Trending

কেউ হতে চান ডাক্তার। কেউ হতে চান ইঞ্জিনিয়ার বা কেউ হতে চান হাই স্কিলড আইটি প্রোফেশনাল। উচ্চ শিক্ষা, দুর্ধর্ষ মাইনে- কে না চায়? এটাই একজন পড়ুয়ার জীবনে সাকসেস স্টোরি হতে পারে। আর যে কারণে বিদেশে সেটলড হতে বাধ্য হচ্ছিলেন ভারতীয় পড়ুয়ারা। দেশের মাটি ছেড়ে তাদের আমেরিকা বা ইউরোপে ভ্রমণ যেন ধীরে ধীরে এনআরআইদের প্রভাব আরও বাড়িয়েছে। আপনাদের খেয়াল আছে কিনা জানি না, বিদেশের মাটিতে এনআরআইদের যে প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা একটা পরিসংখ্যানে ধরা পড়েছিল। ২০২২ সালে এনআরআই-দের দরুন ভারতের আয় দাঁড়িয়েছিল ১০০ বিলিয়ন ডলারে। যে কোন দেশের প্রবাসীদের জন্য যা কার্যত রেকর্ড তৈরি করে। কিন্তু সাম্প্রতিক ছবি একেবারে অন্য কথা বলছে। দেখা যাচ্ছে, প্রবাসী ভারতীয়রা ধীরে ধীরে এখন বিদেশের মাটি ছেড়ে ফিরে আসতে চাইছেন ভারতের মাটিতে। আর এই ট্রেন্ড নাকি বছর বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু একটা বড় প্রশ্ন। কেন বিদেশের মাটি ছেড়ে জন্মভূমির টানে ফিরে আসছেন এনআরআই-রা? আসুন আজকের প্রতিবেদনে খোঁজ করব এই বিষয়টাই।
বন্ধুরা প্রথমেই বলি যে, ভারতীয় পড়ুয়াদের সবথেকে পছন্দের জায়গা হল আমেরিকা, কানাডা এবং ইউরোপ। ২০২২ সালের একটা রিপোর্ট মোতাবেক ভারতীয় পড়ুয়াদের মধ্যে প্রায় ৬৮ শতাংশ বিদেশ যাত্রা করেছেন। হায়ার এডুকেশন, বেশি কর্মসংস্থান এই সবই যেন ভারতীয় পড়ুয়াদের জন্য নতুন করে স্বপ্ন দেখার জাল বোনে। এখানেই একটা ব্যপার। বিদেশে ভারতীয় পড়ুয়াদের মধ্যে বেশি মাইনেতে কাজ করার একটা সুযোগ রয়েছে। আবার উল্টো দিকে বিদেশের সবকিছুই এক্সপেনসিভ। ফলে তাদের খরচাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতীয়দের মধ্যে মিনিমাম লাইফ স্টাইল লিড করার জন্য খরচ করতে হচ্ছে প্রয়োজনের থেকে বেশি। ভারতে খরচ কম, তাই ওয়েজেস কম। কিন্তু বিদেশের মাটিতে খরচ বেশি। এরপরেও কিন্তু লাইফ স্টাইল লিড করার জন্য ভারতীয় ছাত্রদের মধ্যে বিদেশে যাত্রার একটা ভালোরকম প্রচেষ্টা দেখা গেছিল।
কিন্তু এখন পরিস্থিতি ক্রমশ বদলাচ্ছে। বিদেশের অর্থনীতি সংকোচনের দিকে। কেন? জ্বালানির লাগাতার মূলবৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আর মূল্যস্ফীতি। মনে করা হচ্ছে, ভারতীয়দের মধ্যে বিদেশে গিয়ে সেটলড হবার প্রবণতা এসবের কারণেই ধীরে ধীরে কমতির দিকে। উইয়নের একটা রিপোর্ট বলছে, ভারতীয় পড়ুয়ারা ব্রিটেন, আমেরিকা বা কানাডায় যাচ্ছে পড়াশোনার জন্য। কিন্তু খরচ সামাল দিতে গিয়ে উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি তাদের ডেলি লাইফ স্টাইলের জন্য পার্ট টাইম কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু তাতেও দিনের শেষে কোন সুরাহা মিলছে না। ফলে পড়ুয়ারা কম পারিশ্রমিকে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এই অবস্থা শুধু আমেরিকা বলে নয়, কানাডাতেও প্রবলভাবে ছড়াচ্ছে। কম পারিশ্রমিকে ভারতীয় পড়ুয়াদের দিয়ে কাজ হাসিল করানো এখন ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এরপরেও যদি বহু অর্থ খরচ করে ডিগ্রি লাভ হয়েও যায়, তার পরেও কিন্তু ভারতীয়দের জন্য অন্যরকম কঠিন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গ্লোবাল রিসেশন, ইনফ্লেশন, আমেরিকায় ব্যাঙ্কিং সেক্টরে ধস, আর আর্টিফিশিয়াল এজেন্সির বাড়বাড়ন্ত- এসবের কারণেই কার্যত ভারতীয়দের মধ্যে চরম অনাস্থা তৈরি হচ্ছে। দেখুন বিদেশের মাটিতে কাজের বাজার সংকুচিত হচ্ছে। ফলে হাই স্কিলড পড়ুয়াদের চাকরি দিতে তারা কোথাও না কোথাও ব্যর্থ হচ্ছে। তার মানে- লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে পড়াশুনোর পরেও কীভাবে যেন কার্যত কাজ খুঁজতে গিয়ে কার্যত ব্যর্থ হচ্ছেন তাঁরা। স্বপ্ন ভাঙছে আর দিনের শেষে একেবারে ফক্কা।
পশ্চিমা দেশ এখন মন্দার দিকে। এমনিই ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে কাজের বাজার। আর এতো টাকা খরচ করে পড়াশুনো করে যদি রেস্তোরাঁ, ডেলিভারি বয়ের মতো পার্ট টাইম কাজেই ভরসা রাখতে হয় তাহলে কী আর দিনের শেষে পড়ুয়াদের স্বপ্ন মজবুত হতে পারে? আর এসবের কারণেই পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর থেকে আগ্রহ হারাচ্ছে ভারতীয় পড়ুয়ারা। ফলে বিদেশে আর কাজের সুযোগ নয়। এবার তারা ফিরে আসতে চাইছে ভারতের মাটিতেই। তার অন্যতম কারণ কী? আমরা প্রত্যেকেই দেখেছি যে, কোভিড পিরিয়ডে যখন অন্যান্য দেশ কার্যত ইকোনমিকালি ধ্বংসের পথে এগোচ্ছে, তখন অন্যদিকে ভারতের ইকোনমি নিজের জায়গাটা ধরে রাখতে পেরেছে। এছাড়াও ভারতে স্টার্ট-আপ কালচার দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফলে এখানে কর্মসংস্থানের পথ অনেকটা মসৃণ হচ্ছে। কিন্তু ভারতে কী সত্যিই প্রচুর কাজের বাজার রয়েছে? কর্মসংস্থান অগাধ? উম্মম…একেবারেই নয়। কিন্তু একটা ব্যপার খেয়াল রাখতে হবে। যারা বিদেশে পড়তে যান এবং ডিগ্রি হাসিল করেন, স্বাভাবিকভাবে তাঁরা দিনের শেষে হাই স্কিলড একজন এমপ্লয়ি হয়ে উঠছেন। ফলে তাঁরা মনে করছেন, বিদেশে কাজ করার চেয়ে দেশের মাটিতে কাজ করার জন্য তারা অনেক বেশি সুবিধে পেতে পারেন। কারণ ভারত এমনিতেই তাদের হোম গ্রাউন্ড। ফলে নিজের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা এখানে অনেক বেশি সুবিধে হবে। ইন্ডিয়ান ইকোনমি এখন রাইজিং ইকোনমি। বিশ্ব বাজারে ভারতের প্রভাব সেটা ডিপ্লোম্যাটিক হোক আর ইকোনমিকালি হোক- অনেকটাই স্ট্রং। ফলে হাই স্কিল্ড ভারতীয় পড়ুয়াদের জন্য ভারতের মাটিই সোনার হয়ে উঠছে। ফলে একদিকে যখন পশ্চিমা দেশে কর্মসংস্থান লাগাতার সংকুচিত হচ্ছে তখন অন্যদিকে ভারতে কর্মসংস্থান তৈরির চেষ্টা করছেন প্রত্যেকে। আর মনে করা হচ্ছে এটাই অন্যতম প্রধান কারণ- এনআরআইদের মধ্যে ভারতে ফিরে আসার প্রবণতা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আজকের প্রতিবেদন এতটাই। এনআরআই-দের নিয়ে আরও বহু কথা পড়ে রইল। সেগুলো বলব একেকটা প্রতিবেদনে। আজকের প্রতিবেদন যদি ভালো লাগে তাহলে লাইক করুন, শেয়ার করুন। আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করে নিন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ