারে চাকরি পাওয়াটাই দুষ্কর, সেই বাজারে চাকরি খুইয়ে পথে বসতে হচ্ছে- ঘোর দুর্দিন! ১০ হাজার, ২০ হাজার, ৫০ হাজার- পরিস্থিতি যেন আরও কঠিন হচ্ছে। খবরের কাগজ কিংবা ইন্সটাগ্রাম পেজ রীতিমত বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত ভারতের টেক টেরিটোড়িতে এর আঁচ আসছিল, ততখন পর্যন্ত কেউ কোন উচ্চবাচ্চা করেনি। কিন্তু এখন? যে হারে কর্মীছাঁটাই চলছে, তারপরেও কেউ চুপ করে বসে থাকতে পারে? নেইও। প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের চোখরাঙ্গানিকে ভয় পাচ্ছে গুগল, মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যাপলের মতো টেক-টাইকুনরা? ভারতের এমপ্লয়মেন্ট সিনারিওর এমন বেসামাল অবস্থা দেখে কেনই বা মুখে কুলুপ এঁটেছে কেন্দ্র? আগামীতেও কি এভাবেই চলবে নাকি চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুদিন অপেক্ষা করছে?
গ্লোবাল টেক ইন্ডাস্ট্রির ট্রেন্ড এবং ইন্ডিকেটর যাদের থেকে আসে, তারাই ভীত-সন্ত্রস্থ। হ্যাঁ! এটাই বাস্তব। বাট, there is a contrast। আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন, বেশ কিছু কোম্পানি খরের গাদায় সূচ খোঁজার মতো ডেসপারেটলি ট্যালেন্ট হান্ট করে চলেছে? হ্যাঁ! কর্মীছাঁটাইয়ের পাশাপাশি এটাও একটা গ্লোবাল ট্রুথ। প্রশ্ন হচ্ছে, দুটোই কীভাবে সত্যি হতে পারে? টেক ইন্ডাস্ট্রির একজ্যাক্ট গ্লোবাল ট্রেন্ডটা ঠিক কী? এবং কীভাবে ইন্ডিয়ান ইয়াং টেকিরা নিজেদের প্রিপেয়ার করবে, সেটাই বলব আজকের ভিডিওতে।
প্রথমেই বলি, কর্মীছাঁটাই কেন হচ্ছে? ছোট করে বললে, এর কারণ হচ্ছে, ফ্লো অফ ক্যাশ। যে কারণে রেভিনিউ গ্রোথ এতটাই কমে গিয়েছিল যে, মুখ থুবড়ে পড়েছিল গুগল, মেটা, মাইক্রোসফটের মত একের পর এক ইউনিকর্ন। দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকা লকডাউনের রেষ ক্ষত-বিক্ষত করেছে গ্লোবাল মার্কেটকে। কিন্তু সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে, কোভিডের সময় একমাত্র কোন ইন্ডাস্ট্রির যদি আনএক্সপেক্টেড বুম হয়ে থাকে, সেটা এই টেক ইন্ডাস্ট্রি। সাপ্লাই চেন ম্যানেজমেন্ট থেকে ইন্টারনাল নেসেসিটি-সবটা খুব সাবলীলভাবে ডিল করেছে এই একটামাত্র ইন্ডাস্ট্রি। তাহলে তাদের কেন বাজেট কমানো নিয়ে এত মাথাব্যাথা করতে হচ্ছে? কেন কম পরিমাণ এমপ্লয়িকে পুশ করা হচ্ছে বেশি কাজ করার জন্য?
তিনটে বেসিক রিজেন রয়েছে এর নেপথ্যে। মূল্যবৃদ্ধি, বিশ্বমন্দার আশঙ্কা এবং মাত্রাতিরিক্ত সুদের হার বৃদ্ধি। মূল্যবৃদ্ধি, সাপ্লাই চেন প্রেশার, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অনান্য নানা কারণে মার্কেটকে বেশ ভালভাবে নাড়াচাড়া দিয়েছে, এ নিয়ে কারোরই কোন দ্বিমত নেই। মূল্যবৃদ্ধিকে সামাল দিতে চড়া হারে সুদ বাড়িয়েছে মার্কিন মুলুক। আর সেই ফাঁপরে পড়ে সেনসিটিভ টেক ইন্ডাস্ট্রি রীতিমত হাবুডুবু খাচ্ছে। গ্লোবাল মার্কেটে এত অনিশ্চয়তার কারণে ডলার শক্তিশালী হচ্ছে। শক্তিশালী হচ্ছে ডলার মানে দুর্বল হচ্ছে লোকাল কারেন্সি।
বাট এর উল্টোদিকটাও আপনাদের কাছে ক্লিয়ার রাইট? এত আনসারটেন্টি এবং চ্যালেঞ্জের মধ্যেও গ্লোবাল টেক ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু আরও এফিসিয়েন্ট হওয়ার চেষ্টা করছে। বেশি সংখ্যক কর্মচারীর বদলে খোঁজ চলছে যোগ্য মানুষের, ট্যালেন্টেড মানুষের। কোয়ালিটি উইন্স এগেন্সট কোয়ান্টিটি। পরিসংখ্যান বলছে, আইটি সেক্টরে বিশ্বব্যাপী প্রতিভার ঘাটতি ১৬ বছরে সর্বোচ্চ। এরপরেও তারা এক্সপার্ট মানুষের খোঁজ করবে না? হায়ারিং প্রসেস কঠিন হবে না? ইন্ডিয়ান আইটি ইন্ডাস্ট্রির কথা যদি বলি তাহলে, এই এক্সপার্টাইজ ইজ নাথিং বাট দ্য ট্যালেন্ট। যদিও বিশেষজ্ঞরা কিন্তু ইন্ডিয়ান আইটি ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে বেশ পজিটিভ। কেন বলুন তো? কারণ হচ্ছে, ভারতের তিনটে লিডিং আইটি কোম্পানি টিসিএস, উইপ্রো, ইনফোসিসের হিউজ এমপ্লয়মেন্ট স্ট্রাটেজি। গ্লোবাল টেক মার্কেটে এত অস্বস্তি স্বত্বেও তারা কিন্তু হিউজ এমপ্লয়মেন্ট করিয়েছে। আর বেশিরভাগ এমপ্লয়মেন্ট হয়েছে টায়ার-২ সিটি থেকে। কিন্তু সেই স্ট্র্যাটেজি কাজ করলো কী?
ভারতের টেক টেরিটোরিতে যে সাময়িক ঝড় উঠেছিল, তার বেসিক দুটো কারণ রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এক, হোম টাউন মাইগ্রেশন। কোভিডের কারণে অর্ধেকের বেশি এমপ্লয়ী হোম টাউনে ফিরে যায় এবং শুরু হয় ওয়ার্ক ফ্রম হোম। পরবর্তীতে পরিস্থিতি সামলানো গেলেও কর্মচারীদের কোম্পানিমুখী করে তোলাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। আর অফিসে না এলে কোম্পানি কালচার তৈরি হবে কি করে? দ্বিতীয়ত, মার্কেটে বাড়তে থাকা অস্বস্তি। আপনারা কি জানেন, কমপক্ষে ৪০ শতাংশ কর্মী একটা কোম্পানিতে ২ বছরেরও কম সময় স্থায়ী থাকে? ক্রেজি রাইট? সুতরাং আইটি লিডিং কোম্পানিদের প্ল্যান ফ্লপ! তবে, সমস্যা যখন আছে, তখন আর সমাধানও আছে। এতক্ষনে এটুকু পরিষ্কার যে বিশ্বমন্দার আশঙ্কা গ্লোবাল টেক ফার্মগুলোকে বিধ্বস্ত করেছে এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ট্রেন্ড এগিয়ে চলবে। কিন্তু লংটার্মে ডিজিটাল অ্যাক্সেলারেশন কন্টিনিউ করবে। আর এটাই গ্লোবাল টেক ইন্ডাস্ট্রির জন্য সবচেয়ে বড় সুখবর। স্পেশ্যালি ভারতের জন্য তো বটেই। কারণ আগামীদিনে ট্রু ট্যালেন্ট ডেসটিনেশন হতে চলেছে ভারত। একজ্যাক্টলি যে ট্যালেন্টের খোঁজ করছেন গ্লোবাল টেক জায়েন্টরা।
দেখুন, দেশের যে প্রান্তেই ট্যালেন্টেড কর্মীরা কাজ করুন না কেন, আলটিমেটলি সেটা ইন্ডিয়ান আইটি ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুখবরই বটে। তবে অবশ্যই সেটা দক্ষ এবং যোগ্য মানুষের জন্য। সকলের জন্যই সেটা একটা উইন-উইন সিচুয়েশন। কাজেই এআই-কে ভয় না পেয়ে নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করাটা জরুরী। নিজেকে দক্ষ করে তোলটা জরুরী। আর সেক্ষেত্রে প্র্যাকটিস ইজ দ্য আল্টিমেটাম।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ।