Trending
যে দেশ কোটি কোটি মানুষের আশ্রয়স্থল, যে দেশ কোটি কোটি মানুষের ভূত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ- সেই দেশের নাম ভারতবর্ষ- ইন্ডিয়া- হিন্দুস্থান। যে দেশের মূল মন্ত্র- বসুধৈব কুটুম্বকম মানে গোটা বিশ্ব আমার পরিবার। সেই দেশের নাম ভারতবর্ষ-ইন্ডিয়া-হিন্দুস্থান। হাজার হাজার বছরের সংস্কৃতি যে দেশের গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতীর সঙ্গে বয়ে চলেছে অলিতে গলিতে, যে দেশ মহোত্তম সেই দেশের নাম ভারতবর্ষ-ইন্ডিয়া-হিন্দুস্তান। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, খ্রিষ্টান- বিভিন্ন ধর্মের মানুষের যে দেশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সেই দেশের নাম ভারতবর্ষ-ইন্ডিয়া-হিন্দুস্তান। আধ্যাত্মিকতা, বিজ্ঞান, প্রাচীন সভ্যতা এবং সংস্কৃতি যে দেশের ঐতিহ্যকে গর্বের সঙ্গে বসিয়েছে শ্রেষ্ঠ আসনে, সেই দেশের নাম ভারতবর্ষ-ইন্ডিয়া-হিন্দুস্তান।
আজ ভারত সামরিক শক্তিতে কতটা শক্তিশালী আমরা সকলেই জানি। পৃথিবীর চতুর্থ বৃহৎ শক্তি হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশ ভারতবর্ষ শান্তির বার্তাই দিয়ে এসেছে আদিকাল থেকে। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর বাস করেন, এমন শক্তিশালী জ্ঞানপীঠ আমাদের ভারতবর্ষ। দ্য ল্যান্ড অফ ডাইভারসিটি- যেখানে ২২টি অফিশিয়াল আলাদা আলাদা ভাষা রয়েছে, উপভাষা রয়েছে কয়েক হাজার, সেখানে এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি। ২৮টা রাজ্য আর প্রতিটা রাজ্যে রয়েছে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা, নৃত্যকলা, সঙ্গীতকলা, ধ্যানধারণা, ভাববৈচিত্র্য আরও কত কী। এই সবই আজ একছাতার তলায় যে দেশে এসে জড়ো হয়েছে, সেই দেশের নাম ভারতবর্ষ-ইন্ডিয়া-হিন্দুস্তান। ক্রিকেট হোক বা ফুটবল- ভারতবাসীর কাছে খেলা এক অন্য আবেগ তৈরি করে। এখানেই ভারতবর্ষ তৈরি করে নিয়েছে খেলা জগতের একেকজন ঈশ্বর। শুধু কি তাই? দাবা, কবাডি, সাপ-লুডোর মতন খেলাও তো উঠে এসেছে এই ভারতবর্ষের বুক থেকেই। পাহাড়, জঙ্গল, সমুদ্র, বালি বৈচিত্র্য যেখানে ছড়িয়ে রয়েছে পরতে পরতে- এই দেশের প্রত্যেক ধূলিকণায়, সেই দেশের নাম ভারতবর্ষ-ইন্ডিয়া-হিন্দুস্তান। এই দেশের কালচার এতটাই রিচ যা অন্য কোন দেশে আপনি পাবেন না। আমাদের কলা, আমাদের সভ্যতা এতটাই উন্নত যে আমাদের সঙ্গে অন্য কোন দেশের তুলনা করতে পারবেন না। ৫ হাজার বছরের সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, আধ্যাত্মিকতায় এই দেশ আজ বড় কালারফুল। যখন অন্যান্য দেশের মানুষ সেই সময় সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মত কোন কাঠামো পায়নি, সেইসময় আমাদের ভারতবর্ষে লেখা হয়ে গেছে রামায়ন, মহাভারতের মত পৃথিবীর দীর্ঘ মহাকাব্য। বেদ, পুরান, উপনিষদের শিক্ষা যে দেশ তখন ছড়িয়ে দিচ্ছে নিজ নিজ দেশবাসীর মধ্যে, সেই দেশের গুরুকুল ভারতবর্ষ ছাড়া আর কোথায়? পয়েন্ট বা জিরো থেকে গ্র্যাভিটি, নম্বর সিস্টেম থেকে ক্যালেন্ডার, অ্যাস্ট্রোলজি থেকে অ্যাস্ট্রোনমি, সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্য, আর্কিটেকচার, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, অঙ্ক, এগ্রিকালচার, বিজনেস, মেডিক্যাল সায়েন্স সঙ্গে স্পিরিচুয়ালিটি – এই প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমাদের দেশ সোনার ফলন ফলিয়েছে। ভাস্করাচার্যের ‘সিদ্ধান্ত শিরোমণি’- যেখানে লীলাবতী, বীজগণিত, গ্রহ গণিতাধ্যায়, গোলধ্যায়ের মত বিষয় তুলে ধরেছিলেন তিনি। সাল ১১৫০। গ্যালিলিও গ্যালিলির কত আগেই প্রাচীন ভারতবর্ষের মহান বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক আর্যভট্ট প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন, আমাদের পৃথিবী গোল। ৪৭৬ সালে তিনি একটি আর্যভট্টম বলে একটি বই লিখেছিলেন। সেখানেই তিনি বলেছেন, ভূগোলঃ সর্বোত্তবৃতঃ অর্থাৎ পৃথিবী সবদিক থেকে আসলে গোল। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব কত? সেই অনুমান লাগাতে যেখানে এখনকার বিজ্ঞানী বা নাসা হালেই অঙ্ক কষে বের করেছে, সেখানে মহান তুলসীদাস বহু আগেই সেই খোঁজ দিয়েছিলেন।
“যুগ সহস্র যোজন পর ভানু/ লীলয়ো তাহি মধুর ফল জানু’’ অর্থাৎ, হনুমান ১ যুগ সহস্র যোজন দূরে অবস্থিত ভানু অর্থাৎ সূর্য নামক একটি মিষ্টি ফল খেয়ে ফেলেছিলেন। হিসেব কষলে দেখা যাবে, তুলসিদাসের অনুমান করা দূরত্বের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে নাসার হিসাব কষা পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব। শূন্যের আবিষ্কার সেই কোন সময়ে করে ফেলেছিলেন আর্যভট্ট। ভাস্করাচার্য ১১৫০ সালেই বলে দিয়েছিলেন, পৃথিবী সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে ৩৬৫ দিন সময় নেয়। এছাড়াও মেডিক্যাল সায়েন্সে ভারতবর্ষ ছিল সেই সময় অনেকটা এগিয়ে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র সেই সময় পৌঁছে গেছিল অন্য উচ্চতায়। সার্জারির মত প্রথা চালু হয়েছিল চরক-সুশ্রুতের মত ভারতীয় ঋষিদের হাত ধরে। ২৬০০ বছর আগে প্লাস্টিক সার্জারি করে তাঁরা ভারতের ভবিষ্যৎকে এগিয়ে দিয়ে গেছেন অনেকদূর। বিশ্বের প্রথম ইউনিভার্সিটি তক্ষশীলা ছিল যীশু খ্রিস্টের জন্মের ৭০০ বছর আগে। সেই সময় দেশ, বিদেশ থেকে কত কত ছাত্ররা এখানে আসতেন পড়াশোনা করতে। এছাড়াও নালন্দার মত ইউনিভার্সিটি সেই সময় গোটা বিশ্বের কাছে সমাদৃত হয়েছিল। ভারতীয় সংস্কৃতির ইতিহাস এতটাই উন্নত ছিল যে এখানেই আদি শংকরাচার্য, কপিল মুনি, পতঞ্জলি, গৌতম বুদ্ধের মতন একাধিক ঋষি, মুনি এবং দার্শনিকদের সৌজন্যে ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র পৌঁছে যায় এক অনন্য উচ্চতায়। সেই সময় গুরুদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করতে আসতেন দেশ বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা। ব্রিটিশরা ভারতে আসার পর সেটা বুঝেছিল। এমনকি বিদেশি শাসনও সেই সময় ভারতীয় মেধা এবং উচ্চ শিক্ষার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে গুরুকুলের সকল আশ্রম বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধ হয়ে যায় বই পড়া, পুড়িয়ে দেওয়া হয় প্রচুর বই। ধীরে ধীরে দেখা যায়, ব্রিটিশ শাসনের হাতে ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগোতে থাকে আমাদের ভারত। ব্রিটিশরা যখন এই দেশ থেকে বিতাড়িত হয়, ততক্ষণে ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার তারা নিয়ে চলে গেছে। একেবারে ফোঁপরা হয়ে গেছে আমাদের ভারত। কিন্তু তাতে কি? ভারতকে কোনদিনই দমিয়ে রাখা যায়নি, রাখা যাবে না। ইন্ডিয়ান স্পিরিটের ওপর নির্ভর করেই আজ ভারত টেক্কা দিয়েছে ব্রিটেনের অর্থনীতিকে। গোটা পৃথিবীর সামনে ভারত আজ এক সচল ইতিহাস। আজ ভারতের কাছে কিই নেই। কৃষি থেকে মহাকাশ সর্বত্র ছড়ি ঘোরাচ্ছে ভারত। আমাদের ইসরো আজ দেশের মাথাকে সবার শীর্ষে বসিয়ে দিয়েছে। মনে পড়ে, একটা সময় ছিল যখন আমাদের প্রথম রকেট সাইকেল এবং গরুর গাড়ীতে করে আনা হয়েছিল, আজ সেই দেশ চন্দ্রযানের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে চাঁদে জলের অস্তিত্ব। প্রথম ধাপেই মঙ্গলে পৌঁছনোর মত সাফল্য একমাত্র দেখাতে পেরেছে আমাদের ভারত। আজ আমাদের ভারত পৃথিবীর সবথেকে দ্রুতগামী দেশ যে এগিয়ে চলেছে ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের দিকে। ২০১৯ সালে ভারত বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে উঠে এসেছিল, যে অন্য দেশের যে-কোন স্যাটেলাইটকে নষ্ট করে দেবার ক্ষমতা রাখে। ভারতের কাছে আজ অত্যাধুনিক নেভিগেশন সিস্টেম। যা যে-কোন উন্নত দেশকে টক্কর দেবার জন্য প্রস্তুত।
টুহুইলার, গাড়ি, স্মার্ট ফোন, স্টিল, সিমেন্ট, সব্জি, ফল, রাইস, কটন উৎপাদনে ভারত রয়েছে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে। ইলেকট্রিসিটি, হিরে বা সোনার গয়না প্রস্তুত করতে ভারত রয়েছে এখন তিন নম্বরে। এমনকি ফার্মেসি ওয়ার্ল্ডে ভারতের জয়জয়কার। বিশ্ব বাজারের ৬০% ভ্যাক্সিন এখন প্রোডিউস করা হয় ভারতে। এছাড়াও জেনেরিক ড্রাগ প্রস্তুত করতে চিনের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে ভারত। আজ ভারতে এত পরিমাণ সোনা রয়েছে যা বিশ্বের আর কোথাও নেই। আমাদের ভারতীয়দের কাছেই সোনা রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টনের মতন। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার। ইতালি, সাউথ কোরিয়া বা অস্ট্রেলিয়ার মোট ইকোনমির থেকে অনেকটা বেশি। ইউএসবি থেকে ওয়্যারলেস টেকনোলজি আজ এই সবই এসেছে ভারতীয় মেধার হাত ধরেই। টয়লেট বানানোর মতন আদিম টেকনিক থেকে শ্যাম্পু, অথবা শার্টের বোতাম থেকে সাজাগোজার অলঙ্কার এই সবই এসেছে ভারত থেকেই। ভারত যা দেখিয়েছে, আজ গোটা বিশ্ব সেটাই দেখছে। খুব খারাপ লাগে যখন দেখা যায়, ভারতীয় মেধা ভারতীয় সংস্কৃতি যেন কোথাও গিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে পাশ্চাত্য জগতের চিৎকার চেঁচামেচিতে। কিন্তু আমরা যারা প্রকৃত ভারতবাসী, আমরা কখনোই আমাদের ইতিহাসকে এভাবে হারিয়ে যেতে দেব না। বরং গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরব আমাদের ভারতকে। গর্বের সঙ্গে বলব আমরা ভারতবাসী। আমরা ভারতীয়, আমরা গর্বিত। যদি আপনিও একজন সত্যি গর্বিত ভারতবাসী হয়ে থাকেন তাহলে ভারতের অজানা কথা ছড়িয়ে দিন দেশে-বিদেশের প্রত্যেকটি কোণে। একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে ভারতের অবদান তুলে ধরা সম্ভব নয়। আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে ছোট একটা ইতিহাসের অধ্যায় তুলে ধরতে পারলাম মাত্র। বিপিএনের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে জানাই, গর্ব করুন আমরা ভারতীয় বলে। ছড়িয়ে দিন এই প্রতিবেদন,
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ