Trending
লাল শেরওয়ানি, হলুদ চোস্তা, মাথায় ডুরি পাগড়ী, পায়ে বুট জুতো। সঙ্গে তাঁর টিকালো নাক আর ইয়া মোটা গোঁফের আড়ালে স্মিত হাসি। জোড় হাতে রাজকীয় পোশাকে দাঁড়িয়ে আছেন এক বিনয়ের ভঙ্গিতে। দ্য মহারাজা। আজ দেখতে দেখতে ৭৭ বছরে মহারাজা। বৃদ্ধ হয়েছেন। তাই রাজ্যপাট গুছিয়ে এবার তাঁর অবসরে যাওয়ার পালা।
সালটা ১৯৩২। নিজস্ব ব্যবহারের জন্যই ভারতে প্রথম বিমান পরিষেবা শুরু করেন জামশেদজি টাটা। জুহু থেকে করাচি পর্যন্ত। মূলত কম সময়ে চিঠিপত্র আদান-প্রদান করাই এই পরিষেবার লক্ষ্য ছিল। এরপর ১৯৪৬। স্বাধীনতার পথে এগোচ্ছে ভারত। পোড়া বারুদের গন্ধ ছড়াচ্ছে প্রতিবাদ। এরই মধ্যে ভারতের আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশের আকাশে পাড়ি জমাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। টাটা সন্সের ৫৯ শতাংশ শেয়ার কেনে ভারত সরকার। বানিজ্যিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে এয়ার ইন্ডিয়া। চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হন ববি কুকা নামে এক দক্ষ এবং পরিশ্রমী ব্যক্তি। এয়ার ইন্ডিয়াকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই যার লক্ষ্য ছিল। আর ব্র্যান্ড তৈরি হবে কিন্তু তাঁর ব্র্যান্ডিং হবে না? অতয়েব এয়ার ইন্ডিয়ার তৎকালীন কমার্শিয়াল ডিরেক্টর ববি কুকার তত্ত্বাবধানে সৃষ্টি হল মহারাজা। পরবর্তীতে অবশ্য এয়ার ইন্ডিয়ার লোগোতে একাধিকবার পরিবর্তন এসেছে। তবে রাজামশাইয়ের রাজত্বে সংকট তৈরি করতে পারেনি।
রাজা মশাইয়ের সাজে রাজকীয়তা ছিল ঠিকই। কিন্তু স্বয়ং ডিজাইনার বলেছিলেন, এই রাজা আসলে সেই গুরুগম্ভির রাজা নন। যে সময় এই লোগো ডিজাইন করা হয়, সেই সময় ভারতে বিমানযাত্রা ছিল বিলাসিতার প্রতীক। ভারতীয়দের কাছে যা রাজসুখ। আর এই মহারাজা ম্যাসকটটি সেই রাজকীয়তার প্রতীক। উচ্চতর জীবন-যাপন আর ঔজ্জ্বল্যতার প্রতীক ছিল এই মহারাজা। মহারাজা ম্যাসকটের প্রথম অ্যাডভারটাইজমেন্টটা সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। লাল গালিচায় বসে হুঁকো খাচ্ছেন আর গড়গড়ায় টান দিচ্ছেন। মানুষ কি সুন্দরভাবে সেই বিজ্ঞাপনকে আপন করে নেয়। রিলেট করে ফেলতে পারে। ভারতের মাটি ছেড়ে সেই বিজ্ঞাপন বিদেশেও পপুলার হয়ে ওঠে। আর এই জনপ্রিয়তার জন্যই লেটার প্যাডের ছোট্ট লোগো থেকে ধীরে ধীরে জীবন্ত মানুষ হয়ে ওঠে মহারাজা। এরপর কখনও লন্ডনের বিগ বেনের পাশে, কখনও আবার প্যারিসে আইফেল টাওয়ারের নিচে, দাঁড়িয়ে থাকেন মহারাজা। আর এই মহারাজের হাত ধরেই এয়ার ইন্ডিয়াকে গোটা বিশ্বের মানুষের সবথেকে পছন্দের ব্র্যান্ড হিসেবে এস্টাব্লিশ করেন এয়ার ইন্ডিয়ার তৎকালীন কমার্শিয়াল ডিরেক্টর ববি কুকা।
এখন লক্ষ্য একই আছে। এয়ার ইন্ডিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে পছন্দের ব্র্যান্ড হিসেবে তুলে ধরা। শুধু মানুষের রুচি বদলেছে। এখন ভারতের বিলাসবহুল মানুষজন আর এসব লাল পাগড়ী বা উজ্জ্বল রাজকীয় পোশাককে হাইস্ট্যান্ডার্ড লাইফস্টাইলের সাইন হিসেবে দেখে না। যাত্রীদের মধ্যে একটা বড় অংশই হবেন বিজনেস ট্রাভেলার, কর্পোরেট এগজিকিউটিভ। এই যাত্রীদের জন্য পাগড়িধারী, বিরাট গোঁফওয়ালা মহারাজা একেবারেই বেমানান। বিশ্বের কোন বিমান সংস্থারই এরকম কোন ম্যাসকট নেই। অতয়েব রাজা এখন ব্যাকডেটেড। খোলনলচে বদলে ফেলাই শ্রেয়। অতয়েব, মিশন রিব্র্যান্ডিং। আজ দীর্ঘ সময় পর আবারও টাটার হাতে এয়ার ইন্ডিয়া। তাই মহারাজাকে টাটা জানানোর পালা।
সংস্থা সূত্রে খবর, লন্ডনের ফিউচারব্র্যান্ডের হাতে এই রিব্র্যান্ডিংয়ের দায়িত্ব তুলে দিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। হয়তো কোন কর্পোরেট ধাঁচেই লোগো ডিজাইন হবে। যেখানে থাকবে কর্পোরেট রঙের বা কর্পোরেট ডিজাইনের ছোঁওয়া। আধুনিকতা। কিন্তু মহারাজা থেকে যাবেন। সকলের সামনে না হোক। সকলের হৃদয়ে তিনি থাকবেন।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ