Trending
ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শ্রীলঙ্কা। বেহাল অর্থনীতি ফিরছে হালে। হাল না-ছেড়ে দেবার কারণেই আজ ধীরে ধীরে নিজের ইকোনমিকে রিভাইভ করতে পারছে ভারতের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত ছোট্ট এই দেশটি। তারপরেই প্রশ্ন উঠছে, শ্রীলঙ্কা তো নয় এক বছরের মধ্যে নিজের দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড় করাবার ক্ষমতা রাখছে। পাকিস্তান কী সেটা করতে পারবে? আজ শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের ইকোনমিক ফিউচার নিয়েই না-হয় ছোট্ট করে আলোচনা সারা যাক। বিষয়টা কী জানতে হলে পুরো প্রতিবেদনটি দেখুন।
শ্রীলঙ্কার অবস্থা কী হয়েছিল সেটা ঝালিয়ে নেওয়া যাক একবার। শ্রীলঙ্কার ইকোনমি পুরোপুরি ক্র্যাশ করার আগে রেড সিগন্যাল অনেকদিন ধরেই জারি হয়েছিল। কারণ তারও দু-তিন বছর আগে থেকে শ্রীলঙ্কার ইকোনমি ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছিল একেবারে নিচের দিকে। তার সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছে যাচ্ছিল চরম সীমায়, বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার প্রায় শূন্যে নামছিল। পাওয়া যাচ্ছিল না ওষুধ। মিলছিল না হাসপাতালের সরঞ্জাম। অবস্থা এতটাই হাতের বাইরে বেরিয়ে যায় যে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সেখানকার সাধারণ মানুষ। বাধ্য হয়ে ইস্তফা দিতে হয় প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষকে। অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন যে, শ্রীলঙ্কার এই দুর্দশা হঠাৎ করে আসেনি। তার পিছনে কাজ করেছে অর্থনীতিবিদদের চরম অদূরদর্শিতা। শ্রীলঙ্কার ইকোনমি যে ক্র্যাশ করতে পারে, সেই নিয়ে আগেই দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছিল এডিবি বা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক। জানানো হয়েছিল, শ্রীলঙ্কার অবস্থা ক্রমশই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। কারণ শ্রীলঙ্কা যত না আয় করছে, তার থেকে অনেক বেশি ব্যয় করছে। ২০০৫ সালে যেখানে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ১১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মতন, সেখানে ২০২০ সালে অতিমারির সময় অঙ্কটা পৌঁছে যায় ৫৬.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, শ্রীলঙ্কার সরকার যেভাবে এবং যে গতিতে পাহাড় প্রমাণ ঋণের বোঝা ঘাড়ের ওপর চাপাচ্ছে, তারপর যে ইকোনমিকে দাঁড় করানো একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে দাঁড়াবে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এদিকে শ্রীলঙ্কায় তখন বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার ক্রমশ নিচের দিকে নামতে শুরু করে। প্রথমে এক ধাক্কায় কমে যায় ৭০%। ২০২০ সালে যেখানে ফরেক্স রিজার্ভের অঙ্কটা ছিল ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মতন, সেটাই ২০২১ সালে নেমে আসে ২ বিলিয়ন ডলারে। এছাড়া রাজাপক্ষের একটা চরম ভুলের জন্য খেসারত দিতে হয়েছিল দেশবাসীকে। তিনি রাতারাতি রাসায়নিক সারের ব্যবহার বন্ধ করে দেবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরিবর্তে বলেছিলেন জৈব সারকেই হাতিয়ার করে কৃষিকাজ করতে হবে। কিন্তু আল্টিমেটলি শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি সবদিক থেকেই ধরাশায়ি হতে শুরু করে। তার রেজাল্ট হিসেবে কী ছবি আমরা দেখতে পাই সেটা আর কারুরই অজানা নয়। খিদের জ্বালা যে বড় জ্বালা। সাধারণ মানুষ খেপে ওঠেন। সরকার বিরোধী গর্জন শোনা যায় গোটা দেশে। অরাজকতা, মারামারি, হানাহানি কীই না হয়েছে। আপনারা খেয়াল করেছেন কিনা জানি না। চরম আর্থিক সংকটের কারণে ধীরে ধীরে শ্রীলঙ্কা দেশটাকে ছিবড়ে করে দেবার যে খবর প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছিল হঠাৎ করেই সে-খবর চাপা পড়ে যায়। তার কারণ শ্রীলঙ্কা আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করে।
ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেসের একটি রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কা নিজের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা করছে। তারই সদ্য উদাহরণ ২৮৬-টি পণ্যের ওপর থেকে উঠে যাচ্ছে রেস্ট্রিকশন। জানা যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কা যে সকল পণ্যকে আমদানি করে তার মধ্যে এখনই ২৮৬টি পণ্যের ওপর থেকে এই রেস্ট্রিকশন তুলে নেবার পরিকল্পনা নিল সেই দেশের অর্থমন্ত্রক। তারা বলছে, আগামীতে আরও ৯২৮-টি পণ্যের ওপর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে যা লাগু হয়েছিল ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে। তার মধ্যে অন্যতম গাড়ি আমদানি। এখানেই জানিয়ে রাখি, চরম সংকটের সময় ৩২০০ পণ্য আমদানিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রক। তার মধ্যে ছিল সি-ফুড, ইলেকট্রনিক্স এবং মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টস। তবে অর্থমন্ত্রক জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কা এখন নিজেকে দাঁড় করানোর জন্য বিভিন্ন রকম পলিসি নিচ্ছে। আর যে কারণে শ্রীলঙ্কার বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ারে আবারও জমা হচ্ছে টাকা। জানা যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কা রিজার্ভে টাকার অঙ্ক বৃদ্ধি করেছে ২৬ শতাংশ। যা গত ১৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অঙ্কটা প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যার প্রায় পুরোটাই এসেছে রেমিট্যান্স এবং ট্যুরিজম সেক্টর থেকে। এটা ঠিক যে অতিমারি কামড় না-বসালে হয়ত শ্রীলঙ্কার ট্যুরিজম সেক্টর হয়ত সেভাবে ধাক্কা খেত না। কারণ, শ্রীলঙ্কার ইকোনমির অনেকটাই ডিপেন্ডেন্ট ট্যুরিজম সেক্টরের ওপর। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তাই আবারও নিজেদের ইকোনমিকে সাজানোর চেষ্টা করছে শ্রীলঙ্কা। এমনকি এশেনশিয়াল কিছু ড্রাগসের দাম ১৬% কমিয়ে আনছে সেই দেশের সরকার। তাই সব দেখেশুনে অন্তত আশা করাই যায় যে পরিস্থিতি সবার এক থাকে না। মাঝে যে চরম দুর্দশার শিকার শ্রীলঙ্কা হয়েছিল, আজ তারা আবারও নিজেদের ঘুরে দাঁড় করাচ্ছে। কিন্তু পাকিস্তান?
পলিটিক্যাল স্টেবিলিটি- হে সেখানে কোনদিন ছিল না। ভবিষ্যতেও যে থাকবে এমন আশা করা সেগুড়ে বালি। এই দেশের ভাগ্যবিধাতা সরকার নয়, বরং সেনা। অনেকেই বলে থাকেন, প্রত্যেকটি দেশের কাছে সেনা থাকে। কিন্তু পাকিস্তানের সেনার কাছে একটা দেশ রয়েছে। পাকিস্তানের অবস্থা আজ শ্রীলঙ্কার মতনই। মানুষের হাতে টাকা-পয়সা নেই। খাবারের দাম আকাশছোঁয়া। হাসপাতালে পাওয়া যাচ্ছে না সুবিধে। সবমিলিয়ে পাকিস্তানের ভাঁড়ে মা ভবানি পরিস্থিতি তৈরি হয়ে রয়েছে। আর এতো কিছুর পরেও নিজের গোঁয়ারতুমি থেকে এক বিন্দু সরে আসার কোন প্ল্যান মনে হয় শরিফ সরকারের নেই। এখনো তারা কাশ্মীর ইস্যু, বিরোধী নেতার কণ্ঠরোধ আর কী না কী একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। যা দেখে স্পষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের কাছে আজ সত্যিই কোন দিশা নেই। না তৈরি করতে পারছেন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য কোন সুস্থ পরিবেশ, না সাধারণ মানুষকে দিতে পারছেন কোন সুরাহা। এদিকে পাকিস্তানের বিদেশনীতি ভয়ঙ্কর দুর্বল। বিলাওয়াল ভুট্টো নিজেও ঘরে-বাইরে ট্রোলের শিকার হচ্ছেন। অর্থমন্ত্রী এখনো তাকিয়ে বসে রয়েছেন চিন এবং আইএমএফের দিকে। পাকিস্তানের এই চাতক পাখির মত জল দাও, জল দাও করার বিষয়টা আজ কোন দেশ, কোন প্রতিষ্ঠান মেনে নিতে পারছে না। আইএমএফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, নিজে থেকে কোন সুস্থ পলিসি গ্রহণ না-করতে পারলে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকারে তলিয়ে যাবে। সুতরাং দেশবাসীর কি হবে? আপাতত সেই উত্তর পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের কাছে নেই। কারণ তাঁদের ভবিষ্যতের সুড়ঙ্গটা আপাতত অন্ধকারেই রয়েছে।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ