Trending
সত্যিই কি উত্তর ভারতের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণ ভারত? আর যদি দক্ষিণ ভারত এতটাই ডেভেলপড হয়, তাহলে এর কারণগুলো কী কী? একটাই দেশ, অথচ দেশের দুই প্রান্তে ডেভেলপমেন্টের এতো ফারাক কেন? আজকের প্রতিবেদন আমাদের এই বিষয়টা নিয়েই। কেন দক্ষিণ ভারত উত্তর ভারতের থেকে অনেকটা এগিয়ে?
যদি জিডিপির খাতিরেই ধরে নিই, তাহলে দেখব, সাউথ ইন্ডিয়া নর্থ ইন্ডিয়ার থেকে অনেকটা এগিয়ে। এমনকি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টের কথাও যদি ধরি, তাহলে দেখব, দক্ষিণ ভারতের পজিশন উত্তর ভারতের থেকে কম্পারেটিভলি অনেকটাই বেটার। কিছু কিছু রিপোর্টে তো বলা হয়েছে যে সাউথ ইন্ডিয়ার জিডিপি নর্থ ইন্ডিয়ার থেকে প্রায় ২.৭৫ গুণ বেশি। তার মানে কখনই এমন ধরে নেওয়া ঠিক নয় যে গোটা উত্তর ভারতের ডেভেলপমেন্ট আজ পিছিয়ে পড়েছে। কারণ সরকারের একটা রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, উত্তর ভারতের হরিয়ানা দেশের থার্ড ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং রাজ্য। পার ক্যাপিটা ইনকামে দিল্লি, চণ্ডীগড় রয়েছে সামনের সারিতেই। কিন্তু যদি আমরা পুরো উত্তর ভারতের দিকে নজর ফেলি, তাহলে দেখতে পাব বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের মতন রাজ্যগুলিকেও। আর এই রাজ্যগুলো যে আর্থিকভাবে বেশ দুর্বল, সেটা আর বলে দিতে হবে না। ইকোনমির নিরিখে বিহার, রাজস্থান বা মধ্যপ্রদেশের মত রাজ্যগুলোর র্যাঙ্ক রয়েছে অনেকটা নিচে। সেই প্রভাব পড়ে তাদের পার ক্যাপিটা ইনকামে।
অন্যদিকে সাউথ ইন্ডিয়ার রাজ্য যেমন তামিলনাড়ু, কেরালা, কর্ণাটক বা অন্ধ্রপ্রদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার, লিটারেসি রেট, জিডিপি, ইকোনমি সবকিছুতেই যেন ভালোরকম টেক্কা দিচ্ছে নর্থ ইন্ডিয়ার স্টেটগুলোকে। প্রিয় দর্শক, এর পিছনে একটা, দুটো নয়। বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সেগুলো কী কী? প্রথমেই বলা যাক লিটারেসি রেটের কথা। আমরা যদি দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোর দিকে নজর দিই, তাহলে দেখতে পাব, দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলো ইংলিশে অনেক বেশি সড়গড় উত্তর ভারতের থেকে। আপনারা সকলেই জানেন যে, কেরালা বা তামিলনাড়ুর লিটারেসি রেট দেশের মধ্যে যথেষ্ট বেশি। উত্তর ভারতে দিল্লি বা চণ্ডীগড়ে লিটারেসি রেট ভালো থাকলেও বিহার, মধ্যপ্রদেশ বা রাজস্থানের মতন জায়গায় যথেষ্ট দুর্বল। অতএব, যখন পুরো উত্তর ভারতের কথা বলা হয়, তখন সেটা কোনভাবেই এই দুই ছোটখাটো রাজ্য বা শহরের প্রভাবে এগিয়ে যেতে পারে না। আরেকটা বিষয়। আমরা যদি উত্তর ভারতের কথা বলি, তাহলে পপুলেশনের নিরিখে কিন্তু বিহার, উত্তরপ্রদেশ বা রাজস্থান অনেকটাই এগিয়ে। এই সকল রাজ্যে পপুলেশন বেশি, কিন্তু লিটারেসি রেট কম। এমনকি এই সকল রাজ্যের অনেকে তো আবার ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজকে তেমন একটা পাত্তাও দেন না। অন্যদিকে দক্ষিণ ভারতে ইংলিশ কমিউনিকেশন খুব বড় একটা বিষয়। আর যে কারণে অধিকাংশ আইটি সেক্টর, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি বেছে নিয়েছে দক্ষিণ ভারতকে। ভারতের দক্ষিণভাগের এই সকল রাজ্যের স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিঃসন্দেহে একটা বড় বিষয়।
এবার আসা যাক দু’নম্বর পয়েন্টে আর সেটা হচ্ছে করাপশন। করাপশন সর্বত্র। কিন্তু উত্তর ভারত করাপশনের জন্য একটু বেশিই ফেমাস। মানে এই সকল রাজ্যে করাপশনের একটা দীর্ঘ ট্র্যাডিশন রয়েছে। উত্তরপ্রদেশ আর বিহারের করাপশন তো একটা সময় প্রতিদিন খবরের চ্যানেলে শুনতে পাওয়া যেত। বিষয়টা যেন খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছিল। আর যে কারণে উত্তর ভারতে ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা এডুকেশনের ভিত অনেকটাই নড়বড়ে। আর যদি অন্যদিকে দক্ষিণ ভারতের দিকে নজর দিই, তাহলে দেখতে পাব, উত্তর ভারতের তুলনায় করাপশন দক্ষিণ ভারতে অনেকটাই কম। স্বাভাবিকভাবেই, শিশুরা সেখানে ভালোরকম পড়াশোনার আবহের মধ্যেই বেড়ে ওঠে। তাই তো বড় বড় এমএনসিগুলোর মাথায় আমরা দক্ষিণ ভারতের মানুষদের দেখতে পাই। এছাড়া দক্ষিণ ভারতে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট বেটার হওয়ার কারণে আইটি, বিপিও-র বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এসে হাজির হয় দক্ষিণ ভারতেই। তামিলনাড়ু দেশের অন্যতম বৃহৎ ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব বলা যেতে পারে।
এবার আসা যাক কিছুটা ভূ-প্রাকৃতিক বিষয়ে। শুধু ভারত বলে নয়। চিন বা আমেরিকা যেখানেই তাকান, দেখবেন সব জায়গায় একটা বিষয় খুব কমন। কোস্টাল এরিয়ার পাশে থাকা শহর বা রাজ্য সবসময় এগিয়ে থাকে। যেমন নিউ ইয়রক বা সাংহাই বা কেপটাউন। আমাদের এখানে মুম্বই-এর কথাই ধরা যাক। বাণিজ্য নগরী কি আর এমনি এমনি বলা হয়ে থাকে? আমাদের দেশেও কোস্টাল লাইন অনেকটাই বড়। গুজরাত, মহারাষ্ট্র, গোয়া, কর্ণাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, উড়িষ্যা এবং আমাদের বাংলা। এর মধ্যে যদি উড়িষ্যাকে বাদ দিই, তাহলে দেখতে পাব প্রত্যেকটা রাজ্যের জিডিপি বেশ ভালোই। কাদের থেকে? ল্যান্ডলকড রাজ্যগুলোর থেকে। যেমন উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থান বা মধ্যপ্রদেশের মত রাজ্যগুলি আসে। আর আমরা সকলেই জানি যে, কোস্টাল এরিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সবথেকে ভালো হয়। কারণ এখনো পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য জলপথকেই সবার আগে বেছে নেওয়া হয়।
এছাড়াও বলা হয়ে থাকে যে, উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির জমি অনেকটাই উর্বর। আর যে কারণে উত্তর ভারতের অধিকাংশ মানুষ এগ্রিকালচারাল সেক্টরের ওপর বেশি নির্ভরশীল। আজও যদি আমরা পঞ্জাব, হরিয়ানা বা উত্তরপ্রদেশের কথা ধরি, তাহলে দেখব এই সকল রাজ্যের ইকোনমি কিন্তু কৃষিকাজের ওপর বেশি নির্ভরশীল। আর এগুলো ছাড়াও অন্যতম একটা কারণ হল, উত্তর ভারতের ইতিহাস এবং বিদেশি কালচারের প্রভাব। অর্থাৎ আমরা যদি ইতিহাসের পাতায় লক্ষ্য রাখি, তাহলে দেখতে পাব যে, উত্তর ভারত বারবার বিদেশি আক্রমণের শিকার হয়েছে। সেটা মোঘল হতে পারে আবার ব্রিটিশ হতে পারে। এছাড়া শরণার্থীদের সমস্যাও একটা মেজর ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পঞ্জাবের মত রাজ্যকেও দু’ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। যার একটা ভাগ এখন রয়েছে পাকিস্তানে। এই সবই যেন উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির ওপর খুব মেজর একটা প্রভাব ফেলে। আর সেই ক্রাইসিস ভালোরকম ধরা দেয়। কিন্তু যদি দক্ষিণ ভারত মোটের ওপর এতো ঝামেলা ঝঞ্ঝাটের থেকে খানিক দূরেই থেকে গিয়েছে।
আর শেষ একটা কারণ হল, দক্ষিণ ভারতের সোশ্যাল এবং পলিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার। দক্ষিণ ভারতে আমরা সেভাবে কোন বড় রকমের দাঙ্গা, হাঙ্গামা ইত্যাদির বিষয় শুনতে পাই না। কিন্তু উত্তর ভারত এই সব বিষয়ে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছে দক্ষিণ ভারতকে। পলিটিক্যাল স্টেবিলিটি নর্থ ইন্ডিয়ার থেকে সাউথ ইন্ডিয়ায় অনেকটাই বেটার। কিন্তু সেই কথা বলব আরেক দিন। আপাতত প্রতিবেদন দেখে আপনারা হয়ত কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেন যে কেন দক্ষিণ ভারত ডেভেলপমেন্টে টেক্কা দিচ্ছে উত্তর ভারতকে।
বিজনেস প্রাইম নিউজে।
জীবন হোক অর্থবহ