Trending
কখনো ভেবে দেখেছেন কেন আমেরিকার অবস্থা পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার মত হয় না? প্রশ্নটা সহজ। উত্তরটা আরও সহজ। কারণ, বিশ্ব বাণিজ্যের ৮০% অর্থ আদানপ্রদান করা হয় মার্কিনী ডলারের মাধ্যমে। তাই অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করে থাকেন যে, আমেরিকার অর্থনীতি এতটা সুরক্ষিত থাকার জন্য ধসে পড়ে না মার্কিন মুলুকে অর্থনীতি। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে আমেরিকা নিজে না-হয় ক্ষতি সামলাতে পারবে। কিন্তু তার খেসারত অন্য দেশকে দিতে হবে না তো? আমেরিকা ভারতের থেকে কত টাকা ঋণ করেছে জানেন? এখন মোদী প্রশাসনের চিন্তা হচ্ছে, হোয়াইট হাউজ যদি সময়মতন টাকা ফেরত দিতে না-পারে তাহলে কিন্তু ভারতীয় অর্থনীতির কপালে খুলছে বড়সড় একটা খাঁড়া। কেন বললাম, সেটা এবার খোলসা করব আপনাদের সামনে।
আমেরিকা যেহেতু নিজেই বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম কাণ্ডারি, অতএব আমেরিকা যত ইচ্ছা ঋণ নিতেই পারে। হ্যাঁ এটা ঠিক যে, সেই ঋণ নেওয়ার একটা ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে রাখা আছে। কিন্তু তাতে কী? ঋণের বোঝা বাড়তে বাড়তে যদি গলা পর্যন্ত চলে আসেও তখন হোয়াইট হাউজ কারুর কাছে সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হয় না। বরং প্রশাসন এবং বিরোধী নেতারা একসঙ্গে বসেন এবং ঋণের ঊর্ধ্বসীমা বাড়াতে বলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এ যাবত সবচেয়ে বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছিল খোদ ওবামার আমলে। সেই সময় বিভিন্ন দেশ থেকে ঋণ নেবার অঙ্কটা পৌঁছে সাড়ে সাত লক্ষ কোটি ডলার ছাপিয়ে যায়। ট্রাম্পের আমলেও ঋণের অঙ্ক ছিল সাড়ে ছয় লক্ষ কোটি ডলারের ঊর্ধ্বে। এখন মুশকিল হচ্ছে, আমেরিকা এই ট্র্যাডিশন থেকে আজও বেরিয়ে আসতে পারেনি। এবং তারা পারবেও না। কারণ ঐ যে বললাম, আমেরিকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে একতরফা ঋণ নিয়েই চলেছে। সেটা চিন, জাপান, ভারতের মতন দেশ তো রয়েছেই। স্বাভাবিকভাবে বাইডেন প্রশাসন যে ঋণ নেবার ট্র্যাডিশন থেকে সরে আসবে না, সে কথা সর্বৈব সত্য। কেন বললাম?
আপনারা জানেন কি যে প্রতিদিন সরকারকে সুবিশাল আমেরিকাকে মসৃণ গতিতে চালানোর জন্য কত টাকা খরচ করতে হয়? ১.৭ হাজার কোটি ডলার। এই বিপুল অঙ্কের টাকা ঋণ নেবার কারণেই আমেরিকা আজ এতো ঝকঝকে একটি দেশে পরিণত হয়েছে। তবে, আমেরিকার সর্বত্র যে আলো এমন কথা বলা যায় না। সেখানেও গরিবিয়ানা, বেকারত্ব সবই রয়েছে। কিন্তু দিনের শেষে যেহেতু আমেরিকা, তাই আমেরিকা কখনোই নিজের দুর্বলতাকে সেভাবে বুঝতে দেয়নি। এখন পরিস্থিতি এমন জায়গায় এগোচ্ছে যে পুরো বিষয়টাই একেবারে বুমেরাং হয়ে ফিরছে মার্কিনী প্রশাসনের কাছে। এখন যা অবস্থা তাতে দেখা যাচ্ছে, আয়ের থেকে ব্যয়ের অঙ্ক অনেকটাই বেড়ে যায় আমেরিকায়। আর এই বিপুল খরচ সামাল দেবার জন্য কার্যত নাভিশ্বাস উঠছে মার্কিন মুলুকের। এবার দেখে নেওয়া যাক, আমেরিকা কোন দেশের থেকে কত টাকা ধার নিয়ে বসে রয়েছে? আমেরিকা সবচেয়ে বেশি টাকা নিয়েছে জাপান থেকে। জাপানের কাছ থেকে আমেরিকা ঋণ নিয়েছে ১.১ লক্ষ কোটি ডলার। জাপানের পরেই এবার রয়েছে চিন। চিন আমেরিকার থেকে পাবে প্রায় ৮৬ হাজার কোটি ডলার। আর আমেরিকা ভারতের থেকে কত টাকা পাবে জানেন? ২৩.২ হাজার কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় কয়েক বিলিয়ন। এখন বিষয়টা হচ্ছে আমেরিকা যেভাবে গলা পর্যন্ত নিজেই ডুবে রয়েছে, তারপর আমেরিকা যদি চাপে পড়ে তাহলে ভারতীয় অর্থনীতির জন্য আসতে চলেছে বিশাল ফাঁড়া। এই টাকা কি তাহলে আদৌ আমেরিকার থেকে ভারত নিয়ে আসতে পারবে? কী হবে পরিস্থিতি?
এই বিষয়ে যদি ব্যাখ্যা করতেই হয়, তাহলে বলব আমেরিকার পক্ষে অর্থনীতি ধসে পড়াটা খুব চাপের। কারণ, আমেরিকা নিজেই বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। সুতরাং বিশ্ব বাজারে ডলার ক্রাইসিস হবে কী করে? ওয়ার্ল্ড বিজনেসের ৮০% হয়ে থাকে ডলারের মাধ্যমে। অন্য দেশ ডলারে আয় করে। তারপর সেই ডলারই ফের বিনিয়োগের জন্য আমেরিকার কাছে চলে যায়। অর্থাৎ ডলার ছাড়া গতি নেই আপাতত। তাই আমেরিকার অর্থনীতিতে বড়সড় ধস নামার কোন চান্স এই মুহূর্তে নেই। ক্ষতি যা হয়েছে সেটা সামালও দিতে পারবে আমেরিকা। তাই অনেকেই মনে করছেন, কঠিন পরিস্থিতি সামলে নেবে আমেরিকা। একই সঙ্গে ভারতের যে বড় অঙ্কের টাকা আমেরিকার কাছে পড়ে রয়েছে, সেই টাকা আপাতত হারিয়ে যাবার কোন সম্ভাবনা নেই। মানে এখনই তেমন একটা ভয় ভারতের জন্য বসে নেই। আপনারা কি মনে করেন? প্রশ্নটা রেখে দিলাম আপনার কাছে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ