Market
চাঁদে জমি কিনতে চান? মনে করছেন, বিষয়টা খুব একটা জটিল নয়। শুধু ট্যাঁকে টাকা থাকলেই পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের বুকেও একটুকরো জমি আপনি কিনে নিতে পারবেন? তাহলে বলি, বিষয়টা একেবারে ভ্রান্ত। কারণ, পৃথিবীর বাইরে কোন গ্রহেই আপনি জমি কিনতে পারবেন না। কিন্তু আমেরিকার একজন মানুষ গ্রহ, উপগ্রহে জমি কেনার বন্দোবস্ত করিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি তিনি দাবি করেছেন, তাঁর থেকে চাঁদের জমি কিনেছেন অনেকে। তাহলে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল? জানতে পুরো প্রতিবেদনটি দেখুন।
চাঁদে জমি কেনার জন্য যে প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যপী সাড়া ফেলে দিয়েছে, তার নাম লুনার এমব্যাসি। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ডেনিস হোপ নামের এক ব্যক্তি চাঁদে জমি বিক্রি করছেন ১৯৮০ সাল থেকে। এখানেই বলে রাখি। এই লোকটি শুধু চাঁদে নয়। মঙ্গল, বুধ, শুক্র এমনকি প্লুটো গ্রহেও জমি বিক্রি করে আসছেন এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। কিন্তু তার আগে আসা যাক একটি প্রশ্নে, আদৌ কি এভাবে জমি বিক্রি করা সম্ভব?
১৯৬৭ সালে জাতিসংঘ একটি উদ্যোগ নেয়। আমেরিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে একটি চুক্তি হয় যার নাম আউটার স্পেস ট্রিটি। সেই চুক্তিতে বলা হয় সৌরজগতের কোন গ্রহ বা উপগ্রহের মালিকানা কোন দেশ দাবি করতে পারবে না। এরপরে জাতিসংঘ ফের আরেকটি চুক্তি করে। যার নাম দেওয়া হয় মুন এগ্রিমেন্ট। যেখানে বলা হয়, চাঁদ শুধুমাত্র বিশ্ববাসীর শান্তির উদ্দ্যেশ্যে ব্যবহার করা হবে। বলা হয়, চাঁদের ন্যাচারাল রিসোর্সের উত্তরাধিকারি হবে গোটা মানবজাতি। যদিও এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকে আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিন। আর এই সুযোগকে ধুরন্ধর বুদ্ধি দিয়ে কাজে লাগায় ডেনিস হোপ। যেহেতু সেখানে ব্যক্তিগত মালিকানা বা কর্পোরেট মালিকানা নিয়ে আলাদা কোন তথ্য দেওয়া নেই, সেই কারণে ডেনিস হোপ এভাবেই প্রতারণা করার সুযোগ পেয়ে যান।
সৌরজগতের গ্রহ, উপগ্রহের মালিকানা দাবি করে নাসা, জাতিসংঘের মতন একাধিক জায়গায় চিঠি পাঠান তিনি। কোন উত্তর না পেয়ে মৌনব্রতকে সম্মতির লক্ষণ হিসেবে ধরে নেন ডেনিস হোপ। লুনার এমব্যাসি মতে চাঁদে জমি কিনতে পারবেন ২ হাজার টাকা থেকে ৪২ হাজার টাকা দিয়ে। এমনকি লুনার এম্ব্যাসি জমি কেনার পরিবর্তে তিনটি কাগজ আপনাকে দেবে। যার মধ্যে রয়েছে জমির দলিল, চাঁদের কোথায় জমি কিনেছেন তার ম্যাপ এবং বিল অফ রাইটস। তবে এই প্রতারণা শুধু লুনার এমব্যাসি নয়। লুনার ল্যান্ড, বাই মার্স, লুনার রেজিস্ট্রি বা মুন রেজিস্ট্রির মতন একাধিক কোম্পানি করে থাকে। ডেনিস হোপ জানিয়েছেন, লুনার এমব্যাসি থেকে ৬০ লক্ষ মানুষ নাকি চাঁদে জমি কিনেছেন। কিন্তু আসলে তা নয়। কারণ একটা সোজা বিষয় ভাবুন। সৌরজগতে ঐভাবে জমি কেনা যায় না। যারা কিনছেন তাঁরা আসলে প্রতারিতই হচ্ছেন। অতএব, সাধু সাবধান। আজকের মতন প্রতিবেদন এখানেই শেষ করছি। আশা রাখব, চাঁদে জমি কেনার মতন অলীক কল্পনাগুলো মাথা থেকে সরিয়ে জীবনকে অর্থবহ করে তুলবেন। ভালো থাকবেন, দেখতে থাকবেন বিজনেস প্রাইম নিউজ।