Story
দুর্গা পুজোর অন্যতম অঙ্গ অপরাজিতা পুজো। এই অপরাজিতার অর্থই অ-পরাজিত হওয়া কিংবা অ-পরাজিত থাকা। বাংলার মেয়েরা যাতে ক্রমশ নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মায়ের কাছ থেকে অপরাজিতার শক্তি নিয়ে জীবনযুদ্ধে অপরাজিত থাকে সেই লক্ষ্যেই সম্প্রতি কলকাতায় বসল অপরাজিতার মেলা। আর মেলায় স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেরালেন একদল অপরাজিতা। যারা উঠে এসেছেন আটপৌরে সমাজ জীবন থেকে। একদম শিশু শিল্পী থেকে শিক্ষিকা পর্যন্ত বাদ যাননি কেউই।
ফ্যাশন ডিজাইনার থেকে বিউটি কোম্পানি। বিউটি কোম্পানি থেকে ট্যাটু আর্টিস্ট। ট্যাটু আর্টিস্ট থেকে বেকারি। বেকারি থেকে শিক্ষা। ছিলেন রিয়া’স ডায়েট ওয়ার্ল্ডের মত বেশ নামী কোম্পানির প্রতিনিধিরাও।
অনেক সময়ই মহিলাদের ক্ষমতায়ন বিষয়ে অনেক কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সরকারি কিংবা বেসরকারি ক্ষেত্র- তা যাই হোক না কেন। বর্তমান দিনে বেশ পরিচিত শব্দ নারী ক্ষমতায়ন। তবে একেবারে হাতেকলমে দৈনন্দিন জীবনে লড়াই করে আজকের সমাজে যারা প্রতিষ্ঠিতের তকমা পেয়েছেন, তাঁদেরকে এক ছাতার তলায় হাজির করলেন যিনি, সেই মধুরিমা সরকার নিজেও একজন মহিলা উদ্যোগপতি হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত।
কিন্তু হঠাৎ এইরকম আয়োজন কেন? প্রশ্ন করতেই অকপট জবাব আসল অপরাজিতার আয়োজকের কাছ থেকে।
গানে, গল্পে, আড্ডায় পুজোর আগে বেশ জমজমাট ছিল অপরাজিতার এই আয়োজন। মাতালেন গান গেয়ে উদীয়মান শিল্পী অর্ঘ্য ব্যানার্জী ও দেবদীপ মুখার্জী।
মনে পড়ে টিভি সিরিয়ালের ছোট কাদম্বিনীকে? হ্যাঁ। এই সেই শিশু শিল্পী। মেঘান চক্রবর্তী। জীবনের শুরুতেই সমাজে নিজের পরিচিতি তৈরি করে ফেলেছে এই শিল্পী।
মেঘানের মত শিশুরা যেমন আছে, তেমনি আজকের হালফিল প্রজন্মের ট্রেন্ড ট্যাটুও রীতিমত শিল্পে পর্যবসিত হয়েছে আজকের এই বাংলায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই অপরাজিতার আসরে বাদ যাননি ট্যাটু আর্টিস্টও।
ইনি পুনম বড়ুয়া। পেশায় ট্যাটু আর্টিস্ট। রীতিমত প্রতিষ্ঠিত। অপরাজিতায় আসতে পেরে বেশ গর্বিত।
দুই মহিলার সংগ্রামের কাহিনীর যৌথ প্ল্যাটফর্ম নিজেদের বেকারি শিল্প। দৈনন্দিন জীবনে বাণিজ্যকে আরো একটু বড় করার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়লেন জীবনযুদ্ধে অকুতোভয় দুই অপরাজিতা।
ইনি অর্চনা এবং পারুল। আজকের দিনে রীতিমত প্রতিষ্ঠিত বেকারি ব্যবসায়। ব্যবসার শুরু থেকে আজকের দিন পর্যন্ত। বললেন বেশ অকপটে।
বর্তমান দিনে কমবেশি সবাই ত্বকের পরিচর্যার বিষয়ে বেশ কনসার্নড। আর মহিলাদের গর্ভকালীন ও গর্ভ পরবর্তী অবস্থায় ত্বকের যাবতীয় চিকিৎসার পরামর্শ যিনি দরাজ হস্তে দিয়ে থাকেন তিনিও আজকের দিনে এই দেবীপক্ষে অপরাজিতাই। হ্যাঁ।
ইনি ডাঃ সায়ন্তনী সেনগুপ্ত। পেশায় চিকিৎসক।
শিক্ষিকা থেকে ফ্যাশন ডিজাইনার। চলার পথটা ছিল বেশ কঠিন। আর আজকে নিজের ব্র্যান্ডটাই যেন ঘোরে লোকের মুখে মুখে। হ্যাঁ। ইনি অপ্সরা ব্র্যান্ডের কর্ণধার অপ্সরা গুহ ঠাকুরতা।
সমাজের সব অংশের সঙ্গে অপরাজিতার আসর থেকে বাদ যায়নি রূপচর্চার দিকটিও। এই রূপচর্চা কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যের বাজারটিও ক্রমবর্ধমান। অসংখ্য কোম্পানির মধ্যে জায়গা করে নিলেন অ্যালিওর হার্বালের কর্ণধার সন্নিতী বিশ্বাস। হ্যাঁ।
ইনি সন্নিতী বিশ্বাস। পেশায় ব্যবসায়ী।
লকডাউনে স্কুল, কলেজের দরজা যখন ছিল বন্ধ। পঠনপাঠনের সামনে ছিল বিরাট অনিশ্চয়তা। ঠিক তখনই নিজস্ব কৌশলে অনলাইনে শিক্ষার দায়িত্ব তুলে নেন এই শিক্ষিকা।
ইনি শর্বরী গুপ্তা। পেশায় শিক্ষিকা। শুনুন এনার কথা।
দেবী দুর্গা আসলে ভারতীয় জনমানসে বাড়ির একজন সর্বশক্তিমান সদস্যাই। দেবী পুজোর অঙ্গের মধ্যেই রয়েছে অপরাজিতা পুজো। অপরাজিতার বরে অপরাজিত থাকাটাই অপরাজিতার মূল কৌশল। সেই কৌশলে সমাজের সামনে বেশ ইতিবাচক দৃষ্টান্ত রাখল আয়োজন অপরাজিতা।
অঙ্কিত মুখার্জী, পৌলমী গঙ্গোপাধ্যায় ও সৌরভ কাঞ্জিলাল