Trending
২০২২ সালে দাঁড়িয়ে প্রায় ৩১ হাজার কমপ্লেন্ট এসেছে মহিলাদের বিরুদ্ধে ঘটা অপরাধের ভিত্তিতে, যা বিগত ৮ বছরে রেকর্ড
র্যাঙ্কিং অফ উইমেন ইন ন্যাশনাল পার্লামেন্টে ভারতের স্থান ১৮৫ জনের মধ্যে ১৪১ নম্বরে। প্রসঙ্গত, পাকিস্তান রয়ছে ১১১ নম্বরে। বাংলাদেশ রয়েছে ১০৯ নম্বরে এবং নেপাল রয়েছে ৫৩ নম্বরে।
লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির জন্য সংসারের খরচ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে- মহিলাদের। হ্যাঁ মহিলাদের। কারণ ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে আজও বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন সংসার ঠ্যালা শুধুমাত্র মহিলাদের দায়িত্ব।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এটাই কী ভারতের অমৃতকাল? অবশ্য যে দেশে গ্যাসের দাম ২০০ টাকা কমলেও ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে জাহির করা হয়, সে দেশে বোধ হয় এটা স্বাভাবিক। বিগত ৫০ বছরের গৃহস্থের সঞ্চয় কমেছে রেকর্ড পরিমাণে। রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার তথ্য বলছে এই কথা। মহিলাদের উপর এর কী সাংঘাতিক প্রভাব পড়েছে আন্দাজ করতে পারছেন? আর ২০২৪-এর নির্বাচনের আগে সেই মহিলা ভোটব্যাংকই হল তুরুপের তাস। রাজ্যসভাতে পাশ হল ঐতিহাসিক মহিলা সংরক্ষন বিল।
এক চালেই বাজিমাৎ। এত কিছু অঘটনের মধ্যে যেটা ঘটল সেটা ঐতিহাসিক রায়ই বটে। যদিও এতে নতুনত্ব কিছু নেই। তাই কৃতিত্বের প্রশ্নই আসছে না। আর এর কৃতিত্বের প্রাইমারি কপিরাইট যদি কারও থেকে থাকে, তবে অবশ্যই সেটা প্রমিলা দণ্ডবতের। যিনি ১৯৯৬ সালে এই বিলকে প্রাইভেট সদস্যের বিল হিসেবে নিয়ে আসেন। এই বিলের সিদ্ধান্ত নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সময় লাগলো ৯ বছর। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে তিনিই জানিয়েছিলেন যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মহিলা সংরক্ষন বিল আনা হবে। ২০১৪ থেকে ২০২৩-এখন হঠাৎ মনে পড়ল সেই ঐতিহাসিক বিলের কথা। ২০১৩ সালে না হয় গুজরাটের তৎকালীন রাজ্যপালের জন্য মহিলা সংরক্ষন আইন উনি সেই রাজ্যে লাগু করতে পারেননি। কিন্তু ২০১৪ থেকে ২০২৩- ৯টা বছর তো ওনাকে আটকানোর কেউ ছিল না? তাহলে সেকেন্ড ইনিংসের একেবারে শেষ মুহূর্তে এই বিল নিয়ে এত মাথাব্যাথা কীসের? সেটা বোধ হয় ২-এ ২-এ ৪ করতে কারোরই অসুবিধে হচ্ছে না।
দেখুন মহিলা সংরক্ষন বিল যে মহিলাদের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আরও বেশি করে উৎসাহিত করবে, সেক্ষেত্রে কোন দ্বিমত নেই। এবং এটা নিঃসন্দেহে একটা ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। প্রতিটা সেক্টরে মহিলাদের যথাযথ অধিকার থাকা উচিৎ, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের এসব নিয়ে মাথাব্যাথা থাকে না। তাদের কাছে শুধু ভোটব্যাঙ্কটাই ম্যাটার করে। ইন্ডিয়া টুডে-র একটা রিপোর্ট বলছে, বিগত লোকসভা ভোটে মহিলা ভোটারদের সংখ্যা ৪৭% থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৮.১৩%। আগামীদিনে তা বাড়বে। মানে প্রায় ৫০% ভোটব্যাঙ্ক দেশের এই মহিলারা। সুতরাং সমস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নজর এখন এদিকেই। ২০১৪-র পর এত যোজনা, সেই ঝড় এমনি এমনি উঠেছিল?
প্রসঙ্গত, রাজ্যসভাতে এই বিল পাশ হলেও ইমপ্লিমেন্ট কবে হবে, সেটা কেউ জানে না। কারণ জনসুমারি না হলে এই বিল লাগু করা অসম্ভব। আর এই জনসুমারি দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত। হয়তো ২০২৬-এ হতে পারে। হয়তো না। যদি ২০২৬-এ জনসুমারি হয়, তাহলে ২০২৯-এ এই বিল লাগু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর না হলে, কবে লাগু হবে কেউ জানে না। প্রধানমন্ত্রীও এই বিষয়ে স্পিকটি নট। শুধুমাত্র লাইমলাইটে থাকার ভুখারি! আসল ছবিটা সামনে আনুন…
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, জেন্ডার গ্যাপের নিরিখে ভারত এখনও অনেক পিছিয়ে। বললে অবাক হবেন, জেন্ডার গ্যাপের নিরিখে ভারত পাকিস্তানের থেকেও পিছিয়ে। গ্লোবাল জেন্ডার ইন্ডেক্সে ভারতের স্থান ১৪৬ জনের মধ্যে ১২৭ নম্বরে। এরপরেও ভারত নাকি আগামীর সুপারপাওয়ার। কোভিডের পর লেবার ফোরসে ভারতীয় মহিলাদের পার্টিসিপেশন আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। দেশের ৫০ শতাংশ মানুষ শুধুই ভোটব্যাঙ্ক পূরণের মন্ত্র? তাদের কর্মমুখী করে তোলার কোন যোজনার কথা ভেবেছেন? এরপরেও আমরা আবার দাবি করছি, ভারত বিশ্বগুরু হবে। তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে!
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মহিলাদের এগিয়ে আসার জন্য এই বিল একটা মাস্টারস্ট্রোক বটে। কিন্তু সত্যি করে ভেবে বলুন তো, ভারতের মত দেশে কতজন মহিলা প্রতিনিধি অ্যাক্টিভলি রাজনীতিতে পার্টিসিপেট করে? এখনও এমন অনেক জায়গাই আছে যেখানে নাম থাকে মহিলা প্রতিনিধিদের, প্রক্সি দেন তাদের হাজবেন্ডরা। প্রধানপতিরা। পঞ্চায়েত ওয়েবসিরিজে ঠিক যেমনটা দেখানো হয়েছিল। সুতরাং মহিলা সংরক্ষন বিলের গুরুত্ব সত্যিই অকল্পনীয়। কিন্তু তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মহিলাদের এডুকেশন। যাতে তারা নিজেরা নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে পারে। জেন্ডার গ্যাপের র্যাঙ্কিংটা যাতে কমে আসে।
লোকসভা বা বিধানসভায় মহিলাদের আক্টিভ পারটিসিপেশন একটা এক্সেপশনাল রেভলিউশন ডেকে আনতে পারে। মহিলাদের উপস্থিতিতে তাদের ইস্যু নিয়ে আরও বেশি কথা উঠতে পারে, আলোচনা হতে পারে। আরেকটা মণিপুর হওয়া থেকে দেশকে বাঁচান যেতে পারে। ভারতীয় মহিলা কুস্তীগিরদের হয়তো এততা হেনস্থার মুখে নাও পড়তে হতে পারে। হয়তো মহিলাদের বিরুদ্ধে ঘটা অপরাধের ভার কমতে পারে। আর কিছু হোক বা না হোক, এই সমস্ত সেনসিটিভ প্রসঙ্গ যখন সংসদে উঠবে, তখন অন্তত তার বিস্তারিত আলোচনা হবে, এখনকার মত ধুলোচাপা দিয়ে দেওয়া হবে না।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ