Story
সাল ২০০৬। সিঙ্গুরে পা পড়ল টাটার। ইচ্ছে গাড়ি কারখানা তৈরির। যেহেতু টাটা। তাই শিল্প সম্ভাবনাময় বাংলাকে দেখতে অনেকেই উদগ্রীব ছিলেন সেই সময়। কিন্তু হঠাৎই একেবারে পাল্টে যেতে শুরু করল বঙ্গ রাজনীতির ছবিটা। তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদ এবং অনশন গেম চেঞ্জার হয়ে উঠল বঙ্গ রাজনীতির আকাশে। পালা বদলের বীজ সেদিনই পুঁতে দেওয়া হল বাংলার মাটিতে। বাম শাসনের পরাজয়ের ছবিটা পরিষ্কার হল সেদিন থেকেই। বাংলাকে বিদায় জানাল টাটা। সিঙ্গুরের সেই অধিকাংশ জমিগুলোতে আজও হয়না কোন চাষবাস। জমির মালিকেরাও পান নি সেই অর্থে কোন শিল্পের জোয়ার। তাহলে সিদ্ধান্ত ভুল কার ছিল? বামেদের নাকি তৃণমূলের? এই প্রশ্নটা যেমন এতগুলো বছর পেরিয়েও বাংলার মানুষের কাছে এখনও প্রাসঙ্গিক। তেমনি আরেকটা প্রশ্নও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। যেভাবে টাটার মত দেশের প্রথম সারির শিল্পসংস্থাকে বাংলা ছাড়তে হয়েছিল, তারপর কি আদৌ টাটা ফিরবে এই শস্য শ্যামল বাংলায়? রইলো টাটার কামব্যাক নিয়ে একগুচ্ছ আলোচনা।
বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, কৃষি আমাদের ভিত্তি। শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ। আসলে কি জানেন তো, বাংলাকে ভারতের শিল্পমঞ্চের সামনের সারিতে বসানোর জোরকদমে চেষ্টা করেছিলেন তৎকালীন বাম নেতামন্ত্রীরা। যে কারণে তাঁরা বুঝেছিলেন, শস্য শ্যামল বাংলার উন্নতি শুধু কৃষিকেন্দ্রিক হলেই হবে না। তার জন্য প্রয়োজন ভারি ইন্ডাস্ট্রি। তবেই তো প্রচুর মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। বেকারত্বের জ্বালা বহন করতে হবে না সাধারণ মানুষদের। আর যে কারণে টাটাকে স্বাগত জানিয়েছিল বাংলা। কিন্তু যে রাজ্যের অধিকাংশ জমিই উর্বর। চাষবাসের জন্য আদর্শ। সেইসকল জমিগুলোকে শিল্পের জন্য দিয়ে দেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত? তৎকালীন বিরোধী নেত্রী এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই পয়েন্টকেই তুলে ধরেছিলেন বাংলার মানুষের সামনে। ২০০৬ সালে টাটার ন্যানো গাড়ি তৈরির প্রোজেক্টটিতে যখন বাম সরকার সীলমোহর দেয় তখন বাংলাকে বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দু মনে করে বাম সরকারের প্রশংসা করেছিলেন খোদ রতন টাটা নিজেই। কিন্তু তারপর যখন টাটা নিজেই বাংলাকে ছাড়ল তখন কিন্তু সত্যিই বাংলার আকাশে দেখা দিয়েছিল অনিশ্চয়তার আভাস।
একটি তথ্য বলছে, টাটা গ্রুপ এই প্রোজেক্টটি সম্পূর্ণ করার জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ভাবনাচিন্তা করেছিল। ৯৯৭ একর জমির উপরে টাটা চেয়েছিল কার ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট তৈরি করতে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদ এবং অনশনের জেরে সেই প্রোজেক্ট থমকে যায় অচিরেই। সেই সময় মেধা পাটকরের মত পরিবেশবিদরাও মমতাকে সঙ্গ দিয়েছিলেন। যা অচিরেই বাম দুর্গে ফাটল ধরায়। এবং টাটা কারখানা গুটিয়ে চলে যায় গুজরাত। তারপর পালাবদল হয়েছে। তৎকালীন বিরোধী নেত্রী বসেছেন বাংলার মসনদে। গা থেকে নেই-শিল্পর তকমা ঝাড়তে উঠেপড়ে লেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইনফোসিসের মত কর্পোরেট জায়েন্ট আসছে। তাজপুরে সমুদ্র বন্দর তৈরি করতে আদানির সঙ্গে সাক্ষাৎও হয়েছে মমতার। কিন্তু টাটা? গেল বছর মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে টাটার সম্পর্ক একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেনি। বরং তাঁরা চান, বাংলায় টাটা নিজের ব্যবসার চাকাটা ভালোভাবেই ঘোরাক। তৃণমূলের বিরোধিতা ছিল বামেদের জমি অধিগ্রহণের ধরন নিয়ে। তবে বাংলায় টাটার যে কোন বিনিয়োগ নেই, সেটা কিন্তু একেবারেই ভুল। কারণ আমাদের বাংলায় রয়েছে টাটা মেটালিকা, টিসিএস, টাটা সেন্টার। কিন্তু আরো কর্মসংস্থানে জোয়ার আসবে টাটা যদি নিজে থেকে যেচে কোন বড় শিল্প নিয়ে বিনিয়োগের কথা ভাবে।
একদল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাম জমানায় টাটা যেভাবে নিজের মুকুট খুইয়েছে আবার নতুন করে আদৌ কি সেই হারানো মুকুট মাথায় নিতে রাজি হবে টাটা গ্রুপ? আবার অন্যদিকে অনেকেই বলছেন, বাংলায় শিল্প সম্ভাবনার প্রচুর জায়গা রয়েছে। টাটা যদি বাংলায় বিনিয়োগ করা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে তবে টাটার প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাগুলোই আরও এগিয়ে যাবে। ২০০৭ এর পর ২০১৪ সালে রতন টাটা নিজে বাংলার শিল্পোজ্জ্বল ছবিটা সেভাবে দেখতেই পান নি। আজ এত বছর পর কিন্তু সেই প্রশ্নটাই আরো বেশি করে উসকে দিচ্ছে। কারণ টাটা আসা মানেই কর্মসংস্থান এবং চাকরির এক বড় রকম সুরাহা হওয়া। এখন সেই সুরাহা কতদিনে হবে? তৃণমূল সরকারের কথায় টাটার প্রত্যাবর্তন নতুন করে কি বাংলার রাজনীতিতে কোন চমক তৈরি করবে? সব প্রশ্নের উত্তর দেবে সময়।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ